সন্ত্রাসী হরতালে হত ৫

 যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটককৃতদের মুক্তির দাবি ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে রাজধানীতে সমাবেশ করতে না দেয়ার অজুহাতে ডাকা বৃহস্পতিবার হরতালেও সন্ত্রাস চালিয়েছে জামায়াত-শিবির।
রাজধানীতে ঢিলেঢালা হরতাল পালিত হলেও ঢাকার বাইরে জামায়াত-শিবির ব্যাপক তা-ব চালায়। হরতরালে রাজধানীর বাইরে সংঘর্ষে পুলিশসহ পাঁচ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ায় নিহত হয়েছে তিন জন। নিহতদের মধ্যে একজন শিবির নেতা, তার নাম মোঃ রুহানী (২০)। সে শিবিরের সরকারী আযিযুল হক কলেজ শাখার সভাপতি। নিহত ব্যবসায়ীর নাম মিজানুর রহমান (৪৮)। তিনি বগুড়া সদরের সাবগ্রাম এলাকায় হ্যাচারি ব্যবসা করেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লায়। রাতে নিহত তৃতীয় ব্যক্তির নাম আব্দুল্লাহ। হরতাল চলাকালে বগুড়ায় জামায়াত-শিবির কমপক্ষে ৫শ’ ককটেল ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। বৃহস্পতিবার রাতে শিবিরের ক্যাডাররা শহরের জহুরুলনগর এলাকায় ছাত্রলীগের একটি ছাত্রাবাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিভাতে গেলে গাড়ির ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।
পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার সময় শিবিরের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণ করে ও হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ ও র‌্যাব গুলি ছুড়লে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এদের মধ্যে একজন পরে মারা যায়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। পরিস্থিতির অবনতিতে প্রশাসন থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) তলব করা হয়েছে। বিজিবি বগুড়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। জামায়াত আজ শনিবার বগুড়ায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। যশোরের মনিরামপুরে শিবির-পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালে জহুরুল ইসলাম (৫৬) নামে এক পুলিশ কনস্টেবল প্রাণ হারান। সংঘর্ষের সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ফেনীতে জামায়াত-শিবির কর্মীদের ছোড়া পাথরে আঘাতে সিএনজি বেবিট্যাক্সি চালক ইমন (২৪) গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে ফেনী সদর হাসপাতালে নেয়া হলে দুপুরে তিনি মারা যান। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় হরতালকারীরা অন্তত ৪/৫টি যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। বেশ কিছু জায়গায় হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে হরতালকারীদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ১০/১২ জন আহত হয়েছেন। ঢাকা থেকে কোন দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। তবে লঞ্চ ও ট্রেনের যাতায়াত ছিল স্বাভাবিক। রাজধানীতে কড়া নিরাপত্তা থাকায় জামায়াত-শিবির তেমন তা-ব চালাতে পারেনি। পুলিশ জামায়াত-শিবিরের ২২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। হরতালে লক্ষ্মীপুরে ১৮ জন আহত হয়েছে এবং রায়পুরে ১৫ জন, যশোরে ২ জন, যশোরের মনিরামপুরে ৭ পুলিশসহ ১৫ জন, বগুড়ায় পুলিশসহ ৫৩ জন, নাটোরে ৩ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ১২ জন, ঝিনাইদহে ৩ জন, কিশোরগঞ্জে ২ জন, রাজবাড়ীতে ৩ জন, সিরাজগঞ্জে ১ জন, রূপগঞ্জে ২ জন, বরিশালে ৭ জন, বাগেরহাটে ৫ জন আহত হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের।
স্টাফ রিপোর্টার জানান, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে রাজধানীতে ঢিলেঢালাভাবে জামায়াতের আধবেলা হরতাল পালিত হয়েছে। বুধবার রাত থেকেই তা-ব শুরু করে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। তারা যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় আধাবেলা হরতাল পালন করে জামায়াত-শিবির। