অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগের বিষয়গুলো by ড. আর এম. দেবনাথ

সরকারের বয়স বাড়ছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান অর্থবছর অর্থাৎ ২০০৯-১০ অর্থবছরের আয়ুও শেষ হয়ে আসছে। এই নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে মার্চ মাসের ১৯ তারিখে।
তার অর্থ বর্তমান অর্থবছরের আর মাত্র সাড়ে তিন মাসেরও কম বাকি। অর্থবছরের প্রথমদিকে সরকার ও অর্থমন্ত্রী কিছুটা স্বস্তিতেই ছিলেন বলা যায়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাজেট ঘোষণার সময় গত জুন মাসে বেশকিছুটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই তার এবং সরকারের উদ্বেগ ও অস্বস্তি বাড়ছে। আমি রাজনৈতিক ফ্রন্টের বিপদের কথা বলছি না। সেটা তো আছেই। আমি বলছি অর্থনৈতিক ফ্রন্টের কথা। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের যে উদ্বেগ বাড়ছে সে কথা বাইরের লোকের বলতে হচ্ছে না। আমাদের অর্থমন্ত্রী নিজেই তা বলছেন এবং তা বলছেন অত্যন্ত খোলাখুলিভাবে। তিনি আশাবাদও প্রকাশ করছেন। যেমন বলছেন আমাদের রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তিনি এমনও বলেছেন যদি রাজস্ব এ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেছেন, রেমিটেন্সের অবস্থা ভাল। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ পরিস্থিতিও সন্তোষজনক। তিনি বলেছেন বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে তিনি কয়েকটি ক্ষেত্রে তার উদ্বেগের কথাও আমাদের জানিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তথ্যে দেখা যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি ডবল ডিজিট ধর ধর। মূল্যস্ফীতি দুভাবে হিসাব করা হয়। একটা হচ্ছে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে এবং আরেকটি গড় হিসেবে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট বৃদ্ধি পেলে গড়ের মূল্যস্ফীতিও বৃদ্ধি পায়। দেখা যাচ্ছে গেল ডিসেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। অথচ এক মাস আগেও এই হার ছিল মাত্র ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। এক মাসে বেড়েছে সোয়া পয়েন্ট। বলা বাহুল্য মূল্যস্ফীতির হার বহুলাংশে নির্ভর করে খাদ্যমূল্যের ওপর। খাদ্যমূল্য বিশেষ করে চালের মূল্য যে মাত্রাতিরিক্ত হারে ইদানীং বাড়ছে তা তো ভোক্তারা টের পাচ্ছেনই, এর প্রভাবেই মূল্যস্ফীতি ভীষণভাবে বাড়ছে। সামনে বোরো ফসল। সরকার চাল আমদানি করছে। খোলাবাজারে চাল দেয়া হবে। অতি দরিদ্রদেরও চাল দেয়া হবে। আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল। এ প্রেক্ষাপটে স্টকিস্ট ও মিলাররা চাল ছেড়ে দিচ্ছে। এর প্রভাব চালের বাজারে পড়ার কথা। যদি তা হয় তাহলে মূল্যস্ফীতি হয়ত বর্তমান পর্যায়ে আটকে থাকবে। কিন্তু অনুমান সত্য না হলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। যদি বাড়ে তাহলে তা কত বাড়বে তা অনুমান করা শক্ত। কিন্তু আমরা জানি, ২০০৯-১০ অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষমাত্রা নির্ধারিত করা আছে ৭ শতাংশে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, এ লক্ষমাত্রা ডিঙ্গিয়ে মূল্যস্ফীতি আরও ওপরে থাকবে। তাহলে খুবই বিপদের কথা। কারণ মাত্রাতিরিক্ত মূল্যস্ফীতি সরকারের সকল কার্যক্রম লণ্ডভণ্ড করে দেয়। সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে মূল্যস্ফীতি বাড়লে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ে। তাদের বাঁচানোর জন্য সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হয়। এই বিপদের মধ্য দিয়েই বর্তমানে আমরা এগোচ্ছি। এটা সত্যি সত্যি ভীষণ উদ্বেগের বিষয় যার সম্বন্ধে অর্থমন্ত্রী বলেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি রোধে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানানো হচ্ছে। কিন্তু তা কতটুকু ফল দেবে এবং কার্যকর হবে তা দেখার বিষয়।
