ইতিহাস এবং সমকালীন সীমাবদ্ধতা by মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকেছেন, এক কিস্তিতে হোক অথবা একাধিক কিস্তিতে হোক। এক কিস্তিতে বা একনাগাড়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় ছিলেন এমন ভিনদেশি রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করছি ইংল্যান্ড বা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট
থ্যাচার অথবা টনি ব্লেয়ার, প্রায় সাত দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরুলাল নেহরু, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্নো এবং তাঁর অব্যবহিত পরই প্রেসিডেন্ট সুহার্তো; পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ, মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক, লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি, ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন, কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো প্রমুখ। একাধিক কিস্তিতে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় ছিলেন এমন নেতাদের মধ্যে উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করছি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রমুখ। প্রত্যেক বড় মাপের রাজনৈতিক নেতা বা রাষ্ট্রনায়কের রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস ঘাঁটলে কোনো না কোনো প্রকারের চমকপ্রদ এবং সমকালীন রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবশ্যই পাওয়া যাবে। ওইরূপ চমকপ্রদ ঘটনাবলির মধ্যে মর্মান্তিক হচ্ছে ওই ঘটনাগুলো, যেগুলোর সঙ্গে ওই নেতাদের রাজনৈতিক বিপর্যয় জড়িত। একজন ব্যক্তি হঠাৎ করে এক দিনে অনেক বড় মাপের রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠেন না, ধাপে ধাপে, সাফল্য এবং ব্যর্থতার অভিজ্ঞতায় বড় হতে থাকেন। একজন ব্যক্তি যখন অনেক বড় মাপের রাজনৈতিক নেতা বা রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠেন তখন তাঁর ব্যক্তিজীবন নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ার অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে- করণীয় কাজ বা কর্মসূচির তুলনায় সময়ের স্বল্পতা। এ সময়ের স্বল্পতার কারণে ওই নেতার ব্যক্তিগত জীবনে স্পেয়ার টাইম বা ফ্রি টাইম বা ব্যক্তিগত কাজের জন্য উন্মুক্ত সময় বলতে বিশেষ কিছুই থাকে না। না থাকার ফলে এ ধরনের ব্যক্তিরা দায়িত্বরত থাকাকালে বই পড়ার সময় কম পান। তাই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় কাজ হচ্ছে, দায়িত্বের বাইরে থাকা অবস্থায় পড়ালেখা করা এবং পড়ালেখার মধ্যেও বিষয় হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, রাজনৈতিক ইতিহাস, রাজনীতিবিদদের ইতিহাস, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অগ্রাধিকার দাবি করে। ইতিহাস বা সময়ের নিরিখে পূর্ববর্তীদের ভুলভ্রান্তি পরবর্তীদের সংশোধন হতে সহায়তা করার কথা।
কথাগুলো বলছি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বা সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে। অতি সহজ (বা ইংরেজি ভাষায় : সিমপ্লিসটিক ইকুয়েশনে) সরলীকরণ করলে দলীয় আঙ্গিকে বর্তমান পরিস্থিতি এরূপ। বর্তমান বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, তারা ক্ষমতায় থেকেই যেতে চায় অব্যাহতভাবে ২০২১ সাল পর্যন্ত। ২০২১ সাল গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে ওই বছর বাংলাদেশের বয়স ৫০ বছর হবে। অর্থাৎ সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপিত হবে। যেই দলের রাজনৈতিক নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল, সেই দল সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের সময় ক্ষমতায় থাকতে চাইবে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অস্বাভাবিক হচ্ছে, যে প্রক্রিয়ায় থাকতে চায় সেটি। বর্তমানে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের প্রধান দল হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তথা