বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর

বন্ধুরা, তোমরা বিজ্ঞানী দুই পাস্তুরের নাম নিশ্চয়ই শুনেছ ? তোমরা কি জান, বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের জলাতংক রোগের প্রতিষেধক বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করে চলেছে।
বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের জন্ম ১৮২২ সালে পূর্ব ফ্রান্সের একটি ছোট্ট গ্রামে। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন ডানপিটে স্বভাবের। পড়াশোনা বেশি ভাল লাগত না। ছবি অাঁকাই ছিল তাঁর নেশা। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারতেন না। পাস্তুরের বয়স যখন প্রায় দশ বছর তখন তিনি একবার মাঠে খেলতে খেলতে লৰ্য করলেন, নিকোল নামে এক চাষীকে কুকুরে কামড়েছে। নিকোল তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছে আর কুকুরে কামড়ানো জায়গা থেকে রক্তপাত হচ্ছে। অনেক লোক তাকে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। রক্তপাত বন্ধ করার জন্য অনেকে তাকে লোহার রড গরম করে ছেকা দেবার চেষ্টা করছে। আর নিকোল তারস্বরে চিৎকার করছে। তখনকার দিনে কাউকে কুকুরে কামড়ে দিলে সে জলাতংক রোগে আক্রানত্ম হয়ে মারা যেত। তখনকার সময় ছিল না কোন ওষুধ, ছিল না কোন প্রতিষেধক। এই ঘটনা ছোট্ট লুই পাস্তুরের মনে প্রভাব ফেলল। এর পর তিনি শিৰাজীবনে কৃতিত্বের সাথে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করলেন।
একদিন এক ব্যবসায়ী লুই পাস্তুরের কাছে এলেন। তিনি বিট থেকে এ্যালকোহল তৈরি করতেন। কিন্তু তাঁর তৈরি এ্যালকোহল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেত। বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর পরীৰা করে দেখলেন যে চিনির গাজানোর (ঋবৎসবহঃধঃরড়হ) জন্যই এ্যালকোহল নষ্ট হয়, আর তার জন্য দায়ী এক প্রকার জীবাণু। তিনি এই জীবাণু নাশের ব্যবস্থা করলেন যাতে এই তরল পদার্থ জীবাণুমুক্ত থাকে। এর থেকে তিনি দুধ জীবাণুমুক্ত করার পদ্ধতিও আবিষ্কার করেন যা আজও সারা পৃথিবীতে পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতি নামে পরিচিত।
একদিন পাস্তুর গবেষণায় মগ্ন। হঠাৎ জোসেফ মেইস্টার নামে একটি ছোট ছেলে এল। ছেলেটিকে কুকুরে কামড়েছে। পাস্তুরের মনে পড়ল ছেলেবেলায় দেখা সেই নিকোল চাষীর কথা যাকে কুকুরে কামড়েছিল। পাস্তুর তখন প্রথম আবিষ্কার করলেন জলাতংক রোগের প্রতিষেধক। তিনি পরীৰা করে দেখলেন যে, ৰ্যাপা কুকুর, নেকড়ে, শেয়াল প্রভৃতি প্রাণীর মসত্মিষ্কে এক ধরনের মারাত্মক জীবাণু বাস করে। ঐ প্রাণীর জীবাণু কোন সুস্থ প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করলেই জলাতংক রোগ হয়। তখন তিনি সেই জীবাণুগুলো থেকে তৈরি করলেন এক ধরনের প্রতিষেধক যা শক্তিশালী জীবাণুর বিরম্নদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ছোট্ট বালক জোসেফের প্রাণ রৰা হলো। এর পর লুই পাস্তুরের সাফল্যের কথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল। তার পর থেকে জলাতংক রোগে আক্রানত্ম শত শত লোকের জীবন রৰা পেল।
একবার ফ্রান্সের গুটিপোকার খামারে মড়ক লাগল। লুই পাস্তুর জীবাণু ধ্বংসের ব্যবস্থা করেন। রৰা পেল কোটি টাকা মূল্যের খামার। এছাড়া তিনি এনথ্রাক্স নামক রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন। আগে এই রোগে লৰ লৰ জীবজন্তু মারা যেত। তিনি আবিষ্কার করেন, যদি এই রোগের জীবাণু অল্প পরিমাণে কোন পশুর শরীরে ঢোকানো যায়, তবে সেই পশুটির নিজের দেহে এক ধরনের প্রতিরোধ ৰমতা গড়ে উঠবে। ফলে আর ঐ রোগ হবে না। লুই পাস্তুর আধুনিক জীবাণুতত্ত্ব্ব ও রোগ-জীবাণুবিদ্যার প্রতিষ্ঠাতা।
১৮৯৫ সালে ৭৩ বছর বয়সে মহাবিজ্ঞানী লুই পাস্তুর মৃতু্যবরণ করেন। কিন্তু তিনি তাঁর অবিস্মরণীয় আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। আর তাঁর এই আবিষ্কার বিশ্বের অগণিত মানুষের জীবন রৰা করে চলেছে।

০ মৌসুমী ভদ্র

No comments

Powered by Blogger.