রাজশাহীর নায়ক নির্ভার জহুরুল

মুকতার আলী নিশ্চয়ই এখন পরিচয়-সংকটে ভুগতে শুরু করেছেন! এমনিতে ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলিং করেন। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে তিনি ‘ম্যাচজয়ী’ ব্যাটসম্যান।
এবারের বিপিএলে তিন ম্যাচ খেলে মাত্র এক ওভার বল করেছেন। কিন্তু দুরন্ত রাজশাহীর তিন জয়ের দুটিতেই বড় অবদান ব্যাটসম্যান মুকতারের। প্রথম ম্যাচে তাঁর অপরাজিত ২২ রান রাজশাহীকে টেনে নিয়েছিল ৯৯ পর্যন্ত, যার হাত ধরে ২ রানের সেই বিখ্যাত জয়। কাল বরিশাল বার্নার্সের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১০। শফিউলকে দুই চার মেরে মুকতার ম্যাচ শেষ করলেন ২ বল আগেই! বোলার হয়ে বোলিং করতে না পারায় খারাপ লাগা নিশ্চয়ই আছে, তবে নতুন পরিচয়ের তৃপ্তিটাও কম থাকার কথা নয়!
তুলির শেষ আঁচড় দিয়েছেন মুকতার, তবে রাজশাহীর জয়টা এঁকেছেন জহুরুল ইসলাম। সেই জহুরুল, পরশু রাতেই যাঁকে মনে হয়েছিল ক্লান্ত-পরাজিত একজন। ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, ‘অধিনায়কত্ব কিছুটা চাপ ফেলছেই।’ টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে কাতর অনুরোধ জানিয়ে সেই ‘চাপ’ দূরে ঠেলেছেন। রাজশাহীর হয়ে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই কাল টস করলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যান চামারা কাপুগেদেরা। আর চাপমুক্ত জহুরুল খেললেন দুর্দান্ত এক ম্যাচজয়ী ইনিংস। ম্যাচ শেষে বললেন, ‘অধিনায়কত্বের চাপ না থাকা বড় একটা স্বস্তি তো অবশ্যই।’
যখন উইকেটে গিয়েছিলেন, কভেন্ট্রি-তামিমকে হারিয়ে দল ধুঁকছে। রানরেট তিনের সামান্য বেশি। সেখান থেকেই তিনটি করে চার-ছয়ে ৩৮ বলে ৫৭ করে দলকে এনে দিয়েছেন দারুণ এক জয়। তৃতীয় উইকেটে দিলশান মুনাবীরার (২৭ বলে ২৯) সঙ্গে গড়েছেন ৩৫ বলে ৪৪ রানের জুটি, চতুর্থ উইকেটে শন আরভিনের (২০ বলে ২৮) সঙ্গে ৩৩ বলে ৫৩। আজহার মেহমুদের স্লোয়ারে কভারে ধরা পড়ে যখন ফিরছেন জহুরুল, রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ৭ বলে ১১। ওই কাজটুকুই সেরেছেন মুকতার।
শুধু জহুরুল-মুকতারের নয়, বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল আজহার মেহমুদেরও। প্রথম স্পেলে ফিরিয়েছিলেন চার্লস কভেন্ট্রিকে, জহুরুলকে ফিরিয়ে ছড়িয়েছেন শেষের উত্তেজনা। এর আগে বরিশালের দেড় শ ছাড়ানো রানের মূল কারিগরও তিনি। ডেনলি (২৩ বলে ২৩), সাব্বিররা (২৪ বলে ২৯) বড় করতে পারেননি সম্ভাবনাময় শুরুকে। মেহমুদের ৩৪ বলে ৫৭ রান বরিশালকে এনে দেয় লড়াকু পুঁজি। কিন্তু জহুরুল যে কাল নিজের নির্ভার থাকার প্রমাণ দিতে চেয়েছিলেন!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বরিশাল বার্নার্স: ২০ ওভারে ১৫২/৬ (ডেনলি ২৩, হজ ১১, সাব্বির ২৯, মেহমুদ ৫৭, মাস্টার্ড ১২, অলক ১, কবির ১২*; মুনাবীরা ২/১৮, এডমন্ডসন ১/৩১, তাইজুল ১/৩৪)। দুরন্ত রাজশাহী: ১৯.৪ ওভারে ১৫৩/৬ (তামিম ৯, কভেন্ট্রি ১, মুনাবীরা ২৯, জহুরুল ৫৭, আরভিন ২৮, কাপুগেদেরা ১, জিয়াউর ১২*, মুকতার ১০*; মেহমুদ ২/২০, কবির ২/৩১, নাজমুল অপু ১/১৩, শফিউল ১/৩০)।
ফল: রাজশাহী ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জহুরুল ইসলাম।

No comments

Powered by Blogger.