আমরা কিভাবে স্বাধীন হলাম by বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

কলোনিয়াল বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১-এর মার্চ মাসটা হচ্ছে অভ্যুত্থানের মাস। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তি কেঁপে উঠেছে '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই, পাকিস্তান সরকার সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের মুখোমুখি হতে ভয় পেয়েছে।
বস্তুতপৰে, নির্বাচনের ফল পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ, এই চ্যালেঞ্জ প্রতিহত করার রাজনৈতিক শক্তি পাকিস্তান সরকারের ছিল না। বিকল্প ছিল অস্ত্র প্রয়োগ। পাকিস্তানের সামরিক সরকার অস্ত্র প্রয়োগের দিকে গোপন প্রস্তুতি নিচ্ছিল, আর বাংলাদেশের বাঙালী জনসাধারণ জাতীয়তাবাদের ঐক্যবদ্ধ পতাকার নিচে সমবেত হচ্ছিল। সশস্ত্র রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র জনসাধারণ একটি বিকল্প রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।
'৬৯ থেকে মার্চের শুরুতে গ্রামাঞ্চলের মানুষ কৃষক হওয়ার বদলে বিদ্রোহী হওয়া শুরু করেছে, শিল্পাঞ্চলের মানুষ শ্রমিক হওয়ার বদলে বিদ্রোহী হওয়া শুরু করেছে, শহরাঞ্চলের গরিব নিম্নবিত্তরা বিদ্রোহী হওয়া শুরু করছে এবং সারাদেশ, সারাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের নিজস্ব গণ্ডি ভেঙ্গে ফেলে বাইরে আসা শুরু করেছে। হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রীস্টান হয়ে উঠেছে দেশদ্রোহী, তারা জমিদারদের বিরুদ্ধে মহাজনদের বিরুদ্ধে ঘাড় বাঁকা হয়ে দাঁড়াবার বদলে রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করা শুরম্ন করেছে। দেশ সমাজ সম্পৃক্তরা হয়ে উঠেছে বিদ্রোহী, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী। সারাদেশ যদি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে, সেই বিদ্রোহের সম্মুখীন কে হবে? সারাদেশ মিলিটান্ট, সারা সমাজ পপুলার ভায়োলেন্সে কাঁপছে, থর থর করে উঠেছে। কলোনিয়াল শাসকের শোষণ এবং নির্যাতন শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে, এখন শুধু বারুদে আগুন জ্বালাবার পালা। এভাবে '৬৯ পৌঁছেছে মার্চে। আগুন জ্বালাবার পালার মধ্যে দু'ধরনের বিদ্রোহ জ্বলজ্বল করেছে। বিদ্রোহের একদিকে ছিল এলিট জাতীয়তাবাদী ধনীদের উত্থান, অন্যদিকে ছিল সাবঅনটার্ন বিদ্রোহ যার মধ্যে যুক্ত ছিল গরিবদের উদ্দীপনা।
১৯৭১-এর মার্চ মাসের অসহযোগ প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি হয়েছে। অসহযোগ আন্দোলনের লৰ্য : পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামো প্রত্যাখ্যান। নিরস্ত্র জনসাধারণ অসহযোগের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার তত্ত্ব অর্জন করেছে এবং আন্দোলনের লৰ্য নির্দিষ্ট করেছে। অসহযোগ আন্দোলনের লৰ্য : পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোর প্রত্যাখ্যান। পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামো প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে এই প্রতিরোধের সূত্রপাত, শেখ মুজিবুর রহমান একটি সামগ্রিক রাজনৈতিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এ প্রতিরোধকে একটি রাষ্ট্রগঠনে বদলে দেন। এ রাষ্ট্রে নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা পাকিস্তানী আরোপিত ব্যবস্থার বিপরীতে একটি বহুত্ববাদী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে পলিসি প্রণেতা। একপক্ষে