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়া সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আশপাশের গলিতে অবস্থান নিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাসে চোরাগোপ্তা হামলা চালায় হরতালকারীরা। বাসটি ভাংচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ বাধা দিলে হামলাকারীরা ২/৩টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ কয়েকজনকে এ সময় আটক করে। খানিক পরেই মিরপুরের শেওড়াপাড়া তালতলা মোড়ে একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী আহত হন। পুলিশ দ্রুত হামলাকারীদের ওপর চড়াও হলে হরতালকারীরা ৪/৫টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুত বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পালিয়ে যায়। ডেমরার সানারপাড়, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, পল্টন, বাংলামোটরমোড়, ফার্মগেট, মহাখালী টিবি গেটেও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা মিছিল করে। এ সময় পুলিশের বাধার মুখে তারা ব্যাপক তা-ব চালাতে পারেনি। হামলাকারী জুরাইন এলাকায় একটি সরকারী বিআরটিসি বাসে ভাংচুর চালায়। ভাংচুর শেষে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চোরাগোপ্তা হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।
বগুড়া ॥ দুপুরের পর শহরের কয়েকটি এলাকায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটা ভাংচুর করা হয়েছে। বিকালে শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এদিকে বিকেলে জামায়াত-শিবির শহরের সাতমাথা এলাকা চারদিক থেকে লাঠিসোটা ও রড নিয়ে মিছিল করে ঘিরে ফেলে। এ সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়লে মিছিল থেকে পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশ টিয়ারশেল ও রবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শিবির নেতাকর্মী ও ক্যাডাররা তাঁদের কাঁধে থাকা ব্যাগ থেকে প্রতি সেকেন্ডে মুহুর্মুহু বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে এবং ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। অন্তত ৫শ’ ককটেল ও বোমা বিস্ফোরিত হয়। সাতমাথা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া শিবির-পুলিশ বন্দুকযুদ্ধ রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। শিবিররা সন্ত্রাসী তা-ব শুরু করলে পথচারীরা দিগি¦দিক ছুটতে থাকে। এ সময় কম-বেশি অন্তত ৫০ জন ও একজন পুলিশ আহত হয়। সাতমাথাসহ গোটা শহরে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়।
সকাল পৌনে ৮টার দিকে শিবির উপশহর এলাকায় গাড়ি ভাংচুর শুরু করে। পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে ক্যাডাররা হামলা চালায়। পুলিশ ২ শিবির ক্যাডারকে আটক করার চেষ্টা করলে শিবির তাদের ছিনিয়ে নেয় ও পুলিশের একটি শটগান কেড়ে নেয়। পরে তা উদ্ধার হয়। পুলিশ দাবি করেছে তাদের কোন অস্ত্র ওই সময় খোয়া যায়নি শুধু ১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিবির কর্মীদের সরিয়ে দেয়। অপরদিকে শহরের জামিল নগর এলাকায় শিবির ক্যাডাররা কয়েক দফায় লাঠিসোটা ও রড নিয়ে পুলিশের সামনেই মিছিল করে। তারা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। পিকেটাররা কয়েকটি স্থানে ১০/১৫টি যানবাহন ভাংচুর করে।
দুপুর বারোটার দিকে শিবির কর্মীরা শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় সরকারী মুজিবর রহমান মহিলা কলেজের সামনে পিকেটিং শুরু করে। ছাত্রলীগের সঙ্গে শিবিরের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া বাঁধে। এ সময় শিবিরের ৩ নেতাকর্মী আহত হলে তাঁদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তির পর ছাত্র শিবির নেতা রুহানী মারা যান। একই সময় বগুড়া সদরের সাবগ্রাম এলাকায় শিবিরের পিকেটিং নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। ১০/১৫ জনের একদল যুবক একটি দোকানে হামলা চালায়। এ সময় ২ জন আহত হয়। তাঁদের এর মধ্যে হ্যাচারি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানকে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তির পর মারা যান। পুলিশ জানিয়েছে মিজানুর মারা যাওয়ার ঘটনাটি হরতালের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জামায়াত শহর শাখা ওই ঘটনার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে মিজানুরকে নিজেদের নেতা বলে দাবি করেছে। তবে এলাকার লোকজন জানায়, মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে হ্যাচারি ব্যবসা করেন। এই ঘটনার পর গোটা শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিবির নেতাকর্মীরা শজিমেক হাসপাতালে নিহতদের লাশ নেয়ার জন্য গেলে পুলিশ পোস্ট মর্টেম ছাড়া লাশ দিতে না চাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর পরই শহরের ঠনঠনিয়ায় শিবিরের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া হয়।
