ভাষাশহীদদের স্মরণে তৈরি করা হয় গাইবান্ধার শহীদ মিনার

স্বাধীনতার চেতনাদীপ্ত মহান ভাষা আন্দোলনের অনেক স্মৃতিবিজড়িত ১৯৫২ সালের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন গাইবান্ধা জেলা শহরের পৌর পার্কের এ শহীদ মিনারটি, যা আজও গৌরবগাথায় সমুজ্জ্বল কালের সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
এ শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে সদ্য প্রয়াত গাইবান্ধার বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক কার্জন আলী তার স্মৃতি থেকে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে জানা যায়, গাইবান্ধা শহরে শহীদ মিনারের শুরুটি হয়েছিল ১৯৫২ সালেই, যখন ঢাকার পিচঢালা কালো রাজপথ যেদিন ভাষা শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠেছিল। কার্জন আলীর কাছ থেকে জানা তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লে সেখানে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। তাতে শহীদ হয় সালাম, বরকত, রফিকসহ আরও নাম না জানা কত ভাষাসৈনিক। ঢাকার সেই শহীদদের স্মরণে গাইবান্ধায় ভাষা আন্দোলনকারীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। সে সময় মিছিলে মিছিলে গ্রাম-গঞ্জ শহর উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। এ সময় আন্দোলকারীরা বাঁশের লাঠিতে কালো পতাকা বেঁধে তৎকালীন মিউনিসিপ্যাল পার্কের এক কোনায় সেগুলো পুঁতে সেখানে একটি শহীদ স্মৃতি বেদি নির্মাণ করে। কিন্তু পুলিশ এসে ওই পতাকা এবং শহীদ মিনারের অস্থায়ী অবকাঠামো ভেঙ্গে-চুরে দেয় ও পতাকা উপড়ে ফেলে। শুরু হয় গাইবান্ধার ভাষা আন্দোলনকারীদের ধরপাকড়। এরপর গাইবান্ধার ভাষা আন্দোলনকারীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ১৯৫৭ সালে বর্তমান এই শহীদ মিনারটি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ করা হয়।
ভাষাসৈনিক কার্জন আলী সে সময় ছিলেন মহকুমা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা। তিনি অন্যদের সাথে এই শহীদ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর সাথে এই জেলায় ভাষা আন্দোলনকারী সংগ্রামী নেতাদের মধ্যে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলোÑ পীরগঞ্জের কাজী আব্দুল হালিম, জেলা শহরের খান আলী তৈয়ব, হাসান ইমাম টুলু, গোলাম কিবরিয়া, মতিউর রহমান, গোলাম মোস্তফা, সুন্দরগঞ্জের কছির উদ্দিন, হানিফ শেখ, গোবিন্দগঞ্জের ফজলুর রহমান, মজিবর রহমান, সাঘাটার জালিলুর রহমান, সাদুল্যাপুরের নলডাঙ্গার আব্দুল খালেক সরকারসহ নাম না জানা আরও অনেকে।
Ñআবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা

No comments

Powered by Blogger.