যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই, রায়ও কার্যকর হবে ॥ হরতালে মানুষ পুড়িয়ে বিচার বন্ধ করা যাবে না- পঞ্চগড়ের ইতিহাসে বৃহত্তম জনসভায় নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা by এ রহমান মুকুল

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরেকবার নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি অনুরোধ করেন। লাখো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ২০০৮-এর নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলে আমরা আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি।
আপনারা আরেকবার নৌকায় ভোট দিন। আমরা আপনাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের কল্যাণে কাজ করে, মানুষের জন্য কাজ করে। আমার সরকারের আমলে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর উন্নত করা হয়েছে, যেখানে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আবার বাণিজ্য শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ২শ’ ৬৭ কিলোমিটার পল্লী বিদ্যুত লাইন স্থাপন করা হয়েছে। আপনারা জানেন আমরা সরকারে আসার পর সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। এই পঞ্চগড়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হরতালে মানুষ পুড়িয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা যাবে না। এই বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই, হবে। তিনি বলেন, কমিউনিটি হেলথ সেন্টার করে দেয়া হয়েছে, সেখানে মা-বোনেরা ঘরে বসে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, ’৯৬ সালে সরকারে থাকার সময় কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমার মা-বোন ঘরে বসে চিকিৎসাসেবা পাক বিএনপি তা চায় না। আমি আবার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে দিয়েছি। তিনি বলেন, এই পঞ্চগড়ে অতীতে কোন চা বাগান ছিল না। গত সরকারের আমলে প্রথম আমরা এখানে চা বাগান স্থাপন করি। ফলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পঞ্চগড়ের চা এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র করেছি, সেখানে ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত করার কথা ছিল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বেলা সাড়ে এগারোটায় দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরে ময়নামতিচরে আয়োজিত স্কাউটিংয়ের সবচেয়ে বড় আসর দশম জাতীয় রোভার মুট ও পঞ্চম জাতীয় কমডেকার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। সেখানে দেবীগঞ্জ এনএন সরকারী হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত স্কাউটস মহাসমাবেশটিতেও স্কাউটস, কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ ছাড়াও অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে মাঠের চারপাশে হাজার হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনেন। সেখানকার স্কাউটস সমাবেশটি জনসভায় রূপান্তরিত হয়। স্কাউটস সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী দেবীগঞ্জকে পৌরসভা করার ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠান শেষে দুপুর দেড়টায় প্রধানমন্ত্রী সড়কপথে পঞ্চগড়ে আসেন। এরপর তিনি ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত ১০০ শয্যার পঞ্চগড় মকবুলার রহমান ডায়াবেটিক সমিতি হাসপাতালের উদ্বোধন করেন।
পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জনসভাস্থলে প্রধানমন্ত্রীর পৌঁছার আগে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য। যেন নারী-পুরুষের মেলা বসেছিল। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণী ও মহিলাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। চিনিকলের এই মাঠটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের ওপরও মানুষের ভিড় জমে যায়। চিনিকল মাঠে জায়গা না হওয়ায় ওই এলাকার আশপাশের বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে, বিভিন্ন গাছের ডালে উঠে মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শোনেন। জনসভায় আগতদের মতে, পঞ্চগড়ে অতীতে এত বড় সমাবেশ আর হয়নি। গোটা জেলার গ্রামগঞ্জ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও হাজার হাজার মানুষ জনসভায় যোগ দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন তাঁদের প্রিয় নেত্রীর বক্তৃতা শোনার জন্য। মিছিলের তোড়ে পুরো শহরই যেন থমকে দাঁড়ায়। যেদিকে চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। পঞ্চগড়বাসী অনেকদিন পর দেখল এই জনসমুদ্র।
মুহুর্মুহু করতালি আর জয়বাংলা সেøাগানের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বেলা ২টা ৫৭ মিনিটে জনসভাস্থলে পৌঁছেন। নৌকার আদলে তৈরি বিশাল সুসজ্জিত মঞ্চের পাশে স্থাপিত ১শ’ ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৩.১০ কিলোমিটার পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া জাতীয় মহাসড়ক, ৮৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বোদা-দেবীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক, ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পঞ্চগড় পাওয়ার গ্রিড স্টেশন এবং ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন এবং ৮শ’ ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে পঞ্চগড়-পার্বতীপুর ১৫০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইনের পঞ্চগড় অংশের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। এরপর মঞ্চে উঠেই প্রধানমন্ত্রী উপচেপড়া জনসমুদ্রে হাত নেড়ে অভিনন্দনের জবাব দেন।
দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে ধাবিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্যই আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত আত্মনির্ভরশীল মধ্যমআয়ের দেশে পরিণত করব। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান তাঁর বক্তব্যে পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারী কলেজে মার্স্টাস কোর্স ও পঞ্চগড় সরকারী মহিলা কলেজে অনার্স কোর্স চালুর দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারী কলেজে মার্স্টাস কোর্স ও পঞ্চগড় সরকারী মহিলা কলেজে অনার্স কোর্স চালুর ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের বিরোধীদলীয় নেতা চান না ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করুক। কারন তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সেই ম্যাট্রিক পরীক্ষায় মাত্র উর্দু, অঙ্ক আর বাংলা তিন সাবজেক্টে পাস আর বাকি সব ফেল। এ সময় পুরো জনসভাস্থলে হাসির রোল ওঠে।
দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যদি প্রয়োজন হয় বাবার মতো বুকের রক্ত দিয়ে সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শোক গাথা বুকে নিয়েও শুধু দেশের মানুষের সেবা করার জন্য আমার রাজনীতি। তাই আরেকটিবার নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে দেশ সেবার সুযোগ দিন।
লাখো মানুষের অংশগ্রহণে আওয়ামী লীগের জনসভায় তীব্র জনস্রোতে কয়েক ঘণ্টার জন্য যেন থমকে গিয়েছিল ছোট্ট এই জেলা শহরটি। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর চার বছরের মাথায় এবং দীর্ঘ একযুগ পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম এই সফরকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল এই জেলার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে। অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল থাকলেও এত ব্যাপক সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ঘটিয়ে বেশ ভালই সাংগঠনিক শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছে স্থানীয় সাংসদসহ জেলার নেতারা। নির্বাচনী বছরের শুরুতেই ২০০৮ সালের ভোট বিপ্লবের মতো নৌকা তথা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষে আবারও জনসমর্থন প্রত্যক্ষ করল পঞ্চগড়বাসী। বাঁধভাঙ্গা মানুষের জনস্রোতে জামায়াত-শিবিরের ডাকা দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দেবীগঞ্জের স্কাউটস সমাবেশ ও পঞ্চগড় চিনিকল মাঠের জনসভার কোনটাতেই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। স্বাধীনতাবিরোধী এই চক্রের হরতালকে পঞ্চগড়বাসী প্রত্যাখ্যান করে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে নেচে-গেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচীগুলোতে অংশগ্রহণ করে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন সামনে রেখে এক অন্য রকমভাবে সেজেছিল পঞ্চগড় শহর। যেন নববধূর সাজে সেজেছে উত্তর জনপথের সীমান্তঘেঁষা ছোট্ট এই জেলা শহরটি। পঞ্চগড় সার্কিট হাউস থেকে চিনিকল মাঠের জনসভাস্থল পর্যন্ত পথে পথে অসংখ্য তোরণ আর বিভিন্ন নেতার ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টানিয়ে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানো হয়। চৌরঙ্গী মোড় আর শেরেবাংলা পার্কটিকে সাজানো হয়েছে পাথর আর ফুল দিয়ে দৃষ্টিনন্দন রূপে। দেবীগঞ্জ-পঞ্চগড় মহাসড়কের পথে পথে ছিল প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা সংবলিত অসংখ্য তোরণ আর ডিজিটাল ব্যানার। প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখার জন্য মহাসড়কের দু’ধারে দাঁড়িয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে এসব দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকে অভিনন্দন জানান।
পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে দুপুর ১টা থেকেই আনুষ্ঠানিক সভাবেশ শুরু হয়। পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপির সভাপতিত্বে জনসভায় সংরিক্ষত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা আকতার হীরা, পঞ্চগড়-১ আসনের সাংসদ মজাহারুল হক প্রধান, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহামুদ চৌধুরী এমপি, এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী এমপি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোতাহার হোসেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল হানিফ, পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায়সহ জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের চার বছরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, আমরা যে নতুন শিক্ষা নীতিমালা নিয়েছি, সেই শিক্ষা নীতিমালায় ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি। পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা এবং ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। যাতে করে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখেই কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। তিনি বলেন, আমার সরকারের আমলে বেশিসংখ্যক যাত্রী হজ করতে যাচ্ছে। যেখানে বিএনপি সরকারের আমলে মাত্র ৪০ হাজার হাজী হজ করতে যেত এখন তা বৃদ্ধি করে ১ লাখ ১০ হাজার হাজীর হজের ব্যবস্থা আমরা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠনের পর দেশের প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়ন করেছি। ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই তখন জিনিসপত্রের দাম ছিল আকাশচুম্বী। আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে এসেছি। আমরা কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, আইনশৃঙ্খলা, পররাষ্ট্রসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি খাতে ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছি। আমরা সুষম উন্নয়নের নীতিতে বিশ্বাসী। আমরা সারাদেশে এ নীতি বাস্তবায়ন করছি।
তিনি বলেন, দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দারিদ্র্যের হার কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। ৫ কোটি মানুষ দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। মঙ্গার দেশ হিসেবে পরিচিত উত্তরবঙ্গে এখন কোন মঙ্গা নেই। আমরা দেশ থেকে জঙ্গীবাদ বিতাড়িত করেছি। এখন আর কোন বাংলাভাই নেই। মানুষ এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারছে।