যশোর ॥ যশোরের মনিরামপুরে শিবির-পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালে জহুরুল ইসলাম (৫৬) নামে এক পুলিশ কনস্টেবল মারা গেছেন। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাস চন্দ্র সাহা জানান, সকালে কনস্টেবল জহুরুল মনিরামপুরে হরতালের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় শিবিরকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। ওই সময় জহুরুল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আনা হয়। তবে তার আগেই তিনি মারা যান। এদিকে মনিরামপুরে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জহুরুলের গায়ে শিবিরের ছোড়া ইটপাটকেল লাগে। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সংঘর্ষ চলাকালে জামায়াত-শিবির কর্মীরা ১৫ থেকে ২০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪ জনকে আটক করেছে। সংঘর্ষ চলাকালে মারা যাওয়া কনস্টেবল জহুরুল ইসলামের বাড়ি নড়াইল সদরের দিঘলিয়া গ্রামে। এ ঘটনায় আহত অন্য পুলিশ সদস্যরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) শংকর, এসআই জিয়ারুল, কনস্টেবল নওয়াব আলী ও মোসলেম উদ্দিনসহ আরও তিনজন।
সকাল ৭টার দিকে মনিরামপুরের গোহাটা মোড়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা জড়ো হয়ে মিছিল বের করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা দেয়। এতে শিবির কর্মীরা পুলিশের ওপর বেপরোয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর আশপাশে থাকা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা মিছিলকারীদের ধাওয়া করলে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ পর্যায়ে সংঘর্ষ গোহাটা মোড় থেকে গাংড়া মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় জামায়াত-শিবির কর্মীরা পুলিশ ও ছাত্রলীগকে লক্ষ্য করে অন্তত ১৫ থেকে ২০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪ জামায়াত কর্মীকে আটক করে।
ফেনী ॥ জামায়াতের ডাকা হরতালের সময় ফেনীতে জামায়াত-শিবিরের পিকেটারদের ছোড়া পাথরে আহত সিএনজি বেবিট্যাক্সি চালক ইমন (২৪) ফেনী সদর হাসপাতালে মারা গেছে। সকাল ৯টার দিকে কুমিল্লা রোডের খাজুরিয়া রাস্তার মাথায় হরতাল সমর্থক পিকেটাররা সিএনজি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। মাথায় ইটের আঘাত পেয়ে ইমন লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন ইমনকে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে ইমন মারা যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় কর্মসূচী অনুযায়ী হরতালকালে কসবা উপজেলা ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা টায়ার পুড়িয়ে ও রাস্তায় ইট বিছিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে হরতাল পালন করে। এ সময় পুলিশ বাঁধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১২ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
লক্ষ্মীপুর ॥ লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের বামনীর কাজীরদীঘির পাড় বাজারে শিবির ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ সময় একটি হোটেলে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। শহরের প্রধান বাস টার্মিনালে ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিবির নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে খ- খ- লাঠি মিছিল করেছে।
ঠাকুরগাঁও ॥ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় অতর্কিতভাবে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-দিনাজপুর মহাসড়কে ৩টি স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। একই সময়ে বড় খোঁচাবাড়িহাট এলাকায় চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে ৫টি নৈশ্যকোচ ভাংচুর করে শিবির কর্মীরা।