অসহযোগের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রকাঠামো প্রত্যাখ্যান, অন্যপক্ষে অসহযোগের মাধ্যমে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রবর্তনের বাস্তবতা জনমনে সত্য করে তোলা : এ রণকৌশল শেখ মুজিবুর রহমান ৩৫টি নির্দেশের মধ্য দিয়ে বাস্তব করে তোলেন। ৩৫টি নির্দেশ রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালা : একটি রাষ্ট্রের মধ্যে অন্য একটি রাষ্ট্রের উদ্ভবের পরিসর তৈরি করা। ৩৫টি নির্দেশের লৰ্য : পাকিস্তান রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রতিরোধ এবং অস্বীকার করা এবং একই সঙ্গে এই ভূখণ্ডের জনজীবনের স্বাভাবিকতা এবং শৃঙ্খলা রৰা করা। কর্তৃত্ব প্রতিরোধ এবং অস্বীকার করার মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে সর্বাত্মক অসহযোগিতা এবং জনমুখী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে বাঙালি জনসাধারণের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা। এই সহযোগিতার ভিত্তি বাঙালী জাতীয়তাবাদ এবং এই জাতীয়তাবাদ দায়িত্বশীল। এ জাতীয়তাবাদে অন্তরিত রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের সম্পর্ক, রাজনৈতিক সংগঠন এবং জনসাধারণের সম্পর্ক। ৩৫টি নির্দেশ হচ্ছে এই :
সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ
১নং নির্দেশ : বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট, কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারী ও আধাসরকারী দফতর, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, হাইকোর্ট ও অন্যান্য সকল আদালতগুলো হরতাল পালন করবে। তবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
২নং নির্দেশ : বাংলাদেশের সমুদয় শিৰা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা
৩নং নির্দেশ : (ক) ডেপুটি কমিশনার এবং মহকুমা হাকিমবৃন্দ কোন অফিস না খুলেই তাঁদের আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বভার পালন করবেন। এ ছাড়া নির্দেশে বর্ণিত অন্যান্য কর্তব্যও পালন করে যাবেন। উন্নয়ন কার্যও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তাঁদের কর্তব্য ও কর্ণভার পালনে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ স্তরে আওয়ামী লীগ সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন এবং সহযোগিতা রেখে কাজ চালাবেন।
(খ) পুলিশ আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বভার পালন করবে। প্রয়োজনবোধে আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্য তারা নিতে পারে।
(গ) জেল কর্মীরা এবং জেলের দফতরগুলো কাজ করে যাবে।
(ঘ) আনসাররা তাদের কর্তব্য পালন করে যাবে।
সামুদ্রিক ও অভ্যন্তরীণ বন্দরসমূহ
৪নং নির্দেশ : বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাহাজের পথ-প্রদর্শন করার দায়িত্ব পালনসহ ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে যাবে। আগমনকারী ও বহির্গামী জাহাজের জন্য প্রয়োজনীয় সুব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে যেটুকু দরকার, বন্দর কর্তৃপক্ষের দফতরে শুধু সেই বিভাগগুলোই কাজ চালিয়ে যাবে। কিন্তু জনগণের দমনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য সেনাবাহিনী বা সরঞ্জামের একত্রীকরণের ব্যাপারে কোনরূপ সাহায্য করবে না। জাহাজের মাল খালাসের কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হবে। বিশেষ করে যে জাহাজগুলো বাংলাদেশের জন্য খাদ্যশস্য নিয়ে আসবে, বন্দর কর্তৃপক্ষ, বন্দর শুল্ক এবং মাল খালাস করার চার্জসমূহ আদায় করবেন। অভ্যন্তরীণ বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর ও অন্যান্য শুল্ক আদায় করবেন। আমদানি
