সাত মিনিটেই মোটরসাইকেল চুরি by এস এম আজাদ

রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকায় আদ্-দ্বীন হাসপাতালের কার পার্কিং। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০টা ২২ মিনিট ১৬ সেকেন্ড। লাল রঙের একটি পালসার মোটরসাইকেল নিয়ে পার্কিংয়ে ঢুকলেন এক যুবক। মোটরসাইকেলটি রেখে কয়েক সেকেন্ড পর হাসপাতালে প্রবেশ করেন তিনি। পার্কিং এলাকায় আসার পরই ওই যুবককে অনুসরণ করতে থাকে দুই ব্যক্তি। ঘড়ির কাঁটায় ১০টা ২৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড।


ওই যুবকের মোটরসাইকেলটি চালিয়ে পার্কিং থেকে বের হয়ে গেল অনুসরণ করা দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন। ১০টা ৩২ মিনিট ২০ সেকেন্ড। নীল শার্ট পরা অন্য ব্যক্তি পার্কিং থেকে আরেকটি মোটরসাইকেল নিয়ে চলে গেল। ওই ব্যক্তির অবস্থান ও চলে যাওয়ার সময় নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে আলাপচারিতা দেখে বোঝা যাচ্ছে, সে ওই এলাকায় পরিচিত। মোটরসাইকেলটিও তার।
এ ঘটনাটি গত ৯ নভেম্বরের। সাদা চোখে কার পার্কিংয়ের এসব দৃশ্য স্বাভাবিক মনে হলেও এটি একটি মোটরসাইকেল চুরির চিত্র। এ চিত্র ধরা পড়েছে হাসপাতালের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়। এ ভিডিওচিত্রটি কালের কণ্ঠের হাতে এসেছে।
মোটরসাইকেল খোয়ানো ব্যক্তির নাম বিপ্লব ঘোষ রাতুল। ঘটনার পর ওই দিন দুপুরে তিনি রমনা থানায় অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে তাঁর অভিযোগ নথিভুক্ত করে। এ পর্যন্তই। দুই দিন পর রাতুল আদ্-দ্বীন হাসপাতাল থেকে সিসিটিভিতে ধারণ হওয়া ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশকে সরবরাহ করেন। ওই ফুটেজ থেকেই চুরির ঘটনা ও চোর শনাক্ত হয়েছে। তবে এক সপ্তাহেও চোরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
রাতুলের মোটরসাইকেল চুরির প্রমাণ পাওয়া ব্যতিক্রমী ঘটনাই বলা যায়। কারণ নগরীতে মোটরসাইকেল চুরির বেশির ভাগেরই প্রমাণ পাওয়া যায় না। মোটরসাইকেল উদ্ধার বা চোরকেও গ্রেপ্তার করতে পারে না পুলিশ।
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে মাসে প্রায় ৫০টি এবং বছরে চার শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি ও ছিনতাই হয়ে থাকে। বেশির ভাগই উদ্ধার করতে পারে না পুলিশ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রাইভেট কার চুরির ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হলেও মোটরসাইকেলের বেলায় তেমন গুরুত্ব দেয় না প্রশাসন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেওয়া হয় সাধারণ ডায়েরি। পুলিশের কাছে মোটরসাইকেল চুরির কোনো পরিসংখ্যানও নেই। শুধু চুরি হওয়া মোটরসাইকেলের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।
চুরি হলো যেভাবে
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের সমন্বয়কারী বিপ্লব ঘোষ রাতুল কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর স্ত্রী আদ্-দ্বীন হাসপাতালে পুত্রসন্তান প্রসব করেন। তিনি প্রতিদিন সকালে হাসপাতালে স্ত্রী-সন্তানের কাছে আসেন। ৯ নভেম্বর সকাল ১০টার পর মাকে নিয়ে হাসপাতালে যান। কার পার্কিংয়ে লাল রঙের পালসার মোটরসাইকেলটি (বরিশাল মেট্রো-ল-১১-০৭০৮) রেখে তিনি হাসপাতালে প্রবেশ করেন। দুপুর ১২টার দিকে পার্কিংয়ে গিয়ে দেখেন মোটরসাইকেল নেই।
