ভূমিদস্যু সেই এসপি মিজানের অপকর্মের তদন্ত শুরু by শংকর কুমার দে

 গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সীমান্ত এলাকায় শত শত বিঘা জমি দখলকারী পুলিশের সেই এসপি মিজানুর রহমানের দুর্নীতি, নির্যাতন, হয়রানির নানা কাহিনীর ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে।
ওমর ফারুক নামে এক ব্যবসায়ী আইজিপির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে তার বিরুদ্ধে। এই ব্যবসায়ীকে ব্ল্যাকমেইল করে ২০ লাখ টাকা আদায় করতে যেভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে সেই কাহিনী বর্বরতাকে হার মানায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। নির্যাতন, হয়রানি করেই তিনি ক্ষান্ত হতেন না, মিথ্যা মামলা দায়ের, কারাগারে নিক্ষেপ, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন। আইজির বরাবরে এই ধরনের অভিযোগ করার পর এসপি মিজানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এসপি মিজান যেখানেই চাকরি করতেন তার ভয়ে বাঘে মোষে এক ঘাটে পানি খাওয়ার উপক্রম হতো। পুলিশ প্রশাসনে চাকরি ছাড়াও তিনি করতেন ব্যবসা। স্ত্রীর নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বস্ন্যাকমেইল করতেন। এসপি মিজান কিভাবে ব্যবসা করার নামে ব্যবসায়ীদের ব্ল্যাকমেল করেছেন আইজিপির কাছে অভিযোগ তার চিত্র ফুটে উঠেছে।
মেসার্স রায়হান এ্যান্ড ব্রাদার্স নামের প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়। প্রতিষ্ঠানের মালিক ব্যবসায়ী ওমর ফারুক। তিনি আইজি বরাবর অভিযোগ করেছেন, ২০০৮ সালের ৪ ডিসেম্বর। এসপি মিজানের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মোলস্না এনপিকে লি: থেকে ৪০০ বসত্মা মিশ্র সার নেন। মোল্লা এনপিকে লি: ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানটির মালিক এসপি মিজানের স্ত্রী নিপা মিজান। এসপি মিজান তাকে বস্তা প্রতি ২০ টাকা কমিশনে মিশ্র সার দেয়ার প্রসত্মাব করেন। তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হলে চট্টগ্রামে ৪০০ বস্তা মিশ্র সার পাঠানো হয়। মিশ্র সার পাঠানোর পর দেখা যায় এসব সার খুবই নিম্নমানের ও নকল। এসব মিশ্র সার মাঠপর্যায়ে বিক্রি করলে তার ব্যবসায়ী সুনাম ৰুণ্ন্ন হবে এবং কৃষকরা প্রতারিত হবে। তাই ব্যবসায়ী ওমর ফারম্নক এসব মিশ্র সার ফেরত নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন এসপি মিজানকে।
ব্যবসায়ী ওমর ফারুকের মিশ্র সার ফেরত পাঠানোর প্রসত্মাব পেয়ে এসপি মিজান তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। এসপি মিজান তখন চাকরি করতেন সিলেটের রিজার্ভ ফোর্সে। এসপি মিজান এমদাদ নামের পুলিশের এক এসআইকে ব্যবসায়ী ওমর ফারুকের কাছে পাঠান। ব্যবসায়ী ওমর ফারুক এসআই এমদাদকে নিম্নমানের মিশ্র সারের নমুনা দেখান। এসপি মিজান এই ঘটনা শুনে ব্যবসায়ীর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এমনকি ক্রসফায়ার করে তাকে খুন করা হবে।
যে কথা সেই কাজ। ব্যবসায়ী ওমর ফারম্নক ও তার ভাই রিপনের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করানো হয়। যাত্রাবাড়ী থানার এসআই রায়হান ফারুক ও রিপন-এই দুই ভাইকে তাদের অফিস থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় থানায়। তারপর পাঠানো হয় কারাগারে। কারাগারে পাঠানোর পর আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বের হয়ে আসেন ব্যবসায়ী ফারুক ও রিপন দুই ভাই। সিলেটের রেঞ্জের রিজার্ভ ফোর্স এসপি মিজান বদলি হয়ে আসেন ফরিদপুর জেলায়। ফরিদপুর জেলার এসপি হয়ে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় মিথ্যা ডাকাতির মামলা। তারপর যা হওয়ার তাই হলো। মিথ্যা মামলায় তাদের ভাগ্যে নেমে এলো মারাত্মক বিপর্যয়। ফরিদপুর থেকে বদলি হয়ে বাগেরহাট জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদান করেন এসপি মিজান। বাগেরহাটের এসপি থাকাকালে আরও একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় ব্যবসায়ী ওমর ফারুক ও তার ভাই রিপনের বিরম্নদ্ধে। মিথ্যা মামলায় দুই ভাইয়ের বিরম্নদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। রোজার ঈদের মাত্র ৪ দিন আগে ভোর পাঁচটায় বাগেরহাট সদর থানার সেকেন্ড অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশ দল এসে আমার বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় বাগেরহাট সদর থানায়। বাগেরহাট সদর থানায় নিয়ে গিয়ে আমাদের ওপর চালানো হয় চরম পুলিশী নির্যাতন। পুলিশী নির্যাতনের মাধ্যমে আমাকে ২৫ লাখ টাকা দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। নতুবা 'ক্রসফায়ারে দেয়া'র হুমকি প্রদর্শন করা হয়। পুলিশী চরম নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ভয়ে বাধ্য হয়ে এসপি মিজানের সঙ্গে মোবাইল টেলিফোনে আলাপ করে টাকা দিতে বাধ্য হই। ব্যাংকের চেক ও নগদ ২০ লাখ টাকা দেই কয়েক দফায়। এসপি মিজান টাকা আদায় করে সাদা কাগজে জোর করে ১০ লাখ টাকা পরিশোধের দুটি লিখিত অঙ্গিকারনামা নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেয়। এসপি মিজান তার ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে টাকা আদায় করিয়ে নেয়। এভাবে পুলিশী নির্যাতন, হয়রানি, মিথ্যা মামলা দায়ের, কারাগারে নিৰেপ ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেছে বলে ব্যবসায়ী ওমর ফারম্নক আইজিপি বরাবর অভিযোগ করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.