প্রতি পরিবারে একজনের চাকরি ॥ যাত্রা শুরু

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের সেবা করার লৰ্য নিয়েই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তাই সমাজে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে যুবক ও যুব মহিলাদের তিন মাস প্রশিক্ষণ দেয়ার পর দুই বছরের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রশিক্ষণের সময় প্রত্যেকে প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। প্রশিক্ষণের পর দুই বছরে অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তীকালে প্রত্যেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন। তিনি ঘোষণা দেন প্রতি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমি কুড়িগ্রাম থেকেই শুরম্ন করলাম ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী। শনিবার বিকেল পৌনে ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ মাঠে এক বিশাল জনসভায় এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জনসমুদ্রে পরিণত হয় কলেজ মাঠে।
স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, জনসভায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন- ১৫ কোটি মানুষের এ দেশে সকলকে চাকরি দেয়া সম্ভব নয় কিন্তু যদি তাদের ট্রেনিং দিতে পারি এবং যদি সুযোগ সৃষ্টি করে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে বেকার যুব ও যুব মহিলারা নিজেরাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন। ন্যাশনাল সার্ভিসের কর্মসূচীর আওতায় দেশের প্রায় সাত লাখ ২০ হাজার শিতি যুবক ও যুব মহিলাকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ৰেত্রে প্রশিণ দেয়া হবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে অবহেলিত এ এলাকায় সব সময় দুর্ভি লেগে থাকে। তাই এ এলাকাকে বেশি গুরম্নত্ব দিয়েছি। ইতোমধ্যে এ জেলার ৯৯৫০ জনকে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। ৫ জনকে আজ টোকেন দেয়া হলো, বাকিদের পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে। যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী জিএম কাদের, পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশচন্দ্র সেন, প্রাথমিক ও গণশিা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, জাহিদ আহসান রাসেল ও জাফর আলী। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব) আমসাআ আমিন এবং সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী এমপি প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট উপহার দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কুড়িগ্রামবাসী সব সময় অবহেলিত, দারিদ্র্যপীড়িত, মঙ্গাকবলিত একটি এলাকা। ১৯৯৬ সালে আমরা সরকারে এসে মঙ্গাপীড়িত এলাকার দুঃখ ঘুচিয়েছিলাম। প্রত্যেকটি মানুষের জন্য খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলাম। দুর্ভাগ্য আমাদের, পরে বিএনপি সরকার এসেছিল। তারা এ এলাকার মানুষের জন্য কোন কাজ করেনি। মতায় এসে লুটপাট, দুনর্ীতি, নির্যাতন, মানুষ খুন, মিথ্যা মামলা ছাড়া জনগণকে আরও কিছুই দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ আমলে প্রত্যেকটি মানুষ শানত্মিতে থাকবে এবং দু'মুঠো ভাত খাবে_ আমি কথা দিতে পারি। কুড়িগ্রামে ইনশালস্নাহ আর মঙ্গা হতে দিব না; মঙ্গা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন চালু করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় ৫০ শয্যা হাসপাতাল ও কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হবে। কুড়িগ্রাম কলেজে মাস্টার্স কোর্স চালু করা হবে। তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের ধরলা, দুধকুমোর, ব্রহ্মপুত্রসহ প্রতিটি নদীর পর্যায়ক্রমে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। ভারতের সঙ্গে আলাপ করে তিসত্মার পানির সমস্যা দ্রম্নত সমাধান করা হবে। কুড়িগ্রামে বীজ হিমাগার ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের ঘোষণা দেন। তিনি ােভ প্রকাশ করে বলেন, কুড়িগ্রামে দারিদ্র্য বিমোচনে মাত্র একটি প্রকল্প চালু রয়েছে। আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নানা প্রকল্প চালুর ব্যবস্থা করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস; আমাদের মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার পাশাপাশি তিনি অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৫ আগস্ট হত্যার পর বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি এবং অর্থনৈতিক মুক্তি আজও অর্জন করতে পারেনি।
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামে দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর আওতায় আরও প্রকল্প গ্রহণের জন্য সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শনিবার কুড়িগ্রামে স্থানীয় সার্কিট হাউসে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ নির্দেশ দেন। এর আগে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার হাফিজুর রহমান জেলায় চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম আব্দুল করিম ও উপ-প্রেস সচিব মাহ্বুবুল হক শাকিল সভায় উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বর্তমান সরকার জনগণের সরকার উলেস্নখ করে বলেন, কর্মকর্তাদের জনগণের সার্বিক কল্যাণে যা প্রয়োজন, তাই করতে হবে।
তিনি বলেন, কৃষি অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। সেজন্য সরকার কৃষি খাতের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশের প্রধান নদনদী ড্রেজিংয়ের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিনি কৃষকদের সেচকাজে আরও বেশি ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহারের আহ্বান জানান।
কুড়িগ্রামের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১৯৯৬ সালে ৰমতায় আসার পর এ অঞ্চল থেকে মঙ্গা দূরীকরণে কৃষকদের ধানের পাশাপাশি বাদাম চাষে উৎসাহিত করতে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছিলাম।
কুড়িগ্রামে পর্যাপ্ত সংৰরণ সুবিধা না থাকায় প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের প্রতি কৃষকদের আলু সংরৰণের সুবিধার্থে হিমাগার নির্মাণের আহ্বান জানান এবং বিষয়টি বিবেচনার জন্য কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেন। কুড়িগ্রাম জেলায় শিৰার হার ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ উলেস্নখ করে তিনি এ হারকে মান্য সত্মরে উন্নীত করতে সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তা ও শিৰা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, রেল ও সড়কসহ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.