চার শিশু ফিরল মায়ের কাছে, ছাড়া পেলেন সাত মার্কিন

নানা ঘটনার পর চার শিশু ফিরে গেল তাদের বাবা-মায়ের কাছে। একই সঙ্গে সাতজন মার্কিন নাগরিক ও তিনজন বাংলাদেশিকে ছেড়ে দেওয়া হলো। গত বৃহস্পতিবার শিশু পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তাঁদের আটক করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে একটি মাইক্রোবাস গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে এসে থামে। সাইলাস মুরমু নামের এক ব্যক্তি একটি শিশুকে ওই মাইক্রোবাসে তুলে দেন।


মাইক্রোবাসে থাকা এক ব্যক্তির কাছ থেকে সাইলাস মুরমু কিছু অর্থও নেন। মাইক্রোবাসটি দ্রুত চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের বিবরণ অনুযায়ী, কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুজ্জামান খান বিষয়টি দেখতে পেয়ে সাইলাস মুরমুকে আটক করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। ইউনএনও কামরুল হাসান মাইক্রোবাসটি ফিরিয়ে আনতে সাইলাস মুরমুকে ফোনে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন।
মুরমু যোগাযোগ করে সব কথা জানিয়ে দিলে মাইক্রোবাস নিয়ে ফিরে আসেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মাইক্রোবাস থেকে নেমে আসেন মার্কিন নাগরিক ব্রেভারলি ওয়েড, স্টেসি ফিলপট, লেন্সি ফিলপট, কেলি ফিলপট, মাইক ফিলপট, চেসি ফিলপট, রবার্ট ফিনভিনকার এবং বাংলাদেশি চন্দন যোসেফ হেব্রম, পনুয়েল বাড়ৈ ও নিশিকান্ত বাড়ৈ। তাঁদের সঙ্গে ছিল চার মাস থেকে ১৮ মাস বয়সী চারটি বাংলাদেশি শিশু। সবাইকে ইউএনওর কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ইউএনও কামরুল হাসান ও কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোতা মিয়া তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ‘বাংলা-হোপ’ নামের একটি সংস্থার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অর্থ জোগানদাতা বলে পরিচয় দেন। রাত ১০টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ চলে। এর মধ্যে শিশুদের বাবা-মাকে সেখানে হাজির করা হয়। পরে শিশু চারটিকে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়।
শিশু চারটি হলো: বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের পরিতোষ বাড়ৈর সন্তান মেঘা বাড়ৈ (৪ মাস) ও রঞ্জন তালুকদারের সন্তান রতন তালুকদার (১৮ মাস) এবং কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল গ্রামের প্রহ্লাদ মল্লিকের সন্তান পিয়াস মল্লিক (১৮ মাস) ও দীঘলিয়া গ্রামের জন ফলিয়ার সন্তান জুঁই ফলিয়া (১৮ মাস)।
জন ফলিয়া বলেন, ‘অসচ্ছলতার কারণে সন্তানকে বাংলা হোপে দিয়েছি। এর আগেও একটি সন্তানকে এ প্রতিষ্ঠানে দিয়েছি। প্রতিষ্ঠানটি ভরণপোষণ দিয়ে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া শিখিয়ে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ওই মেয়েটি এখন ভালোই আছে। তাই এ মেয়েকেও দিয়েছি।’
বাংলা হোপের কমিউনিটি মোটিভেশনাল কর্মকর্তা পুনয়েল বাড়ৈ জানান, সারা দেশে তাদের ১১টি শাখা আছে। এ সংস্থার নামে একটি ট্রাস্ট রয়েছে। এ ট্রাস্ট সব খরচ বহন করে। বাংলা-হোপ বর্তমানে ১২১ জন অনাথ শিশুর ভরণপোষণ ও পড়াশোনার খরচ দিচ্ছে। এ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ব্রিভারলি ওয়েড।
ইউএনও কামরুল হাসান জানান, বাংলা-হোপ সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান। তাদের কার্যক্রম বৈধ। তবে তারা চারটি শিশুর অভিভাবকদের কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছে, যা বেআইনি। থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে অভিভাবকের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে শিশুদের তাদের মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.