আমরা বিদ্যুত উৎপাদন ২০০১ সালে ৪৩০০ মেগাওয়াট রেখে গিয়েছিলাম। এবার সরকারে পেলাম ৩২০০ মেগাওয়াট। গত চার বছরে সরবরাহ প্রায় ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। উৎপাদন ক্ষমতা ৮৫২৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক মেগাওয়াট বিদ্যুতও উৎপাদন করেনি। দৈনিক প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের ওপর।
আমরা চলতি বছর দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে ২৭ কোটি বই বিতরণ করেছি। প্রতিটি ইউনিয়নে ইন্টারনেট সার্ভিস ও তথ্য সেবাকেন্দ্র চালু করেছি। এগুলো থেকে প্রতিমাসে ৪০ লাখ গ্রামীণ মানুষ ই-সেবা নিচ্ছে। ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা সাতগুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৪ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। ৩জি মোবাইল ফোন চালু হয়েছে। গ্রাহকরা ভিডিও কল করাসহ উন্নত ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র জয়ের ফলে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ভূয়ষী প্রশংসা করছে।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আমার উত্থাপিত ‘জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন মডেল’ জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্র সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করেছে। ২০১১ সালে আমাদের উত্থাপিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রস্তাবটিও পাস হয়েছে। আমার কন্যা সায়মা হোসেন পুতুলের উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী ‘অটিজম সচেতনতা’ সৃষ্টির লক্ষ্যে আরেকটি প্রস্তাব গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করি। সেটিও গত মাসে সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য এক বিরল সম্মান বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্কাউটস সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন ॥ দশম জাতীয় রোভার মুট ও পঞ্চম জাতীয় কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্পের (কমডেকা) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্কাউট আন্দোলন শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি পরিপূর্ণভাবে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার আন্দোলন। এ আন্দোলন বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। এর মাধ্যমে ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েরা ধাপে ধাপে আত্মনির্ভরশীল এবং সেবার ব্রত নিয়ে বেড়ে ওঠে। প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে প্রায়োগিক শিক্ষা গ্রহণ করে । দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সমাজ উন্নয়ন ক্যাম্প বা কমডেকার আয়োজনের ফলে স্থানীয় জনসাধারণ উপকৃত হচ্ছে। সমাজ অগ্রসর হচ্ছে। অংশগ্রহণকারীরাও দেশের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় পরিবেশ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, দেবীগঞ্জের করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে ময়নামতিচরের এ বিশাল জায়গাটিও আমরা বাংলাদেশ স্কাউটসকে বরাদ্দ দিয়েছি। স্কাউটের কার্যক্রম সম্প্রসারণে এ স্থানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা স্কাউটিংয়ের উন্নয়নে ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্প’ এবং ‘হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট থ্রু স্কাউটিং প্রকল্প’ চালু করেছি। দেশে ২৪তম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল স্কাউট কনফারেন্স ২০১২ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে আরও দুটি বিশেষ প্রোগ্রাম - স্কাউট লিডারদের জন্য কোর্স ফর লিডার ট্রেনার্স ও রোভারদের জন্য ইয়ুথ ফোরাম শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, এবারের মুট ও কমডেকার প্রতিপাদ্য ‘শান্তি ও উন্নয়নে স্কাউটিং’ যথেষ্ট সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১০ সালে বাংলাদেশ স্কাউটস্-এ ৪র্থ বার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ পরিকল্পনার আওতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, জেলা ও উপজেলায় স্কাউট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় পর্যায়ে এই মুট ও কমডেকার আয়োজন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী দশম জাতীয় রোভার মুট ও পঞ্চম জাতীয় কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্পের (কমডেকা) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুট সাংগঠনিক কমিটির সবাপতি ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব আবু আলম মোঃ শহিদ খান ও বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার আবুল কালাম আজাদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সরকার বাংলাদেশ স্কাউটসের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছি। মৌচাক জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। স্কাউট কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার জন্য গোপালগঞ্জ, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, যশোর ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও জেলায় জায়গা বরাদ্দ দিয়েছি।
স্কাউটস সমাবেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী আবুল হাছান মাহমুদ আলী, পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহামুদ চৌধুরী এমপি, এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী এমপি, এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, মজাহারুল হক প্রধান এমপি, ইকবালুর রহীম এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ফরিদা আখতার হীরা, বাংলাদেশ আওয়াম লীগ নেতা কামরুল হাসান খোকনসহ স্কাউটসের উর্ধতন কর্মকর্তারা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.