বিএনপি। বিএনপি আগামী সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। এই চাওয়াতেও অস্বাভাবিক কিছু নেই। কিন্তু শাসক রাজনৈতিকগোষ্ঠী কর্তৃক সৃষ্ট পরিস্থিতি উভয়ের জন্যই বাধার সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট আছে; এই জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি; অতঃপর নাম হয়েছে মহাজোট। ১৮ এপ্রিল ২০১২ তারিখে বিদ্যমান চারদলীয় জোটকে ভেঙে দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে নতুন করে ১৮ দলীয় জোট করা হয়। কোনো কোনো পর্যবেক্ষকের মতে, চারদলীয় জোটকে ভাঙা হয়নি, সম্প্রসারিত করে ১৮ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়েছে। জোট করার প্রবণতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন নয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় জোট করার প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং পরীক্ষিত সাফল্য লাভ করে। ১৯৭১ সালের পূর্বেকার পাকিস্তানের রাজনীতিতে জোট করার বর্ণনা এখানে দিচ্ছি না। ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় যেতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। মহাজোট ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইবে, এটাও স্বাভাবিক। তাহলে সমস্যাটি কোথায়? সমস্যাটি হচ্ছে ক্ষমতায় থেকে যাওয়া বা ক্ষমতায় নতুন করে যাওয়া উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য প্রক্রিয়া হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ সংসদীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়েই যত সমস্যা। ছোট ছোট কয়েকটি ভিন্ন কথা বলি।
ঢাকা মহানগরের পুরাতন বিমানবন্দরের কাছে প্রধান সড়কের ওপর একটি ক্ষুদ্র পরিসরে পুস্তক বিক্রির দোকান আছে, যার নাম 'বুকওয়ার্ম'। ট্রাফিক জ্যামের ভয়ে এবং সময়ের অভাবে আমি ঢাকা মহানগরের অনেক বইয়ের দোকানে যেতে পারি না। আবাসস্থলের কাছে হওয়ায় বুকওয়ার্মে যাই। কোনো কোনো সময়, সম্ভব হলে বেইলি রোডে অবস্থিত 'সাগর পাবলিশার্স'-এ গমন করি। বুকওয়ার্মে অনেক বই পাওয়া না গেলেও মোটামুটিভাবে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো পাওয়া যায়। সদ্য প্রয়াত ভারতের অন্যতম সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দর কুমার গুজরাল (সংক্ষেপে আই কে গুজরাল) কর্তৃক লিখিত তাঁর নিজের আত্মজীবনী ঢাকার বাজারে এসেছে এবং বুকওয়ার্ম থেকে একটি কপি আমিও নিয়েছি। আত্মজীবনীটি মূলত রাজনৈতিক ঘটনাকেন্দ্রিক। পুস্তকটি অতি সুলিখিত এবং লেখকের আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতা সহজেই বোধগম্য। পুস্তকটির অষ্টম অধ্যায়ের নাম হচ্ছে 'দি ডাউন ফল অব ইন্দিরা গান্ধী অ্যান্ড দি কংগ্রেস'। এই পুস্তকটির ৯৭ পৃষ্ঠায় আই কে গুজরাল ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসের ২ তারিখের ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে একটি কথোপকথনের রেফারেন্স দিয়েছেন। ওই কথোপকথনে ইন্দিরা গান্ধী যে কয়টি কথা বলেছেন তার মধ্য থেকে তিনটি কথা এখানে উল্লেখ করছি। প্রথম কথা হলো, ইন্দিরা গান্ধী বিহার প্রদেশের সাসারাম এলাকায় জনসভা করে ফিরে আসছেন। সাসারাম হচ্ছে তখনকার আমলের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ জগজীবন রামের নির্বাচনী এলাকা। ওই মিটিংয়ে জনগণের উপস্থিতি এবং তাদের মতি-গতি দেখে ইন্দিরা গান্ধী উপসংহার টানছেন যে আগামী নির্বাচনে (অর্থাৎ ২ মার্চ ১৯৭৭ তারিখের অল্প কিছুদিন পর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে) প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ জগজীবন রাম হেরে যেতে পারেন বলে তিনি (ইন্দিরা গান্ধী) আশঙ্কা করছেন। দ্বিতীয় কথা হলো, ইন্দিরা গান্ধীর মতে, তখনকার আমলের জনতা পার্টি এবং সিপিআই (কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া) বৈদেশিক উৎস থেকে প্রচুর টাকা সংগ্রহ করেছে। ওই টাকা ব্যবহার করে এই দুটি দল ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ও পরিচিতিকে ম্লান ও