বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি by মোরসালিন মিজান

শুরু হলো ফেব্রুয়ারি। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত অমর একুশের মাস। ১৯৫২ সালের এই মাসে মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় জীবন দিয়েছিল বাঙালী। মাসটির তাই আলাদা তাৎপর্য। সেই তাৎপর্য তুলে ধরে প্রতি বছর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তবে সবার আগে বলতে হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলার কথা। আজ শুক্রবার থেকে বাংলা একাডেমী চত্বরে শুরু হচ্ছে বাঙালীর প্রাণের উৎসব। বৃহস্পতিবার একাডেমী চত্বর ঘুরে দেখা যায়, মোটামুটি প্রস্তুত সব। শেষ মুহূর্তটি পার করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক স্টলই আপন চেহারায় প্রকাশিত হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ শেষ হয়ে যাবে শীঘ্র। এ প্রসঙ্গে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যের স্বত্বাধিকারী আরিফুর রহমান নাইম বলেন, স্টল সাজানোর জন্য আসলে বেশি সময় পাই না আমরা। তবে যতটুকু পাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। এবারও তাই হচ্ছে। তিনি জানান, এমনিতে এলোমেলো দেখা গেলেও সহসাই সব ঠিক হয়ে যাবে। নান্দনিক চেহারায় ফিরবে স্টলগুলো। আর এ পর্ব শেষ হলেই বই উঠানো শুরু হয়ে যাবে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পাঠকরা নতুন বই সংগ্রহের সুযোগ পাবেন বলে জানান তিনি। আর তা হলে সামনের কিছুদিন দারুণ আনন্দে কাটাবে রাজধানীর বইপ্রেমী মানুষ। শিল্পসাহিত্য সংস্কৃতিপ্রেমীদের বৈকালিক আড্ডাগুলোও ওঠে আসবে বইমেলা চত্তরে।
অবশ্য এই আনন্দ বরাবরই অপছন্দ প্রতিক্রিয়াশীলদের। এরা মেলাটাকে কতটা নির্বিঘœ থাকতে দেবে সেটি নিয়ে এখন ভাবিত কেউ কেউ। কারণ বেশ কিছুদিন ধরেই একাত্তরের ঘাতক, ধর্ষক, লুটেরাদের দল জামায়াত শিবির উন্মাদের মতো আচরণ করছে। রাষ্ট্রের কোন আইনের প্রতি এরা শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে না। নির্দয় হামলা চালাচ্ছে পুলিশ সদস্যদের ওপর। সাধারণ মানুষের গাড়ি ভাংচুর করছে। ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সর্বশেষ, বৃহস্পতিবার একটি হরতালও দেয় তারা। উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা। কিন্তু এত মামাবাড়ির আবদার নয়। একাত্তরের ঘাতকদের বিচার দেখার আশায় যে একচল্লিশ বছর প্রতীক্ষা করেছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ! এ তরুণ প্রজন্ম এ কাজের জন্য বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এর আর কি করে বন্ধ থাকে বিচার! তাই যথানিয়মে এগিয়ে চলেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ হয়েছে ইতোমধ্যে। যে কোন দিন সাঈদী ও কাদের মোল্লা সম্পর্কে শেষ কথাটি বলে দেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বাকিদেরটাও খুব দূরে নয় বলে আশা করা হচ্ছে। বলাবাহুল্য, এ বড় সুখের কথা। এ বিচারের মধ্য দিয়ে আইনের শাসনে ফিরবে বাংলাদেশ এমনটিই আশা দেশবাসীর। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় নিয়মিত আলোচিত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু। মানবতাবাদী মানুষেরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন, বাকি রায়গুলো শোনার জন্য। বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখনও যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে ‘আউলা ঝাউলা’ অবস্থানে। তাদের ‘প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী’ তত্ত্ব যথারীতি ফেল মেরেছে। নেতারা এখন যে যার মতো বলার চেষ্টা করছেন। মূল কথাটি এ রকম দাঁড়িয়েছে জামায়াত একাত্তরে সব কুকামই করেছে। জানি। তবে বিচার করা যাবে না। কেন? কারণ, বিচার করলে আমাদের ভোটের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনুমান করা যায়, একই কারণে জামায়াত-শিবিরের নজিরবিহীন তা-ব দেখে খুশি বিএনপি। জামায়াতের এই তা-বে সরাসরি সমর্থন দিতে না পারলেও, হরতালে সমর্থন দিচ্ছেন তাঁরা। এর পর নেতারা আগ বাড়িয়ে বলছেন, দেশের মানুষ আতঙ্কিত। কেউ কেউ যে সত্যি আতঙ্কিত নয় তা বলা যাবে না। সহজ সরল এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বলচিত্তের মানুষ নিশ্চয়ই আতঙ্কগ্রস্ত। তবে যে আতঙ্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত সেটি নিশ্চয়ই দেখা যাচ্ছে না কোথাও। দেখানোর সুযোগ নেই জামায়াতীদের। রাজধানীর মানুষ বলছেন, এ বিষয়টা বুঝতে হবে। তাহলেই কেটে যাবে আতঙ্ক। আর নীরব থাকার মানে এই নয় যে, দেশ জামায়াত-শিবির কিনে নেবে আর যুদ্ধজয়ী বাঙালী চেয়ে চেয়ে দেখবে। প্রমাণ? বুধবারের প্রতিরোধ। গণধোলাই। হ্যাঁ, শুরু হয়ে গেছে। দুর্বৃত্তদের ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করছেন অনেকে। এভাবে সকলে এগিয়ে এলে পালানোর পথ পাবে না রাজাকারের বংশধররা। সেই দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় এখন জাতি।

No comments

Powered by Blogger.