বাংলার জাতটিই সবচেয়ে উন্নত by ইফতেখার মাহমুদ

যমজ চালের ধানের জাত বিশ্বের আরও চারটি দেশে পাওয়া গেছে। তবে বিরামপুরে পাওয়া জাতটি অন্যগুলোর চেয়ে উন্নত মানের। ধান গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) আশির দশকে চীন, ভারত, মালয়েশিয়া ও গায়ানায় এই জাতটি খুঁজে পেয়েছিল।


ওই চার দেশে পাওয়া জাতগুলোতে মোট ধানের দুই থেকে পাঁচ শতাংশে ধানপ্রতি তিনটি চাল পাওয়া যায়। বিরামপুরের ধানে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ধানে যমজ চাল পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশের জাতে ৩০ শতাংশ ধানে দুটি করে চাল পাওয়া যায়। বিরামপুরের জাতে ৫০ শতাংশ ধানে দুটি চাল পাওয়া গেল।
ইরির বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে গবেষণা করে দেখেছিলেন, এ ধরনের যমজ দানার জাতে এমন সব গুণ আছে, যা থেকে হাইব্রিড ধানের ‘বন্ধ্যত্ব’ দূর করা সম্ভব। হাইব্রিড বীজ কৃষক একবার কিনে চাষ করার পর তা থেকে আর বীজ হয় না। যমজ দানা ধানের সঙ্গে শঙ্কর করলে কৃষকেরাও হাইব্রিড ধান থেকে বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
উচ্চফলনশীল জাতের (উফশী) মধ্যেও এই ধানের কৌলিক বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা সম্ভব। এতে দেশের ধান উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়তে পারে।
বিজ্ঞানীরা আরও মনে করছেন, দিনাজপুরের বিরামপুরে অছিউদ্দিনের হাত ধরে চাষ হওয়া ওই জাতটি নিয়ে দ্রুত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
আশির দশকেও বরিশালে এ ধরনের একটি জাতের ধান চাষ হতো। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) সূত্র জানায়, আশির দশকে বিজ্ঞানীরা এ জাতটি নিয়ে আগ্রহ দেখালেও পরে তা সংগ্রহ বা গবেষণা কোনোটিই হয়নি।
‘যমজ দানা’র এই জাত নিয়ে ১৯৯৬ সালে ইরির প্রধান কার্যালয় ফিলিপাইনের ম্যানিলায় সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে অংশ নেন অস্ট্রেলিয়া-প্রবাসী বাংলাদেশি ধান বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী। মৌলভীবাজারে নিজ এলাকায় একটি ধানগাছ একাধিকবার ফলন দেয়—এমন একটি জাত নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি।
আবেদ চৌধুরী জানান, বিরামপুরে পাওয়া ধানের জাতটি অন্য চারটি দেশে পাওয়া জাতের চেয়ে উন্নতমানের। কারণ, বিরামপুরের জাতে ৫০ শতাংশ ধানে দুটি করে চাল পাওয়া যায়।
ব্রির সাবেক গবেষণা পরিচালক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে জানান, আশির দশকে বরিশালে পাওয়া জাতটি নিয়ে গবেষণার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও পরে এগোয়নি। এই জাতটি গবেষণার মাধ্যমে আরও উন্নত করা সম্ভব হলে তা দেশের ধান উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ইরির মতে, খ্রিষ্টপূর্ব আড়াই হাজার বছর আগে ‘ওরিজা সাটিভা’ নামের ঘাসজাতীয় এক ধরনের উদ্ভিদ থেকে ধানের জন্ম। জন্মের পর প্রকৃতি ও ভূমির ধরন অনুযায়ী ধানের জাতের মধ্যে পার্থক্য তৈরি হয়েছে।
ব্রির জেনেটিক রিসোর্স সেন্টার সূত্রে জানা যায়, ব্রির জিন ব্যাংকে সাড়ে আট হাজার দেশি জাতের ধানের জিন সংরক্ষিত আছে। বাংলা অঞ্চলের ধান চাষের ইতিহাস নিয়ে গবেষক জি পি হেক্টর ১৯৩৯ সালে গবেষণা করেন। ওই গবেষণায় তিনি উল্লেখ করেন, বাংলা অঞ্চলে ১৮ হাজার জাতের ধান চাষ হচ্ছে।
ব্রির জিন ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার ৮০০ জাতের ধান নিয়ে যায় ইরি। এই জাতগুলোর ‘জিনকোড, ফিঙ্গার প্রিন্ট ও পাসপোর্ট’ বা বংশপরিচয় নির্ণয় করা হয়েছে। ওই জাতগুলো নিয়ে গবেষণা করে ৪৮টি উচ্চ ফলনশীল জাতও উদ্ভাবন করা হয়েছে।
আবেদ চৌধুরী জানান, হাইব্রিড ধানের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কৃষক পর্যায়ে এ ধান থেকে বীজ করা যায় না। ‘যমজ দানা’ হওয়া এই জাতটির সঙ্গে হাইব্রিড ও উফশী জাতের শঙ্কর করলে এমন জাত উদ্ভাবন হতে পারে, যা থেকে কৃষক নিয়মিতভাবে বীজ ধান উৎপাদন করতে পারবেন। এতে দেশের ধানের উৎপাদনও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, এখন সবার আগে সরকারের উচিত এই জাতটি সংগ্রহ করে সরকারি সংস্থার মাধ্যমে গবেষণা শুরু করা।

No comments

Powered by Blogger.