নির্বাচনের আগেই মহাজোট ভাঙছে- গাজীপুর উপনির্বাচনে জাপা স্বতন্ত্র লড়বে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ভাঙছে মহাজোট। মহাজোট থেকে বেরিয়ে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এ ব্যাপারে একমত দলের শীর্ষ নেতারা। এরই অংশ হিসেবে গাজীপুর-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে একক প্রার্থী দেবে দলটি।


আজ জাপার সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রার্থী চূড়ান্ত শেষে নাম ঘোষণা করা হবে। রবিবার বনানীর জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে ভারত সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পাশাপাশি আগামী মাসে আমেরিকা সফরের বিষয়েও কথা বলেন তিনি। সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি আমেরিকা না গিয়ে লন্ডন হয়ে যেতে পারেন। এর আগে গাজীপুর উপনির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি। বৈঠকে দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে জেলা ও বিভাগীয় শহরে দলীয় কার্যক্রম জোরদার করা হবে। বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুরের নির্বাচনে দলের চার নেতা মনোনয়ন চেয়েছেন। তাঁদের মধ্য থেকে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজনকে প্রার্থিতার সুযোগ দেয়া হবে। নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেনÑ গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কাপাসিয়া উপজেলা কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা সহ-সভাপতি সামসুদ্দিন খান এবং অন্য দুই স্থানীয় নেতা জিয়াউর রহমান ও তোফাজ্জল হোসেন।
এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মহাজোট ভেঙ্গে দিয়ে এককভাবে অংশ নেয়ার প্রস্তুতির বিষয়েও মত দেন প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। তার অংশ হিসেবে আগামী তিন মাসের মধ্যে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রুহুল আমিন হাওলাদার। বৈঠকে উপস্থিত প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম বলেন, আগামী এক সেপ্টেম্বর থেকে তিন-চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় টিম দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর করবেন। এ সময় জেলায় জেলায় কর্মিসভার আয়োজন করা হবে। তাছাড়া তৃণমূল পর্যায় থেকে দলকে শক্তিশালী করতে যা যা করা দরকার তাই করা হবে। পার্টির চেয়ারম্যান আগামী নবেম্বর মাসে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জনসভা করবেন এবং এর মাধ্যমে দলকে চাঙ্গা করা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কাজী জাফর আহমেদ, এমএ সাত্তার, টিআইএম ফজলে রাব্বি, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম হাবিব দুলাল, করিম উদ্দিন ভরসা, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, মাহমুদ হাসান, গোলাম কিবরিয়া টিপু, জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল, মোস্তফা জামাল হায়দার, কাজী ফিরোজ রশিদ, আহসান হাবীব লিংকন, শেখ সিরাজুল ইসলাম, এইচএম গোলাম রেজা, ফখরুল ইমাম, সোলায়মান আলম শেঠ, মুজিবুল হক চুন্নু, নূর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী, সালমা ইসলাম, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মাঈদুল ইসলাম, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সুনীল শুভ রায় এবং এসএম ফয়সাল চিশতি।
বৈঠকে এরশাদ প্রেসিডিয়াম সদস্যদের দলের সেগুনবাগিচার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত বসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সময় বদলে গেছে। মানুষ এখন জাপাকে চায়। তাই এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। ভোটারদের জাতীয় পার্টির পতাকাতলে আনতে হবে। প্রমাণ করতে হবে আমরা মানুষের জন্য কাজ করি, ভবিষ্যতে মানুষের পাশে থাকতে চাই।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভাপতির বৈঠকে এরশাদ বিভিন্ন ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাকে অনেকে বলেন সকালে এক কথা বিকেলে অন্য কথা বলি। বাস্তবে তা নয়। রাজনৈতিক কারণে হয়ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়। রাজনীতির মাঠে আমি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমার প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখেন না। মানুষের কথা শোনেন। সমালোচনাকে পাত্তা দেন। এসব ঠিক নয়। ভারত সফর প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বলেছি আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় রাজনৈতিক দল ও নেতারা নিরাপদে থাকবে। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াতগোষ্ঠী ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের এক কোটি হিন্দুকে ভারতে আশ্রয় দিতে হবে।
বৈঠকে গাজীপুর উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নেতাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। দলের শীর্ষনেতা কাজী জাফর আহমদসহ অনেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তীব্র বিরোধিতা করেন। তারা নির্বাচনে অংশ না নিতে এরশাদকে পরামর্শ দেন।

No comments

Powered by Blogger.