সূর্যে বাঁধি বাসা

অতি সাধারণ এক মেয়ে। পোশাকে নেই চাকচিক্য, কথাবার্তায় শিশুসুলভ এবং খুবই বিনয়ী। যেন অনেক দিনের পরিচিত কেউ। প্রথম পরিচয়ে কৃষ্ণকলিকে নিয়ে এমন উপলব্ধিই হয় সকলের।
পুরো নাম কৃষ্ণকলি ইসলাম। বাংলা গানে নিজস্ব স্বাতন্ত্রতায় নতুন এক আবেগী সুরের মূর্ছনা তুলে কৃষ্ণকলি এখন তরম্নণ প্রজন্মসহ সকল বয়সী মানুষের অতিপ্রিয় একজন শিল্পী। তবে কৃষ্ণকলির ভক্তরা জেনে খুশি হবেন যে, অচিরেই কৃষকলি তার দ্বিতীয় একক এ্যালবাম নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছেন ভক্তশ্রোতাদের সামনে। সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে এ গুণী শিল্পীকে নিয়ে আরও দু'একটি কথা বলে নিই।
কৃষ্ণকলির জীবনে সবচেয়ে প্রভাব বিসত্মারকারী মানুষটি হলেন তার মা মেহেরম্নন্নেসা। মা-ই তার শিৰক। কলেজে বাংলা পড়াতেন তিনি। পাশাপাশি করতেন বাম রাজনীতি। তিনি নকশাল বাড়ি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আবার ছাত্র জীবনে জাতীয় পর্যায়ে এ্যাথলেটও ছিলেন। জীবনকে বিভিন্ন দিক থেকে উপলব্ধি করতে চাইতেন তিনি। আজকের কৃষ্ণকলি যেন সেই মায়েরই প্রতিচ্ছবি। গানে তার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই। এরপর ওয়াহিদুল হকের কাছে তিনি তালিম নেন। ওয়হিদুল হক তার কাছে ছিলেন পিতৃতুল্য। মায়ের ইচ্ছে ছিল মেয়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখুক, কিন্তু কৃষ্ণকলির মন পড়ে থাকত রবীন্দ্রসঙ্গীতের দিকে। এরপর কৃষ্ণকলি ছায়ানটে রবীন্দ্রসঙ্গীতে তালিম নেন।
সমকালের বাংলা গানে কৃষ্ণকলি যতটা না তার গানের জনপ্রিয়তা দিয়ে মন কেড়েছেন, তার চেয়েও বেশি কেড়েছেন তার জনপ্রিয় গানগুলোর মাঝে লুকিয়ে থাকা আবেগ দিয়ে। 'সূর্যে বাঁধি বাসা' কৃষ্ণকলির প্রথম একক এ্যালবাম। এই এ্যালবামের প্রতিটি গানের সুর ও কথা ছিল তার নিজেরই করা। গানগুলো লেখা শুরম্ন করেছিলেন তিনি ছোটবেলা থেকেই। এ এ্যালবামের 'বধূয়া' গানটি ছিল তার চৌদ্দ বছর বয়সে লেখা একটি গান। এ্যালবামের সবকটি গান তিনি উৎসর্গ করেছিলেন প্রিয় মাকে। আর তার গানের মধ্য দিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন শ্রোতাদের কাছে। এরপর মনপুরা চলচ্চিত্রে কৃষ্ণকলি দুটো গানে সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন। মনপুরা চলচ্চিত্রের জন্য করা তার গানগুলো এখনও বহু শ্রোতার মুখে মুখে ফেরে। এছাড়া কৃষ্ণকলির গান স্থান করে নিয়েছে 'প্রাচীর' এবং 'ভাটির সুর' শীর্ষক দুটি মিক্সড এ্যালবামের। তবে এসব গানের অনুভূতি এখন যাদের কাছে একটু হলেও পুরনো তাদের জন্য আবারও কিছু নতুন সুর ও শব্দ নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছেন কৃষ্ণকলি। অচিরেই বাজারে আসছে তার দ্বিতীয় একক এ্যালবাম 'আলোর পিঠে অাঁধার'। নতুন এ্যালবাম নিয়ে কৃষ্ণকলি জানান, "দ্বিতীয় একক এ্যালবামের কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। এই এ্যালবামের জন্য চূড়ানত্ম করা হয়েছে আটটি গান। গানগুলো হলো, 'যাও হারাও একটা বৈশাখী ঝড় আনো', 'নাচো তো কালি', 'হাত ধরেছি হাঁটছি পথে', 'ঘুরে ঘুরে', 'গল্প ছিল আকাশেতে', 'সাদামাটা চেহারার অফিসার', 'চাঁদ খুঁজে খুঁজে' এবং 'আলো ফোটা খুব ফোটা এক ফোটা ভোরে'।"
বরাবরের মতো এ্যালবামটির গানগুলোর কথা ও সুর করেছেন কৃষ্ণকলি নিজেই। আর এ্যালবামটির সঙ্গীতায়োজন করেছেন অর্ক ও রোকন ইমন। এবার কি ধরনের গান শ্রোতাদের উপহার দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণকলি বলেন, "আমি নিজের ভাললাগা থেকে কিছু সুর সৃষ্টি করেছি। এগুলো আমার অনুভূতিরই বহির্প্রকাশ। শ্রোতাদের এবার এই অনুভূতিগুলোই উপহার দেব। আর আশা করছি, এ বসনত্মেই শ্রোতার শুনতে পাবে আমার গানগুলো।" কৃষ্ণকলির গাওয়া সব গানের পেছনেই রয়েছে তার জীবনবোধ আর জীবনের কিছু গল্পগাথা। তাই তার গানের কথা ও সুরে খুঁজে পাওয়া যায় ভিন্নতা। আর এ কথা সত্যি যে, কথা ও সুরের ভিন্নতা সৃষ্টির প্রয়াসই কৃষ্ণকলি নতুন ধারার শ্রোতাদের কাছে এখন ভীষণভাবে আলোচিত ও জনপ্রিয়। সসত্মা জনপ্রিয়তা ও তারকা ইমেজ কৃষ্ণকলি কখনই কামনা করেন না। তার শুধু প্রত্যাশা গান দিয়ে শ্রোতা হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকা। য়

No comments

Powered by Blogger.