সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে কাতারের প্রতিনিধি দল আজ আসছে

 প্রস্তাবিত পদ্মাসেতু নির্মাণ, নদী খনন, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে সহায়তাসহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক চিহ্নিত করতে কাতারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী খালিদ বিন মোহাম্মদ আল আতিয়ার নেতৃত্বে দেশটির একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল আজ বুধবার বাংলাদেশ সফরে আসছে।
ঢাকায় দু'দিন অবস্থানকালে প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমণি, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এছাড়া প্রতিনিধি দলটির নদী খনন কাজ পরিদর্শনেরও কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাতার সফরকালে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিনিয়োগসহ বেশ কয়েকটি খাতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন দেশটির আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানী। সে সময় বিনিয়োগ ও সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে চলতি বছরের শুরুতে কাতারের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফরের ফলোআপ এবং দেশটির আমিরের প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় প্রতিনিধি দলটি ঢাকা সফরে আসছে। সূত্র জানায়, পদ্মাসেতু নির্মাণে সহায়তা এবং নদী খননে বাংলাদেশকে ড্রেজার দেবে কাতার। এছাড়া তেল, বিদু্যত ও জ্বালানিসহ বেশ কয়েকটি খাতে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করতে চায় মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এ দেশটি। চলতি সফরেই বিষয়গুলো চূড়ানত্ম হওয়ার কথা রয়েছে। বুধবার রাতে প্রতিনিধি দলটির ঢাকায় পেঁৗছানোর কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর কাতারের মন্ত্রী দুপুরে রাষ্ট্রীয় অথিতি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাৰিক বৈঠক করবেন। সেখানে তাঁর সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমণির দেয়া মধ্যাহ্নভোজেও যোগ দেবেন তিনি। বিকেলে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবে প্রতিনিধি দলটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকতর্া জানিয়েছেন, কাতারের মন্ত্রীর সফরকালে দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতার সকল দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফরের সময় দেশটি বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। তারই অগ্রগতি হিসেবে উচ্চপর্যায়ের এ প্রতিনিধি দলটি এবার ঢাকায় আসছে।
সূত্র জানায়, কাতারের মন্ত্রীর সফরকালে পদ্মাসেতু নির্মাণে সহায়তা চাওয়া হবে। এর আগে পদ্মাসেতু নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল দেশটির আমির। তবে এ সহায়তার ধরন কি হবে তা নিয়ে এবারের সফরে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। অবকাঠামো, বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগ, নদী খননে ড্রেজার সরবরাহ, শিৰা ও স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা চাওয়া হবে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কাতারের সহায়তা চাওয়া হবে। এছাড়া কাতারে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের সুযোগসুবিধা বাড়ানো এবং বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নেয়ার অনুরোধ জানানো হবে। এর বাইরে কাতার থেকে সার আমদানি নিয়েও দু'দেশের মধ্যে আলোচনা হবে।
সূত্র জানায়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বাইরে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে কৌশলগত কারণে কাতার বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) নেতৃত্ব নিয়ে সৌদি আরব ও মিসরের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। এ অবস্থায় অনেকটা উদারপন্থী দেশ হিসেবে কাতার ওআইসির নেতৃত্বে আসতে চাইছে। আরব বিশ্বেও এ সম্ভাবনাময় শক্তিকে কৌশলগত কারণে বেশ গুরম্নত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। কাতারের বর্তমান ১৭ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ১২ লাখই বিদেশী। দেশটির মাথাপিছু আয় প্রায় ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। দেশটির বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বিদেশী শ্রমিক আমদানি করতে হয়। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ বাংলদেশী শ্রমিক কাজ করছে। জনশক্তি রফতানির মন্দা কাটাতে কাতারকে বড় বাজার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ। ১৯৮৮ সালে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি সংক্রানত্ম একটি চুক্তি স্বাৰর হয়। এর বাইরে ২০০৫ সালে দু'দেশের মধ্যে জনশক্তি রফতানি সংক্রানত্ম একটি অতিরিক্ত প্রটোকল স্বাৰরিত হয়।
সূত্র জানায়, কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাৰিক বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক কম। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে কাতার থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল ৪০ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিপরীতে রফতানির পরিমাণ ছিল ১০ মিলিয়ন ডলারের মতো।

No comments

Powered by Blogger.