৫নং নির্দেশ : সব আমদানিকৃত মাল তাড়াতাড়ি খালাস করা হবে। কাস্টমস বিভাগের প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো কাজ চালিয়ে যাবে। যদি মালাপত্রের প্রাপ্য কর ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেড এবং ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডে খোলা বিশেষ এ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হয় তাহলে কাস্টমস বিভাগ এসব মালপত্রের কিয়ারেন্স দিয়ে দেবে। এসব বিশেষ এ্যাকাউন্ট কাস্টমস কালেক্টরগণ আওয়ামী লীগের প্রচারিত নির্দেশ পরিচালনা করবেন। এভাবে আদায়কৃত কর কেন্দ্রীয় সরকারের খাতে জমা দেয়া হবে না।
রেলওয়ে
৬নং নির্দেশ : রেল চালু থাকবে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের এমন সব বিভাগগুলো চালু থাকবে যেগুলো রেলওয়ে সংরক্ষণের জন্য জরুরী। কিন্তু জনগণের দমনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবার জন্য সামরিক বাহিনী বা সরঞ্জামের একত্রীকরণের জন্য রেল বিভাগগুলো কোনরকম সহযোগিতা করবে না। বন্দর থেকে প্রদেশের অভ্যন্তরে খাদ্যশস্য সরবরাহের জন্য ওয়াগনের ব্যাপারে রেলওয়ে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে।
সড়ক পরিবহন
৭নং নির্দেশ : বাংলাদেশের সর্বত্র ইস্ট পাকিস্তান সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন চালু থাকবে।
অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ
৮নং নির্দেশ : অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য ইস্ট পাকিস্তান শিপিং কর্পোরেশন, অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ এবং অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহনে কর্তৃপক্ষের অত্যাবশ্যকীয় কিছু সংখ্যক কর্মচারী কাজ চালিয়ে যাবেন। কিন্তু জনগণের নির্যাতনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে এমন সব সেনাবাহিনী এবং সরঞ্জামাদি আনা-নেয়ার জন্য কোনরূপ সহযোগিতা তারা করবেন না।
ডাক ও তার বিভাগ
৯নং নির্দেশ : বাংলাদেশের মধ্যে চিঠি, টেলিগ্রাম ও মানি অর্ডার পাঠানোর জন্য ডাক ও তার বিভাগের দফতরগুলো খোলা থাকবে। বিদেশে পাঠানো বিভিন্ন প্রকারের চিঠি এবং টেলিগ্রামগুলো সরকারী সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে পাঠানো চলবে। ২৫নং নির্দেশের অধীনে অনুমোদিত সংবাদ গ্রহণ ও প্রেরণের উদ্দেশ্যে আন্ত:প্রাদেশিক টেলিপ্রিন্টার চ্যানেল সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার এই চারদিন বেলা ৩টা-৪টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার জন্য লোখা থাকবে। আন্ত:প্রাদেশিক প্রেস টেলিগ্রামগুলো পাঠানো চলবে।
টেলিফোন
১০নং নির্দেশ : বাংলাদেশের মধ্যে শুধু স্থানীয় এবং আন্ত:জেলা ট্রাঙ্ক টেলিফোনগুলো কাজ করবে। টেলিফোন ব্যবস্থার সংরক্ষণ ও মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো চালু থাকবে।
রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র
১১নং নির্দেশ : রেডিও, টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রগুলো কাজ করে যাবে এবং তারা সব বিবৃতির পূর্ণ বিতরণ ও গণআন্দোলনের সকল সংবাদ দেবে। তা না হলে ধরে নেয়া হবে যে এ সব প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করছেন, তারা কোন রকম সহযোগিতা করছেন না।
স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য রৰণ