রাতুল আদ্-দ্বীন হাসপাতাল থেকে যে সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশকে দিয়েছেন তাতে চারটি ক্যামেরায় ধারণা করা চিত্র রয়েছে। ফুটেজে মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জায়গাটি পুরোপুরি দেখা যায় না। তিনটি ক্যামেরায় পাওয়া সম্মুখভাগের চিত্রে দেখা যায়_লাল রঙের পালসার মোটরসাইকেলটি পার্কিংয়ে রেখে হাসপাতালে ঢুকছেন রাতুল। তাঁকে অনুসরণ করছে সাদা ও নীল শার্ট পরা দুই ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর নীল শার্ট পরা ব্যক্তি এসে পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীর হাতে টাকা গুঁজে দিচ্ছে। নিরাপত্তাকর্মী পার্কিং ছেড়ে বাইরে চলে গেলেন। এরপর সাদা শার্ট পরা ব্যক্তি পার্কিংয়ে থাকা রাতুলের মোটরসাইকেলটি চালিয়ে বেরিয়ে গেল।
ভিডিও চিত্রটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, রাতুল পার্কিংয়ে ঢোকার পর থেকে প্রবেশপথে একটি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে ছিল। আদ্-দ্বীন হাসপাতালের এক অ্যাম্বুলেন্সচালক সেখানে ঘোরাঘুরি করছিলেন। রাতুলকে অনুসরণ করা নীল শার্ট ও সাদা শার্ট পরা দুই ব্যক্তি পার্কিং এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল এমনভাবে যেন এলাকাটি তাদের খুবই পরিচিত। নীল শার্ট পরা ব্যক্তি কিছু কথা বলে নিরাপত্তাকর্মীকে টাকা দেয়। সেখানে অটোরিকশাচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও নীল শার্ট পরা ব্যক্তির মধ্যে আলাপও হয়। রাতুল মোটরসাইকেল রেখে হাসপাতালে ঢোকার সময় চোরদের একজন (সাদা শার্ট পরা) তাঁর পিছু পিছু ফটক পর্যন্ত যায়। ওই সময়ই নীল শার্ট পরা ব্যক্তি নিরাপত্তাকর্মীর হাতে টাকা দিয়ে তাঁকে বাইরে পাঠিয়ে দেন। সাদা শার্ট পরা ব্যক্তি পার্কিংয়ে ঘোরাফেরা করার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলছিল। পাশাপাশি অবস্থান করে নীল শার্ট পরা ব্যক্তির সঙ্গে সে মোবাইল ফোনে কথা বলছিল বলে ধারণা করা যায়; কেননা তারা দুজন একই সঙ্গে ফোন ডায়াল ও রিসিভ করে। পরে নীল শার্ট পরা ব্যক্তি সামনের রাস্তায় দাঁড়ায় আর সাদা শার্ট পরা ব্যক্তি পার্কিং থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়ে যায়। আরেকটি মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময়ও নীল শার্ট পরা ব্যক্তি নিরাপত্তাকর্মী, অটোরিকশাচালক ও আরেক মোটরসাইকেল আরোহীর সঙ্গে কথা বলে।
রাতুল জানান, ঘটনার পর তিনি শুনেছেন একটি চোরচক্র আদ্-দ্বীন হাসপাতাল এলাকায় সক্রিয় আছে। ওই এলাকা থেকে এর আগেও তিনটি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে।
সময় লাগল ৪৩ সেকেন্ড
চুরির ঘটনাটি ঘটাতে লেগেছে প্রায় সাত মিনিট। কিন্তু মোটরসাইকেলের লক খুলে সেটা চালিয়ে চলে যাওয়া পর্যন্ত সময় লেগেছে মাত্র ৪৩ সেকেন্ড। ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, ঘড়ির কাঁটায় যখন সকাল ১০টা ২৯ মিনিট ২ সেকেন্ড তখন আদ্-দ্বীন মিনি জেনারেল স্টোর নামের একটি দোকানের কাছ থেকে সাদা শার্ট পরা ব্যক্তি পার্কিং এলাকায় প্রবেশ করে এবং ১০টা ২৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায়। ওই সময় নীল শার্ট পরা ব্যক্তি বাইরে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিল। রাতুল জানান, তাঁর ধারণা নীল শার্ট পরা ওই ব্যক্তিই চোরের দলের প্রধান। সে মোবাইল ফোনে নির্দেশনা দিচ্ছিল।
চোর শনাক্ত হলেও...