দ্বিতীয় উদ্বেগের বিষয় বিনিয়োগ। সরকারী বিনিয়োগ পরিস্থিতি কী তা আলোচনা না করলেও চলে। সরকার ইতোমধ্যে উন্নয়ন কর্মসূচির আকার হ্রাস করেছে। এদিকে বলা হচ্ছে, রাজস্ব আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজস্ব বৃদ্ধি পেলে উন্নয়ন কর্মসূচি বা সরকারী বিনিয়োগের লক্ষমাত্রা হ্রাস করা হলো কেন? তাহলে কী রাজস্ব ব্যয় খুব বেশি করে বৃদ্ধি পাচ্ছে? হতে পারে বাস্তবায়ন ক্ষমতার অভাব। যেভাবেই দেখা হোক না কেন এটা পরিষ্কার যে, সরকারী বিনিয়োগের পরিমাণ হ্রাস করা হয়েছে। এদিকে বেসরকারী বিনিয়োগ পরিস্থিতি কী_ এ সম্বন্ধে সম্যক ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি, কাঁচামাল আমদানির তথ্য থেকে কোন পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। বিপরীতে দৃশ্যত বেসরকারী বিনিয়োগে একটা স্থবিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রকৃত হিসাব হয়ত বছর শেষে পাওয়া যাবে। কিন্তু বিদেশী বিনিয়োগ বা এফডিআই সম্পর্কে যে তথ্য এখনই পাওয়া যাচ্ছে তা হতাশাজনক। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাস অর্থাৎ জুলাই-ডিসম্বরের মধ্যে নিট এফডিআই-এর পরিমাণ ৬৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) দাবি করছে। এ তথ্য কতটুকু সত্য? এদিকে রয়েছে পোর্টফলিও ইনভেস্টমেন্ট বা শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগের পরিস্থিতি কী সে প্রশ্ন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এখানেও নড়াচড়া কম। সার্বিকভাবে তাহলে দেখা যাচ্ছে, বিনিয়োগ পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। বছরের আর আছে মাত্র সাড়ে তিন মাস। এর মধ্যে কী কোন বড় পরিবর্তন হবে? মনে হয় না। এছাড়া রয়েছে পিপিপি বাজেট। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের অধীনে যে বিনিয়োগ হওয়ার কথা তা যে হচ্ছে না এ কথা স্বয়ং অর্থমন্ত্রীই বলেছেন। এমতাবস্থায় বিনিয়োগের পরিস্থিতি আরেকটি উদ্বেগের বিষয়।
উদ্বেগের তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে রফতানি পারফরমেন্স। রফতানির লক্ষমাত্রা বর্তমান অর্থবছরের জন্য ধরা আছে ১৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এটি হলে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বাড়ানী ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ঘটবে ১৩ শতাংশের মতো। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে রফতানি পারফরমেন্স এবার আশানুরূপ না হওয়ারই সম্ভাবনা। ২০০৯-১০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রফতানি হ্রাস পেয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ওভেন গার্মেন্টস রফতানি হ্রাস পেয়েছে। ফ্রোজেন ফুড, কেমিক্যাল প্রোডাক্টস ও চামড়া রফতানিও হ্রাস পেয়েছে। আগামী মাসগুলোতে রফতানি বৃদ্ধি পেতে পারে এমন কোন লক্ষণ নেই। রফতানি পারফরমেন্স খারাপ হলে তার প্রভাব পড়বে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে। শুধু তাই নয়, এর অর্থ হবে শিল্প উৎপাদন হ্রাস। গার্মেন্টস শিল্প একটা উল্লেখযোগ্য খাত। এ খাতের কম রফতানি মানেই হচ্ছে কম উৎপাদন। কম উৎপাদন মানে তা অবশ্যম্ভাবীভাবে সার্বিক শিল্প উৎপাদন হ্রাস। আর তা নিশ্চিতভাবেই আরেকটি উদ্বেগের বিষয়।
মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ এবং রফতানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে তা শেষ পর্যন্ত এখানে স্থির থাকবে না। শেষ অবধি উন্নয়নের বড় সূচক জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপি গ্রোথ রেটকে প্রভাবিত করবে। ২০০৯-১০ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ। বিদেশী সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বার বার বলে যাচ্ছে জিডিপি গ্রোথ রেট অর্জিত হবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের মূল্যায়নের ওপর আস্থাশীল নই। আমি আমাদের সরকারী তথ্যের ওপর নির্ভর করতে চাই। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আমাদের সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির হার অর্জিত হবে না। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে মাত্র ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তার অর্থ প্রায় এক শতাংশ প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে সেবা খাতে। আমরা জানি আমাদের সেবা খাত বা সার্ভিসেস সেক্টরই বর্তমানে জাতীয় উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। এ খাতে রয়েছে : পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, হোটেল ও রেস্তরা, পরিবহন, হিমাগার ও যোগাযোগ, ব্যাংক-বীমা, আবাসন শিল্প ও অন্যান্য ব্যবসা, জনপ্রশাসন ও দেশরক্ষা, শিক্ষা এবং সামাজিক সেবা। এই নয়টি উপখাত মিলে জিডিপিতে অবদান রাখে ৫০ শতাংশ। এখন যদি এই সেবা খাতেই এক শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায় তাহলে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি কীভাবে সম্ভব হবে? শুধু সেবা খাতের প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন আছে শিল্প খাত নিয়েও। সেখানেও প্রবৃদ্ধির হার অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা। শিল্প খাতের অবদান জাতীয় উৎপাদনে প্রায় ত্রিশ শতাংশ। এ খাতে আছে সাইনিং ম্যানুফেকচারিং, বিদ্যুত ও গ্যাস এবং নির্মাণ। এসব খাতে যে আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। বাকি থাকে কৃষি। কৃষিই একমাত্র খাত যা এখন পর্যন্ত ভাল করে যাচ্ছে। বস্তুত অর্থনীতির লাইফ লাইন দেখা যাচ্ছে কৃষি খাত। ইতোমধ্যেই আমন ফসল খুব ভাল হয়েছে। এক কোটি ২৭ লক্ষ টন ছিল আমনের লক্ষমাত্র। সেই স্থলে আমনের ফলন হয়েছে এক কোটি ২৯ লক্ষ টন। বোরো ফসল আশানুরূপ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যদি না প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ ঘটে। এমতাবস্থায় যদি ধরেও নিই যে, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হবে তবু জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা অর্জনের বিষয়টি অনিশ্চিতই থেকে যায়। কারণ কৃষি আর আগের জায়গায় নেই। কৃষি মোট জাতীয় উৎপাদনে অবদান রাখে মাত্র ২০ ভাগ। বাকি আশিভাগের মালিক সেবা খাত ও শিল্প খাত। এ দুই খাতে প্রবৃদ্ধির হার অর্জিত না হলে লক্ষমাত্রামাফিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি কীভাবে হবে? অবশ্য সামনে সাড়ে তিন মাস আছে। এর মধ্যে যদি এ দুটো খাত একটু ভাল পারফরম করে তাহলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটতে পারে। সে যাই হোক, ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি না ঘটলেও প্রবৃদ্ধির হার ছয়ের কাছাকাছিই থাকবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত বিবেচনায় বর্তমান পরিস্থিতিতে সাড়ে পাঁচ-ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করার কাজটি খুব হতাশব্যঞ্জক নয়। তবে অসুবিধা হচ্ছে আমাদের আগামী দিনের টার্গেট আরও বেশি। আমাদের দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মসংস্থান করতে হলে ৭-৮ শতাংশ হারে ক্রমাগতভাবে উন্নতি করতে হবে। তার জন্য প্রস্তুতি দরকার। বার বার যদি টেম্পো নষ্ট হয় তাহলে ইপ্সিত হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। আরও কথা আছে। আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। উন্নতি ঘটে ঠিকই। কিন্তু মাঝে মাঝে বন্যা, খরা এবং আইলা ইত্যাদি এসে আমাদের পিছিয়ে দিয়ে যায়। এ কারণেই আরও বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঘটা দরকার। কিন্তু তা হচ্ছে না।
যে উদ্বেগের বিষয়গুলো আলোচনা করলাম এ সম্বন্ধে সরকার এবং অর্থমন্ত্রী সজাগ। এ বিষয়গুলো নতুন কিছু নয়। আশা করব সরকার এসব ক্ষেত্রে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নেবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমরা কথা বেশি বলছি, কাজ হচ্ছে কম। জায়গায় জায়গায় গিট্টু লাগছে। এই যেমন পিপিপি। এই যেমন ব্যবসায়ীদের অনুৎসাহ, ব্যাংকারদের অসহযোগিতা। এ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী নিজেই বলছেন। যেমন বাজার নিয়ন্ত্রণ, যার সম্পর্কে অনেক মন্ত্রী বলছেন। এসব পরিস্থিতি মোটেই কাম্য নয়। সরকারের উচিত আরও সিরিয়াসলি জিনিসগুলো নিয়ে ভাবা।

লেখক : অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার
Email : ranadebnath@msn.com

No comments

Powered by Blogger.