জয়পুরহাট ॥ জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সময় সকাল ৭টায় জয়পুরহাটের পুরানাপৈল এ ১৫/২০ জনের জামায়াতের কর্মী দল ট্রাকটর ভাংচুর শুরু করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় তারা মারমুখী হলে ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস ছোড়ে।
খুলনা ॥ খুলনায় ঢিলেঢালা ও পিকেটারহীন অবস্থায় পালিত হয়। তবে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা পুলিশ প্রহরায় মিছিল করেছে। সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর তারেরপুকুর এলাকার জামায়াত অফিসের সামনে থেকে তারা মিছিলের আগে ও পরে পুলিশ বেষ্টিত অবস্থায় মিছিল বের করে।
নরসিংদী ॥ সকালে একদল শিবির কর্মী মোটরসাইকেল যোগে এসে হাওড় বিলাসের গাড়িটিতে আগুন দিয়ে পালানোর সময় মাহফুজুর রহমান নাইমকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি শিবপুর উপজেলার দুলালপুর গ্রামে।
চট্টগ্রাম ॥ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্ন কিছু চোরাগোপ্তা তৎপরতা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ও ঢিলেঢালাভাবে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালে বিএনপি সমর্থন দিলেও সড়কে তাদের কাউকে দেখা যায়নি। নগরীর কয়েকটি স্পটে ঝটিকা মিছিল ছাড়া পিকেটিং দেখা যায়নি জামায়াত-শিবিরেরও। জনজীবনে তেমন প্রভাব ফেলেনি । চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে পণ্য ওঠানামা ছিল স্বাভাবিক। তবে সকালে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি বন্ধ ছিল। বুধবার রাতে নগরীর সিইপিজেড ও কয়েকটি স্পটে ঝটিকা মিছিল ও গাড়ি ভাংচুরে এ আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
কক্সবাজার ॥ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পিকেটাররা সিএনজি, রিকসা, টমটমসহ ১৫টি ছোট যানবাহন ভাংচুর করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে শহরে। এ সময় পুলিশ সদর উপজেলা গেট এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ১২ পিকেটারকে আটক করেছে। এছাড়া হরতাল সমর্থকরা পিকেটিংকালে কক্সবাজার পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়।
দিনাজপুর ॥ নাশকতামূলক কর্মকা- সৃষ্টি করতে মিছিল করার প্রস্তুতি গ্রহণের অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ৩ জনসহ প্রায় ২০ জন জামায়াত-শিবির ক্যাডার শহরের হাউজিং মোড়ে সমাবেত হলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। আটক ৩ জামায়াত-শিবির ক্যাডার সফিকুল ইসলাম ওরফে শফি (২২), মোকলেসুর রহমান (২৫) ও শামীম হোসেনকে (২৪) বিকেলে সদর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
পিরোজপুর ॥ জামায়াত-ছাত্রশিবিরের হরতাল পালিত হয়নি। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিল। শহরে পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে। নাশকতার আশঙ্কায় পুলিশ শিবিরকর্মী ইস্রাফিল, মিজানুর রহমান, মাসুম বিল্লাহ, জিয়ানগর উপজেলা থেকে যুব দল কর্মী যুবদল কর্মী সাইফুল, সোহাগ ও নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতি বেলাল ও ভা-ারিয়া উপজেলা থেকে ২ কর্মী সহ ৮ জনকে আটক করেছে।
বরিশাল ॥ হরতালে বরিশালের জীবনযাত্রায় কোন প্রভাব পড়েনি। দুই একটি জায়গায় জামায়েত মিছিল বের করার চেষ্টা করলেও পুলিশের বাধায় তা করতে পারেনি। দিনের শুরুতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়সহ নগরীর পাঁচটি স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে এবং হাজার হাজার ইট ফেলে একযোগে পিকেটিং করে হরতাল সমর্থক জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা হরতালের পক্ষে সেøাগান দেয়।
নগরীর কাশিপুর, বাঘিয়া, সিএ্যান্ডবি রোড টেক্সটাইল এলাকা, সাগরদী ও রূপাতলী এসব পিকেটিং হয়েছে। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুরে মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহিনের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে আইনজীবীদের নিয়ে আদালত চত্বর থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি আদালত চত্বর অতিক্রমের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
সিলেট ॥ সিলেটে ঝটিকা মিছিল ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া আর ভাংচুরের মধ্য দিয়ে জামায়াত-শিবিরের হরতাল পালিত হয়েছে। সকালে নগরীর মদিনা মার্কেটে একটি ট্রাক ভাংচুর করেছে শিবির। টান টান উত্তেজনার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশের চেষ্টা করছে জামায়াত-শিবির।