আদ্-দ্বীন হাসপাতালের সামনে চুরির ঘটনাটির প্রমাণ মিললেও এক সপ্তাহে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার দুই দিন পর ফুটেজ দেখার পর পার্কিংয়ে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী রফিককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রফিক নীল শার্ট পরা ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, তাঁকে সিগারেট আনতে পাঠানো হয়েছিল। রফিক কালের কণ্ঠকে বলেন, নীল শার্ট পরা ওই ব্যক্তিকে তিনি তিন-চার দিন হাসপাতাল এলাকায় দেখেছেন। মুখচেনা বলে ওই দিন কথা বলেছেন এবং সিগারেট এনে দিয়েছেন। তবে তার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন রফিক।
জানা গেছে, চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রফিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্বীকার করেনি। ভুক্তভোগীর দাবি, অভিযুক্তকে চাকরিচ্যুত করায় তদন্ত ব্যাহত হবে।
গত বৃহস্পতিবার আদ্-দ্বীন হাসপাতালের মোটরসাইকেল পার্কিংয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে বড় করে লেখা আছে_'পার্কিংয়ে গাড়ি নিজ দায়িত্বে রাখুন'। দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী মাহবুব জানান, সম্প্রতি চুরির ঘটনা ঘটার পর নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদের। আগে শুধু পার্কিংয়ে মোটরসাইকেল ঠিকমতো রাখা হচ্ছে কি না সেটা দেখতেন তাঁরা।
আদ্-দ্বীন মিনি জেনারেল স্টোর ভাড়া নিয়ে চালান শরীফ। তিনি জানান, ঈদের ছুটির পর তিনি এসে শুনেছেন আরো একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। ১৫ দিন আগে ডেসটিনি ২০০০-এর এক কর্মীর মোটরসাইকেল চুরি হয়েছিল। এক মাস আগে এক রোগীর মোটরসাইকেল চুরি হয়। ওই পার্কিং থেকে এক বছর আগে প্রাণ-আরএফএল কম্পানির একজন বিক্রয়কর্মীর একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়। শরীফ আরো জানান, আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টিকিটের মাধ্যমে মোটরসাইকেল পার্কিংয়ে রাখত। তখন চুরির ঘটনা ঘটেনি। তাঁর ভাষ্য, এ এলাকায় একটি চোরচক্র সক্রিয় আছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম শাহজালাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'চুরির ঘটনা জানার পর আমরা পার্কিংয়ের নিরাপত্তা জোরদার করেছি। ওই ঘটনা তদন্তে রমনা থানার পুলিশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি আমরা।'
রমনা থানায় করা রাতুলের অভিযোগ তদন্ত করছেন উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভিডিও ফুটেজ থেকে চোরের দলের দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাদীর অভিযোগ দেখে তাৎক্ষণিকভাবে মামলা নেওয়া হয়নি। এখন অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'
রাতুল জানান, পুলিশ তাঁকে জানিয়েছে, ভিডিও ফুটেজটি গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি এখন গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করবে।
উদ্ধার হয় না মোটরসাইকেল
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে অনেক চুরির ঘটনায় মোটরসাইকেল উদ্ধার না হওয়া ও পুলিশের তদন্তে অবহেলার চিত্র উঠে এসেছে। এসব ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলা হয়নি; যেমনটি হয়নি রাতুলের মোটরসাইকেল চুরির ক্ষেত্রে। 'আপাতত মামলা করব না' লিখে রাতুলকে অভিযোগ দায়ের করতে বলেন থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা।
অনেকে মামলা করেও প্রতিকার পাননি। সাংবাদিক পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য জানান, গত ৮ জুলাই রাত ১০টার দিকে তিনি চারুকলার সামনে ছবিরহাটে মোটরসাইকেল রেখে অদূরে চা পান করতে যান। ১০ মিনিট পর ফিরে দেখেন তাঁর লাল রঙের বাজাজ ডিসকভার (ঢাকা মেট্রো-ল-১৩-৯৩২৬) মোটরসাইকেলটি নেই। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছুটে যান শাহবাগ থানায়। থানা থেকে বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বরত পুলিশকে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাটি জানানো হয়। কিন্তু মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়নি। পরের দিন মামলা করেন ভুক্তভোগী। এখন পর্যন্ত তাঁর মোটরসাইকেল পাওয়া যায়নি। ছবিরহাট থেকে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীসহ কয়েকজনের মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা জানা গেছে, যার একটিও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