১২নং নির্দেশ : জেল, হাসপাতাল, যক্ষ্মা কিনিক এবং কলেরা রিসার্চ ইনস্টিটিউটসহ সকল হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সার্ভিসগুলো কাজ করবে। কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল স্টোরস খোলা থাকবে এবং শহর, মহকুমা ও গ্রামের হাসপাতালগুলো এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ চালু রাখা হবে।
বিজলি সরবরাহ
১৩নং নির্দেশ : বিজলি সরবরাহ এবং তার সঙ্গে জড়িত মেরামত ও প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের কাজ চালাবার জন্য পূর্ব পকিস্তান ওয়াপদার সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো চালু থকাবে।
পানি ও গ্যাস সরবরাহ
১৪নং নির্দেশ : পানি ও গ্যাসের সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। এর মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিভাগগুলোও কাজ করে যাবে।
কয়লা সরবরাহ
১৫নং নির্দেশ : ইট খোলায় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য কয়লা সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
খাদ্য সরবরাহ
১৬নং নির্দেশ : সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানি বিতরণ, গুদামজাত করা এবং খাদ্যশস্যের চলাচল ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। এ উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওয়াগন, বজরা ও ট্রাক দিয়ে পরিবহন ব্যবস্থার সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।
কৃষি কাজ
১৭ নং নির্দেশ : (ক) ধান ও গমবীজ, খাদ্য ও কীটনাশক ওষুধের সংগ্রহ স্থানান্তরিত করা এবং বিতরণ অব্যাহত থাকবে। কৃষি খামার, চাল গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং তার প্রজেক্টগুলোও কাজ চালিয়ে যাবে।
(খ) প্রয়োজনীয় তেল, জ্বালানি ও যন্ত্রপাতিসহ পাওয়ার পাম্প ও অন্যান্য যান্ত্রিক মেরামত ও সংরক্ষণ বিভাগ চালু থাকবে।
(গ) পূর্ব পাকিস্তান কো-অপারেটিভ ব্যাংক, কেন্দ্রীয় কো-অপারেটিভ ব্যাংক এবং তাদের অনুমোদিত এজেন্সিগুলো থানা কেন্দ্রীয় কো-অপারেটিভ এসোসিয়েশন এবং অন্যান্য সব কো-অপারেটিভ সংস্থাগুলো কৃষি ঋণ দেয়ার কাজ অব্যাহত রাখবে।
(ঘ) নলকূপ বসানো ও চালু করা এবং খালসহ অন্যান্য সেচ ব্যবস্থা চালু থাকবে।
(ঙ) পূর্ব পাকিস্তান কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো এখানে উল্লেখিত উদ্দেশ্যগুলো সাধনের কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
(চ) ঘূর্ণি উপদ্রুত এলাকায় সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ এবং কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক কর্তৃক কৃষকদের অন্যান্য প্রয়োজনীয় ঋণদান চলতে থাকবে।
(ছ) গুদামজাত করার উদ্দেশ্যে আলু কেনার জন্য পাকিস্তান কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক তাড়াতাড়ি অর্থ মঞ্জুর করবে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও শহর সংরক্ষণ
১৮নং নির্দেশ : ড্রেজার ও যান্ত্রিক যন্ত্রপাতির চালু ও মেরামত, মাল খালাস ও স্থানান্তরিত করা ও সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় কাজকর্মসহ পূর্ব পাকিস্তান-ওয়াপদা ও অন্যান্য এজেন্সির ব্যাপক বন্যানিয়ন্ত্রণ, শহর সংরক্ষণ এবং পানি উন্নয়ন কার্যক্রম পূর্ণ উদ্যমে চালিয়ে যাওয়া যাবে। কন্ট্রাকটরদের সরকারী এজেন্সি অথবা সংশ্লিষ্ট স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা যথাযথ টাকা দেবে।
উন্নয়ন এবং নির্মাণ কাজ
