দেশীয় অর্থায়নে বিদ্যুত

দেশের বিদ্যুত সঙ্কট মোকাবিলায় বিদ্যুত মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার ৭২০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পিকিং পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মোট ১০ বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। আগামী ২ বছর পর এসব কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। একই সঙ্গে দেশের বিদ্যমান বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রেখে বিদ্যুত চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করে আগামী ২ বছর পর থেকে দেশকে বিদ্যুত খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। তবে এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, পিকিং পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার এখনও প্রকল্প-সহায়তা পাওয়ার নিশ্চয়তা পায়নি। সে হিসেবে সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থ দিয়ে প্রকল্প সম্পন্ন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন। তবে সরকার এই সাহসী পদক্ষেপ যে কোন মূল্যে সফল করতে চাইলে সেটাও সম্ভব বলে মনে করেন তাঁরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারলে বিদ্যুত খাতে দেশ একটি মাইলফলক অতিক্রম করবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা দেশবাসীর মনে আশা সৃষ্টি করবে এতে সন্দেহ নেই। এসব পরিকল্পনা নিয়ে এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে যে মাইলফলক অতিক্রম করার কথা কেউ কেউ বলছেন, এখন এমন মাইলফলক অতিক্রম করা ছাড়া কোন উপায় নেই। দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে। ঢাকা নগরীর লোকসংখ্যা বেড়েছে। ছোট বড় মাঝারি নানা ধরনের কারখানা স্থাপিত হয়েছে, উৎপাদনের প্রয়োজনে যেমন তেমনি মানুষের গার্হস্থ্য প্রয়োজনেও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েই চলেছে। আগের সরকারগুলো যদি এই হিসাব মাথায় রেখে বিদ্যুত উৎপাদনের ব্যবস্থা ঠিক প্রয়োজন মতো করে যেত তাহলে বিদ্যুতের ঘাটতি তথা সঙ্কট আজকের মতো এত তীব্র হতো না। আগে যে ক্ষেত্রে প্রয়োজন মতো কাজ হয়নি সেটা সবার জানা। বিদ্যুতের অভাব অবশ্য সব সময়ই, তাই বিদ্যুত না থাকার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা কারখানা অচল হয়ে থাকা, জনজীবনে দুর্ভোগ ইত্যাদি অবস্থা অনেকদিন ধরেই দেখা গেছে। দিনে দিনে এই সঙ্কট বিশেষভাবে তীব্র হয়ে উঠছে। এখন তাই দেশবাসী তাকিয়ে আছে বিদ্যুতের ব্যাপারে সরকারের নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও সেসব বাস্তবায়নের কাজ দেখার প্রত্যাশায়। সরকার যে এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে তা দেখা যাচ্ছে। এতে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়, বিদ্যুতের ব্যাপারটি সরকার যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই ভাবছে। এটাই মানুষকে আশান্বিত করছে। সর্বশেষ ১০ বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের যে উদ্যোগের কথা জানা গেল তা বিশেষভাবে মানুষকে আশান্বিত করবে। মানুষ প্রত্যাশা করবে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং নির্ধারিত সময়ে সেগুলোর সুফল মানুষ পাবে।
বিদ্যুত ছাড়া আমাদের যে চলবে না, বিদ্যুত ছাড়া সামনের দিকে এক-পাও যে এগোনো যাবে না সেটা সবার জানা। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ডিজিটাল দেশ মানেই আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়া। এই কর্মসূচীর পূর্ণ সাফল্য প্রাথমিকভাবে নির্ভর করে বিদ্যুতের ওপর। বিদ্যুতের যোগান তথা উৎপাদন বাড়াতে না পারলে এই প্রকল্প শুধু কথার কথা হয়েই থাকবে। মানুষ অতীতে কথা শুনেছে, এখন কথার পাশাপাশি কাজ দেখতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.