হরতাল চলাকালে সিলেট মহানগরীতে যান চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। স্কুল-কলেজে ক্লাস হয়নি। নগরীর কদমতলী ও কুমাওগাঁও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দূর পাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। তবে ট্রেন ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
নাটোর ॥ জেলায় তিন শিবিরকর্মীকে আটক করে পুলিশ। হরতালকারীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে যানচলাচলে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে।
গোপালগঞ্জ ॥ গোপালগঞ্জে জামায়াতের তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোরে মুকসুদপুর ও টুঙ্গীপাড়া উপজেলা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো, মুকসুদপুরের দিগনগর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির একরামুজ্জামান আকরাম (৩৭) এবং টুঙ্গীপাড়ার শ্রীরামকান্দি গ্রামের জালাল উদ্দিন (৬৫) ও গিমাডাঙ্গা গ্রামের খালিদ বিশ্বাস (৩২)।
কিশোরগঞ্জ ॥ শিবির কিশোরগঞ্জ উত্তর শাখার সভাপতি খালেক হাসান জুম্মন (২৮) এবং হয়বতনগর মাদ্রাসার শিবির সভাপতি ও মাদ্রাসা শাখার জেলা সমন্বয়ক নূরুল আলমকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতাল চলাকালে শহরের জেলা সরণি মোড়ে পিকেটিং করা ও নগুয়া মোড়ে একটি এ্যাম্বুলেন্সে আগুন ধরানোর প্রস্তুতিকালে পুলিশ দুটি মোটরসাইকেলসহ তাদের হাতেনাতে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ নগুয়া শিবিরের মেসে অভিযান চালিয়ে ব্যাগভর্তি রেললাইনের পাথর, লাঠি, টায়ার, বিভিন্ন প্রকারের ব্যানার, স্টিকার ও বিপুল পরিমাণের সাংগঠনিক বইপুস্তক উদ্ধার করে।
ঝিনাইদহ ॥ হরতালে নাশকতার আশঙ্কায় ঝিনাইদহে ৩ জামায়াত নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে মহেশপুর থেকে দু’জন ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলা থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রাজশাহী ॥ প্রায় তিন বছর পর পুলিশ পাহারায় রাজশাহীতে প্রকাশ্যে মিছিল-সমাবেশ করেছে জামায়াত-শিবির। বৃহস্পতিবার হরতাল চলাকালে বেলা ১১টার দিকে হরতালের সমর্থনে তারা নগরীতে এ মিছিল-সমাবেশ করে। উচ্চ পর্যায় থেকে জামায়াত-শিবিরকে শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই কারণে রাজশাহীতে শিবিরকে মিছিলে কোন বাধা দেয়া হয়নি।
নোয়াখালীতে গাড়ি ভাংচুর করে হরতালকারীরা। এ সময় ৪ জামায়াত-শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালে নীলফামারিতে জামায়াত-শিবিরের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যশোরে ঢিলেঢালা হরতাল পালিত হয়েছে। পিকেটিংয়ের সময় মসজিদের ঈমামসহ ২ জামায়াত কর্মীকে আটক করা হয়েছে। হরতালে খাগড়াছড়িতে জীবনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক। সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ে পিকেটাররা একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পুলিশ এক পিকেটারকে আটক করে। রূপগঞ্জে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত হয়েছে। তবে হরতালবিরোধী মিছিল করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। হরতালের সময় এক জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। পটুয়াখালী ও আমতলীতে হরতাল পালিত হয়নি। জীবনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক। নরসিংদীতে একটি পরিত্যক্ত গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে হরতালকারীরা। পরে পুলিশ এক শিবির নেতাকে গ্রেফতার করে। সুনামগঞ্জ, রংপুর ও নড়াইলে ঢিলেঢালা হরতাল পালিত হয়। লালমনিরহাটে হরতাল পালিত হয়নি। বাস চলাচল ছিল স্বাভাবিক। জামায়াত-শিবিরে হরতালসহ নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ভালুকা, পটিয়া, নড়াইল ও টঙ্গীতে আওয়ামী লীগ মিছিল বের করলে হারতাল আহ্বানকারীদের দেখা মেলেনি। শাবিতে হরতালবিরোধী মিছিল-সমাবেশ করেছে।
এছাড়া যেসব জেলায় হরতাল হয়নি সেগুলো হচ্ছে মাগুরা, কুড়িগ্রাম, রাজবাড়ি, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, বোয়ালমারী, হবিগঞ্জ, বান্দারবান ও নেত্রকোনা।

No comments

Powered by Blogger.