১৯নং নির্দেশ : বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত সড়ক ও সেতু নির্মাণ পরিচালনাসহ সরকারী স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং আধাসরকারী এজেন্সিগুলোর অধীন সব উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ পুরোদমে করে যেতে হবে। কনট্রাকটরদের সরকারী এজেন্সি অথবা সংশ্লিষ্ট স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা যথাযথ টাকা দেবেন। কনট্রাক্ট অনুসারে কনট্রাক্টরদের গৃহনির্মাণ ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করার কথা। এ সরবরাহ ঠিকমতো করা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারী এজেন্সি বা সংশ্লিষ্ট স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের।
সাহায্য ও পুনর্বাসন
২০নং নির্দেশ : ঘূর্ণিবিধ্বস্ত এলাকায় বাঁধ নির্মাণ এবং উন্নয়নের কাজসহ সকল সাহায্য পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের কাজ চলতে থাকবে। সংশ্লিষ্ট সরকারী এজেন্সি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো কনট্রাক্টরদের যথাযথ টাকা দেবে।
ইপিআইডিসি ও ইপসিক কারখানা এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি
২১ নং নির্দেশ : ইপিআইডিসি এবং ইপসিকের সব কারখানাগুলো খোলা থাকবে এবং উৎপাদন সর্বাধিক পরিমাণ বাড়াবার চেষ্টা করবে। ইপিআইডিসির যেসব শাখাকে কারখানা চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিতে হয় সেগুলোও কাজ চালিয়ে যাবে। তেমনি ইস্টার্ন রিফাইনারিও নিজেদের কাজ অব্যাহত রাখবে।
মজুরি প্রদান
২২নং নির্দেশ : সরকারী আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মচারী ও শ্রমিক এবং প্রাইমারী স্কুলের শিৰকদের বেতন দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাৰিক বা মাসিক, যে-কোন ভিত্তিতেই দেয়ার কথা থাক না কেন, তাদের বেতন ও মজুরি যখন প্রাপ্য হবে তখনই দেয়া হবে। বন্যা-রিলিফ সংক্রান্ত আগাম টাকা যেসব ইতোমধ্যেই মঞ্জুর করা হয়েছে, সেগুলো এবং বকেয়া বেতন-কড়ি সকরারী এবং আধাসরকারী প্রতিষ্ঠানের যেসব শাখার ওপর বেতনের বিল তৈরি এবং বেতন পরিশোধের কাজে ন্যস্ত, সেগুলোই চালু থাকবে।
পেনশন ভোগী
২৩ নং নির্দেশ : প্রাক্তন সৈনিকসহ সব পেনশনভোগীকে নির্ধারিত দিনে তাদের পেনশন দিয়ে দেয়া হবে।
এজি (ইপি) ও ট্রেজারি
২৪ নং নির্দেশ : এ সব নির্দেশে ছিল বেতনের বিল এবং টাকা-পয়সা লেনদেনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিয়ে নামমাত্র সংখ্যক কর্মচারীকে কাজ চালিয়ে যাবার অনুমতি দান।
ব্যাংক
২৫ নং নির্দেশ : (ক) ব্যাংকগুলো তাদের ব্যাংক কাজ চালাবার জন্য সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখবে (স্বাভাবিক সময় পালন) কিন্তু শুক্র ও শনিবারে ব্যাংকগুলো তাদের কাজের জন্য সকাল ৯টা থেকে ১১ পর্যন্ত খোলা থাকবে এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য ১২টা ৩০ মি. পর্যনত্ম খোলা থাকবে। অনুমোদিত লেনদেনের জন্য হিসাব নিকাশ ও অন্যান্য সাধারণ কর্মবিধিগুলো পালন করে যেতে হবে।
(খ) ব্যাংকসমূহ তাদের কাজ চালিয়ে যাবে। তারা যে কোন পরিমাণ অর্থ জমা দিতে পারবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আন্ত:ব্যাংক কিয়ারেন্সের কোন সীমারেখা থাকবে না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আন্ত:ব্যাংক লেনদেন চলবে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তার বা ডাকযোগে প্রেরিত অর্থ গ্রহণ করতে পারবে। নিম্নলিখিত বিধিনিষেধ-সাপেৰে নগদ লেনদেন চালাতে পারবে।

বাকি অংশ আগামীকাল

No comments

Powered by Blogger.