সাকার পক্ষে আইনী লড়াইয়ে রাষ্ট্রের আইনজীবী নিয়োগ- যুদ্ধাপরাধী বিচার

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিজের মামলায় নিজেই পরিচালনা করলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার তিনি তার বিরুদ্ধে দেয়া প্রসিকিউশনের সাক্ষীকে জেরা শুরু করেছেন। এদিকে সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পক্ষে আইনী লড়াই করতে সালমা হাই টুনি নামে এক আইনজীবীকে রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউশনের ১৭তম ক্ষতিগ্রস্ত মহিলা সাক্ষীকে অসমাপ্ত জেরা ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৮তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন ৪ ফেব্রুয়ারি। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের পক্ষে প্রথম সাফাই সাক্ষী তার ছেলে আব্দুল্লাহ-হিল আমান আযমীর অসমাপ্ত সাক্ষ্য গ্রহণের দিন রবিবার ধার্য করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে দুই সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এই আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অপর সদস্য ছিলেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
রাষ্ট্র্র নিযুক্ত সাকার পক্ষের আইনজীবী প্রসঙ্গে সাকা চৌধুরী বলেন, ট্রাইব্যুনালের এ নিয়োগ আমি মেনে নিলাম। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন’ ১৯৭৩-এর ১৭(২) ধারা অনুযায়ী আসামি নিজেই মামলা পরিচালনা করতে পারবেন বলে বিধান রয়েছে। তাই আমি রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীকে সঙ্গে রেখে নিজেই নিজের মামলা পরিচালনা করব। পরে সাকার এ আবেদনের বিরোধিতা করেন প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম।
এর আগে সাকা চৌধুরীর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে রাষ্ট্র কর্তৃক এ্যাডভোকেট সালমা হাই টুনিকে নিযুক্ত করা হয়। এ্যাডভোকেট সালমা হাই টুনি রাষ্ট্রে খরচে সাকা চৌধুরীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করবেন। এদিকে সাকা চৌধুরী ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন, রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীকে সঙ্গে রেখে তিনি নিজেই তার মামলা পরিচালনা করবেন।এরপর এ্যাডভোকেট টুনির সঙ্গে সাকা চৌধুরী নিজেও ক্যামেরা ট্রায়ালে ১৭তম সাক্ষীকে জেরা করেন। বুধবার সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের ১৭তম সাক্ষী ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দেন ওই ক্ষতিগ্রস্ত নারী। ক্যামেরা ট্রায়ালে প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু এবং ৩ প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, রাজিয়া সুলতানা ও তাপস বল।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে রুদ্ধদ্বার কক্ষে এ ক্যামেরা ট্রায়াল চলাকালে সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। শুধু অভিযুক্ত সাকা চৌধুরী এবং উভয়পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা যেন সাক্ষী এবং সাক্ষ্যের বিষয়ে কোন প্রকার তথ্য না দেন, সে শর্তও আরোপ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
গোলাম আযম ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের পক্ষে প্রথম সাফাই সাক্ষী তার ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রবিবার ধার্য করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে দুই সদস্য বিশিষ্ট আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ করেছেন।
৯ জানুয়ারি পিতার পক্ষে তার অসমাপ্ত সাফাই সাক্ষ্য দেয়া শুরু করেন আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। ওই দিন আযমীর ৯ম দিনের মতো সাফাই সাক্ষ্য দেয়ার মধ্য দিয়ে দেড় মাস মুলতবির পর ফের শুরু হয় গোলাম আযমের মামলার বিচারিক কার্যক্রম। এর আগে গোলাম আযমসহ মোট ৫ জনের মামলা পুনর্বিচারে আসামি পক্ষের আবেদনের কারণে স্থগিত হয়ে যায় এ প্রক্রিয়া। শুনানি শেষে সে সব আবেদন ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেয়ায় আইন অনুসারে এগিয়ে যাচ্ছে বিচার।
সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্তকৃত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী ২০১২ সালের ১২ নবেম্বর থেকে সাফাই সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন। ২২ নবেম্বর পর্যন্ত ৮ কার্যদিবস সাক্ষ্য প্রদান করেন তিনি। এর পর কয়েক দফা তারিখ ধার্য থাকলেও আযমী ও তার আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে হাজির না থাকায় তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়নি। ৩ জানুয়ারি গোলাম আযমসহ ৪ জন এবং ৭ জানুয়ারি ১ জনের মামলার পুনর্বিচারের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে ফের শুরু হয়েছে বিচারিক কার্যক্রম।
গোলাম আযমের পক্ষে ১২ জন সাক্ষী সাফাই সাক্ষ্য দিতে পারবেন বলে নির্ধারণ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার ৭ সাক্ষীসহ প্রসিকিউশনের মোট ১৭ জন সাক্ষী এর আগে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামি পক্ষ তাদের জেরাও সম্পন্ন করেছেন। আর ১ জন সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দীকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

No comments

Powered by Blogger.