গত ২৬ জুলাই মতিঝিলে একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের সামনে থেকে সঞ্জীব নামের এক ব্যক্তির বাজাজ ডিসকভার মোটরসাইকেল চোখের পলকে খোয়া যায়। এর আগে ৩ জুলাই মেরুল থেকে চুরি হয় দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকার সাংবাদিক আওরঙ্গজেব আরুর কালো রঙের হিরো হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল। এ ব্যাপারে বাড্ডা থানায় মামলা করেও কোনো ফল পাননি তিনি। গত বছরের ২১ জুলাই উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে আলী আজম মাহমুদ নামের এক ব্যক্তির বাজাজ প্লাটিনা মোটরসাইকেল চুরি হয়। তিনি জানান, মামলা করেছেন, কিন্তু দেড় বছরেও মোটরসাইকেলের হদিস মেলেনি।
ভুক্তভোগী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দামি মোটরসাইকেলই চোর বা ছিনতাইকারীদের লক্ষ্য। হিরো হোন্ডা, হিরো হাংক, স্পেলন্ডার, ফ্লেইম, পালসার, কাওয়াসাকি, বাজাজ ডিসকভার, ইয়ামাহা এফজেডআর, সিবিজেড ব্র্যান্ডের গাড়িই বেশি চুরি হয়। চুরির পর মোটরসাইকেল দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দেয় চোরচক্র। চুরির জন্য ছুটির দিনকে বেছে নেয় চোরেরা।
চুরির তথ্য নেই পুলিশের কাছে
ঢাকা মহানগরী পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, গাড়ি চুরি প্রতিরোধে গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম রয়েছে। এর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ছিনতাই-চুরি বন্ধ করতে একজন সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ মাস আগে করা হয়েছে মোটরসাইকেল চুরি প্রতিরোধ সেল। এ সেলের প্রধান সহকারী কমিশনার রওনক জাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ঢাকা মহানগরী পুলিশ ৪৬টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে। তবে আলাদা করে মোটরসাইকেলে চুরির কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই।
ডিএমপির এক হিসাবে জানা যায়, গত বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১৮৫টি মোটরসাইকেল চুরি হয়। প্রতি মাসে গড়ে চুরি হয়েছে অন্তত ৩০টি মোটরসাইকেল। চলতি বছর চুরি আরো বেড়েছে বলে জানা গেছে। গত ৯ মাসে ৫২২টি চোরাই গাড়ি উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক মোটরসাইকেল আছে বলে জানা গেছে।
প্রবণতা ও কৌশল
ভুক্তভুগী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, বিপণিবিতান, হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যস্ত এলাকা থেকেই মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে বেশি। ঢাকা মহানগরী গোয়েন্দা পুলিশের গাড়িচোর প্রতিরোধ টিমের প্রধান ও সহকারী কমিশনার মোখলেছুর রহমান জানান, চোরচক্রের সদস্যরা বিশেষ চাবির (মাস্টার কি বা এলেন কি) মাধ্যমে দ্রুত মোটরসাইকেলের তালা খুলে ফেলে। এসব চাবি দিয়ে সব ধরনের মোটরসাইকেল চালুও করা যায়। এতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। টিন বা তারের সাহায্যে বিকল্প সংযোগ দিয়ে চালু করা যায়। এতে সময় লাগে এক থেকে দুই মিনিট।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, মোটরসাইকেল চুরির সময় একটি দলে চার থেকে পাঁচজন থাকে। পাহারায় ও যোগাযোগে থাকে দুই-তিনজন। আর একজন মোটরসাইকেল নিয়ে সটকে পড়ে।
সাধারণত মামলা হওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশের টিম গাড়ি উদ্ধারের তৎপরতা শুরু করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ না পাওয়ায় তদন্তে অগ্রগতি হয় না বলে সহকারী কমিশনার মোখলেছুর রহমান দাবি করেন। তিনি জানান, মতিঝিল, গুলশান, চন্দ্রিমা উদ্যান, খিলগাঁও, বাসাবো, মাদারটেক, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, যাত্রাবাড়ী ও মিরপুর এলাকায় মোটরসাইকেল বেশি চুরি হয়। দিনের বেলায় গাড়ি রাখার স্থান থেকে চুরি বেশি হয় বলেও জানান মোখলেছুর রহমান।
সূত্র জানায়, গোয়েন্দা পুলিশ ইতিমধ্যে রাজধানীতে সক্রিয় কয়েকটি চক্র শনাক্ত করেছে। এসব চক্রের হোতাদের মধ্যে আছে জামাল, আমির, শাহিন, সুমন, বিলাস, পঙ্কজ, আসাদুল, জুয়েল, নজরুল, মিরাজ, বাবু, কাজল, সাইফুল, শাওন, রিপন, জুয়েলসহ আরো কয়েকজন।

No comments

Powered by Blogger.