অধিনায়কত্ব কী বিষম ভারী! by আরিফুল ইসলাম

বাংলাদেশে এসেছেন মাত্র দিন তিনেক। বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেললেন পরশুই। সেই চামারা কাপুগেদেরা কাল টস করলেন দুরন্ত রাজশাহীর হয়ে!
মাঠের ক্রিকেটে চমক খুব একটা নেই।
তবে বিপিএলের টানা দুই ম্যাচে চমক দিল টস। মাহমুদউল্লাহ নন, পরশুর শেষ ম্যাচে চিটাগং কিংসের হয়ে টস করলেন ব্রেন্ডন টেলর। কালকের প্রথম ম্যাচে জহুরুল ইসলাম নন, দুরন্ত রাজশাহীর হয়ে টস করলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যান কাপুগেদেরা। নেপথ্য কারণ একই—চাপের কারণে সরে দাঁড়ানো। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নেতৃত্বের চাপটা সবচেয়ে কম থাকার কথা। কিন্তু জাতীয় দলের সহ-অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও দীর্ঘদিন ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা জহুরুল সরে দাঁড়িয়েছেন নেতৃত্বের চাপ তাঁদের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে বলে!
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে জানানো হয়েছিল, এবার রাজশাহীর অধিনায়ক সাইমন ক্যাটিচ। তবে বিগ ব্যাশের কারণে ক্যাটিচের আসতে দেরি হবে বলে প্রথম দুই ম্যাচের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। মজার ব্যাপার হলো, ক্যাটিচ আসার পরও তৃতীয় ম্যাচ থেকে রাজশাহীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন জহুরুল। দুরন্ত রাজশাহীর স্বত্বাধিকারী মুশফিকুর রহমানের ব্যাখ্যাটাও বেশ মজার, ‘ক্যাটিচ যখন দেখল দল শুধু হারছে, তখন আর অধিনায়ক হতে রাজি হলো না।’ রাজশাহীর প্রথম দুই ম্যাচের একটিতে হার, একটিতে জয়। মুশফিকুর রহমানের দাবিটা তাই বিশ্বাস করা কঠিন। দল-সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের খবর, নেতৃত্বের জন্য বাড়তি টাকা চেয়েছিলেন ক্যাটিচ!
সত্যিটা যা-ই হোক, নিরুপায় হয়েই যে জহুরুলকে অধিনায়ক করেছিলেন, সেটা স্বীকার করছেন মুশফিকুর, ‘তামিম নেতৃত্ব চালিয়ে যেতে চাইল না, আমাকে এসে বলল ব্যাটিংয়ে মন দিতে পারছে না। জহুরুলও রাজি ছিল না, একরকম জোর করেই ওকে অধিনায়ক করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আর চালিয়ে যেতে চাইছে না। চাপ নাকি অনেক হয়ে যাচ্ছে, ব্যাটিং-কিপিংয়ে মন দিতে পারছে না।’
মাহমুদউল্লাহর ব্যাপারে চিটাগংয়ের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যাও এমনটাই, ‘চাপের কারণে সাময়িক বিরতি নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।’ কোচ খালেদ মাহমুদ এটাকে খুব বড় করে দেখতে নারাজ, ‘আসলে এমনটা হতেই পারে। রিয়াদ খুব ভালো পারফর্ম করতে পারছিল না। ওর মনে হচ্ছে চাপ বেশি পড়ে যাচ্ছে। এ কারণেই একটু বিরতি নিয়েছে। ভালো করতে শুরু করলে হয়তো আবার ক্যাপ্টেন হবে, এটা এমন কিছু নয়।’
এ ধরনের টুর্নামেন্টের মাঝামাঝি অধিনায়ক বদল আসলেই এমন কিছু নয়। কিন্তু চোখে লাগছে বদলের কারণটা—‘চাপ’। জাতীয় দলের সহ-অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নেতৃত্ব দেন আবাহনীর মতো ক্লাবকে। জহুরুল বাংলাদেশ ‘এ’ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রথম শ্রেণীর ও ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট খেলেছেন ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। এমন দুজনের কাছে একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের চাপ এমন অসহনীয় হয়ে ওঠা বিস্ময়কর নয় কি? পরশুর ম্যাচ শেষে জহুরুল ইসলামের কথাতেও মিশে ছিল বিভ্রান্তি, ‘অধিনায়কত্বটা একটু চাপ হয়ে যাচ্ছেই, ঠিক উপভোগ করতে পারছি না। তবে নিজের ব্যর্থতার পেছনে এটাকে অজুহাত দেখাব না। ব্যাটিংয়ে গিয়ে তো আর অধিনায়কত্ব তেমন প্রভাব ফেলে না।’
জহুরুলের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে এই বিশাল চাপের উৎস কোথায়! উৎস আসলে মাঠের বাইরে, উৎস ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোই। এত অর্থ খরচ করে দল গড়ার পর হারটাকে মেনে নিতে কষ্ট হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর। সরাসরি না হলেও পরোক্ষ চাপ সবচেয়ে বেশি এসে পড়ে অধিনায়কের ওপরই। চিটাগং কিংসের কোচ খালেদ মাহমুদ অবশ্য এটা মানতে চাইলেন না, ‘রিয়াদের ওপর আমরা কোনো চাপ দিইনি। জাতীয় দলের ভাইস ক্যাপ্টেন ও, ওর ওপর সবারই আস্থা ছিল, ও আছে।’ মানতে নারাজ রাজশাহীর স্বত্বাধিকারী মুশফিকুর রহমানও, ‘আমি দীর্ঘদিনের ক্রীড়া সংগঠক মানুষ। আমি জানি, অধিনায়ককে চাপ দিলে দল আরও খারাপ করতে পারে।’ কিন্তু দল-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, জয়-পরাজয়কে ‘স্পোর্টিংলি’ নেওয়া হয় না অনেক সময়ই। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকেরা ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট না হলেও অধিনায়ককে ক্রিকেটীয় সমালোচনা হজম করতে হয় নিয়মিতই, পরোক্ষে যা চাপ সৃষ্টি করেই। স্থানীয় ক্রিকেটারদের জন্য বিপিএলে অধিনায়কত্ব তাই বিষম ভারী।
কাল জহুরুলের ম্যাচজয়ী ইনিংসটা যেন এটারই প্রতীক। অধিনায়ক হিসেবে চার ম্যাচে করেছেন মোট ৫২। অধিনায়কত্ব ছেড়ে কাল অসাধারণ ইনিংসটি খেলে যেন বুঝিয়ে দিলেন, নেমে গেছে গুরুভার!

No comments

Powered by Blogger.