হেয় করার কাজে লিপ্ত। তৃতীয় কথা হচ্ছে, ইন্দিরা গান্ধী মনে করেন সিপিআই তাঁর রাজনৈতিক পতন কামনা করে এবং রাজনৈতিকভাবে তাঁর বিরোধিতাকারী শুিক্ত। ইন্দিরা গান্ধী আরো মনে করেন, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি যেই সমর্থন ও নমনীয়তা প্রকাশ্যে প্রদর্শন করছে, সেটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ সোভিয়েত রাশিয়া যদি আসলেই ইন্দিরা গান্ধীকে পছন্দ ও সমর্থন করত, তাহলে নিশ্চয়ই কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়াকে কংগ্রেস বিরোধিতায় নিষেধ করত। অর্থাৎ ইন্দিরা গান্ধীর অনুধাবনে সোভিয়েত রাশিয়া প্রকাশ্যে ইন্দিরা গান্ধীকে সমর্থন করলেও তলে তলে সিপিআইকে সমর্থন ও ইন্ধন দিচ্ছে। যেই তারিখের কথাটি আমরা এই অনুচ্ছেদে উল্লেখ করলাম অর্থাৎ ২ মার্চ ১৯৭৭-এর পরে নিকটতম নির্বাচনে ইন্ধিরা গান্ধী এবং কংগ্রেস দলের ভরাডুবি হয়েছিল। সেই ভরাডুবির পেছনে জনতা পার্টি কতটুকু দায়ী ছিল, সিপিআই কতটুকু দায়ী ছিল, সোভিয়েত রাশিয়া কতটুকু দায়ী ছিল, বৈদেশিক আর্থিক অনুপ্রবেশ কতটুকু দায়ী ছিল এবং কংগ্রেস নেতা ও ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ভুলভ্রান্তি কতটুকু দায়ী ছিল, সেটা পরবর্তী প্রজন্ম জানে।
বাংলাদেশে একাধিকবার ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়েছে। ১৯৭৫-এর আগস্ট ও নভেম্বর অথবা ১৯৮১ সালের মে বা ১৯৮২ সালের মার্চ- এই ঘটনাগুলো ব্যতিক্রমধর্মী। ১৯৯০-এর ডিসেম্বর, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৬- এই ঘটনাগুলো প্রণিধানযোগ্য। এখন ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমরা পেছনের দিকে তাকিয়ে বলতে পারি, এই চারটি সময়ে ক্ষমতা পরিবর্তনের সপ্তাহ বা মাসগুলো কেমন ছিল। আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইতিহাস অস্বচ্ছতা ও কেলেঙ্কারিতে ভরা। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এই কথা প্রযোজ্য। অন্যপক্ষে এই অস্বচ্ছতা ও কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ বা প্রতিকারস্বরূপ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের আগে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ রাজপথে কঠোর আন্দোলন করেছিল এবং তৎকালীন শাসক দল বিএনপি সংসদে ও রাজপথে তার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই তৎকালীন শাসক দল বিএনপি রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে উপযুক্ত সংশোধনী আনে। ওই পদ্ধতির অধীনে বাংলাদেশে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮-এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই তিনটি নির্বাচনের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। পদ্ধতি যদি খারাপ হতো তাহলে কি আওয়ামী লীগ জয়ী হতো? এটি একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন।
১৯৯৬ সালে প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির কিছু কিছু ধারা বা বিধানে ভুলত্রুটি ছিল বলে আমি মনে করি। তিনবার বাস্তবায়ন করার কারণে এই ভুলগুলো ধরা পড়েছে। ওইরূপ ভুলগুলো সংশোধনযোগ্য। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এগুলোকে সংশোধন না করে পুরো পদ্ধতিকে বাতিল করেছে। এখন আওয়ামী লীগ সরকার বলে বেড়াচ্ছে, সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে। সংবিধান কোনো আসমানি কিতাব নয়। সংবিধানে ২০১১ সালে যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে, সেগুলোকে ফের সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা আছে, সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয় সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাও আছে। সংশোধন করার জন্য যেটা নেই সেটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের অন্তরে আন্তরিক সদিচ্ছা। আমি আওয়ামী লীগকে আহ্বান করি, তারা এই বিষয়টিকে সাংবিধানিকভাবেই নিষ্পত্তি করবে।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.kallyan-ibrahim.com

No comments

Powered by Blogger.