বহির্সমর্পণ চুক্তি

সোমবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর একটি হচ্ছে দু’দেশে বন্দীদের প্রত্যর্পণের লক্ষ্যে বহির্সমর্পণ চুক্তি। দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনদিকে প্রায় আড়াই হাজার মাইলের সুদীর্ঘ সীমান্তবেষ্টিত দেশ দু’টির অপরাধীরা বিভিন্ন সময় দু’দেশের মধ্যে ঢুকে পড়ে। নিজ দেশে অপরাধজনক কাজ করে আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য কখনও প্রতিবেশী দেশে অনুপ্রবেশ এবং লুকিয়ে থাকা, কখনও নিজের দেশে অপরাধজনক কর্মকা- পরিচালনা করার জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভূমি ব্যবহারের সুযোগ নেয়া আবার কখনও লুকিয়ে থেকেই মোবাইল ফোন বা অন্যমাধ্যমে স্বদেশের অপরাধজগত নিয়ন্ত্রণ করাÑবাংলাদেশ-ভারতের অপরাধীদের তৎপরতা বিশ্লেষণ করলে প্রধানত এ চিত্রটিই কমবেশি সামনে আসে। একথা ঠিক যে, ভারতের অপরাধীদের তুলনায় বাংলাদেশের দাগী অপরাধীদের ভারতে অনুপ্রবেশের হার অনেক বেশি। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া এখন বাংলাদেশের কারাগারে। জানা গেছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও ফাঁসির আসামি সাজ্জাদ হোসেনসহ কয়েক অপরাধী বন্দী আছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত অন্তত দুই খুনী এখন লুকিয়ে আছে ভারতের অভ্যন্তরে।
এই সার্বিক প্রেক্ষাপটে সদ্যস্বাক্ষরিত বহির্সমর্পণ চুক্তিটি, যেটি আগামী এপ্রিল মাস থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। দু’দেশের বন্দীবিনিময়ের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসন করবে বলে আশা করা যায়। এই চুক্তির বলে এখন বাংলাদেশ সহজেই চিহ্নিত সন্ত্রাসী, খুনী ও অন্যান্য অপরাধে দ-িত বা মোস্টওয়ান্টেড তালিকাভুক্তদের ভারত থেকে দেশে ফেরত এনে আইনের হাতে সোপর্দ করতে পারবে; দ- কার্যকর করতে পারবে। অপরদিকে ভারতও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা সেদেশের সন্ত্রাসীদের ফিরে পেতে পারবে। জানা গেছে, রাজনৈতিক আসামি ব্যতীত অন্য সকল আসামি প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে এই চুক্তি কার্যকর হবে।
সম্পাদিত বহির্সমর্পণ চুক্তিটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর মাধ্যমে বাংলাদেশই লাভবান হবে বেশি। ভারতের অনুপ চেটিয়া ব্যতীত সে দেশের বড়মাপের কোন অপরাধী বাংলাদেশে আছে বলে জানা যায়নি; তার একটি মামলা হাইকোর্টে অনিষ্পন্ন থাকার কারণে তাকে আপাতত প্রত্যর্পণ করা যাচ্ছে না। তবে বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরসহ অন্য দাগী অপরাধীদের দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে কোন বাধা থাকছে না বিধায় এই অপরাধীদের দ- কার্যকর করা এখন সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হয়। এই চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দু’দেশের সরকারের ত্বরিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সবার কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.