জোহানেসবার্গ টেস্ট- এবার লজ্জা পাকিস্তানের

প্রথম ইনিংসে গ্রায়েম স্মিথ পারেননি, ‘দোষ’ অবশ্যই পাকিস্তানের। দ্বিতীয় ইনিংসও স্মিথকে বঞ্চিত করতে পারত। তাঁর জন্য এটা স্মরণীয় টেস্ট। অধিনায়ক হিসেবে ১০০ ম্যাচে নেতৃত্ব আর কেউ দেয়নি।
সেঞ্চুরি করেই এই ‘সেঞ্চুরি’কে স্মরণীয় করে রাখা উচিত! কিন্তু প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানি বোলাররা অল্পতেই তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এরপর পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা এমন ব্যাটিং করলেন, স্মিথ আরেকবার ব্যাটিং পাবেন কি না, দেখা দিল সেই সংশয়! ২৫৩ রানে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েও দক্ষিণ আফ্রিকা পাকিস্তানকে ফলোঅন করানোর সুযোগ পেল। ডেল স্টেইনের তোপে টেস্ট ইতিহাসে নিজেদের সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জা গড়ে পাকিস্তান অলআউট ৪৯ রানে! ইনিংসটির আয়ু ছিল মাত্র ২৯ ওভার ১ বল! ২০১১ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এসে ৪৭ রানে অলআউটের লজ্জায় পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। গত মাসে কেপটাউনে ৪৫ রানে অলআউট হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এবার পাকিস্তান!
৯ ওভারের বেশি কেউই বল করেননি। বোলারদের ব্যাটারি তখনো চার্জে ভরপুর। একে রামে রক্ষে নেই তায় সুগ্রীব দোসর। স্টেইনের তোপই ঠিকমতো সামলাতে পারছিল না পাকিস্তান; ওদিকে ফিল্যান্ডার, মরকেল এমনকি ‘বুড়ো’ জ্যাক ক্যালিসের হাত থেকেও যেন ছুটছিল আগুনের গোলা। বোলাররা ছন্দে। এই পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত পাকিস্তানকে ফলোঅন না করানোর কোনো মানে হয় না। কিন্তু স্মিথ নিজেই আবার নেমে পড়লেন ব্যাট হাতে। সেঞ্চুরি ম্যাচে একটা সেঞ্চুরির স্বপ্ন যে এঁকে রেখেছেন, সেটা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। এগোচ্ছিলেনও সেই পথে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩৭তম টেস্ট ফিফটিটিকে ২৭তম সেঞ্চুরি বানাতে পারলেন না। আউট হয়ে গেলেন ৫২ রানে! আগে জানলে পাকিস্তানকে হয়তো ফলোঅনই করাতেন!
দ্বিতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ২০৭ রান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। লিড ৪১১ রানের।
উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ভয়ংকর প্রতিকূল এক কন্ডিশন। অথচ সেই কন্ডিশনে পাকিস্তান নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনি। খেলেছে একটাই প্রস্তুতি ম্যাচ। এই প্রস্তুতি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ফর্মে থাকা স্টেইন-মরকেলদের মুখোমুখি হওয়া যায় না। আগের দিন শেষ বিকেলে হাফিজ-চমকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাগে পাওয়ার যে আনন্দ খেলে গিয়েছিল মিসবাহর চোখমুখে, কাল সাতসকালেই সেই হাসি উবে গেছে কর্পূরের মতো। দিনের চতুর্থ ওভারের মধ্যেই তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। তিনজনই স্টেইনের শিকার।
১২ রানে ৩ উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলাতে চেয়েছিল আজহার ও মিসবাহর ব্যাট। চতুর্থ উইকেটে দুজনের ২৪ রানের জুটি। পাকিস্তানের পুরো ইনিংসে এর আগেও কিছু যেমন নেই, পরেও নেই। দুই অঙ্কের জুটি আর হয়নি। স্টেইনের শুরুর সেই ধাক্কা যেন ডমিনো ইফেক্টের কাজ করল। পাকিস্তানকে আর স্বস্তি দেননি ফিল্যান্ডার-ক্যালিস। এই দুজনও দুটি করে উইকেট তুলে নেওয়ায় ভয়াবহ অস্বস্তি নিয়ে মধ্যাহ্নভোজে যায় পাকিস্তান। ৪০ রানেই তখন তাদের ৭ উইকেট নেই!
লাঞ্চ খেয়ে পাকিস্তানের না হোক, স্টেইনের লাভ হয়েছে নিশ্চিত। লাঞ্চের আগে ৬ ওভারের স্পেলে ৮ রানে নেন ৩ উইকেট। লাঞ্চের পর ২ ওভার ১ বলে নেন আরও তিনটি। রান খরচ করেননি একটিও! সব মিলিয়ে স্টেইনের বোলিং বিশ্লেষণ হলো বাঁধিয়ে রাখার মতো: ৮.১-৬-৮-৬! সূত্র: ওয়েবসাইট, টেন ক্রিকেট।

No comments

Powered by Blogger.