বিশ্বকাপ আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছে ॥ প্যাট্রিক এভরা- দিলরুবা কোহিনূর সুইটি

প্যাট্রিক এভরা। বিখ্যাত ইংলিশ ফুটবল কাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অধিনায়ক তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই সম্প্রতি 'কার্লিং কাপে'র শিরোপা জিতেছে রেড ডেভিলসরা।
সেনেগালে জন্ম নেয়া ফ্রেঞ্চ বংশোদ্ভূত এই লেফটব্যাকের ফ্রান্সের হয়ে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২৬টি। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি ও ২৮ বছর বয়সী এভরার দল ফ্রান্স এবার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে কিভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ও আইরিশদের বিরুদ্ধে যেভাবে অঁরির হাতের কল্যাণে পার পেয়েছিল, তা সবাই জানে। সেই পুরনো অতীত ভুলে গিয়ে ফ্রান্স সুন্দর ফুটবলশৈলী প্রদর্শন করে আসন্ন বিশ্বকাপের আসরে সেরা দল হয়ে ট্রফি জেতার স্বপ্ন দেখছে। এই স্বপ্নের অন্যতম ধারক এভরার বিশ্বকাপ ভাবনা কেমন, সেটা জেনে নেয়া যাক ফিফা ডটকমের মাধ্যমে।
প্রশ্ন : আপনি তো ২০০৯ সালে ফিফা ঘোষিত বর্ষসেরা একাদশে স্থান পেয়েছিলেন। ফিফা ঘোষিত বিশ্বের সেরা দলে লেফটব্যাক হিসেবে ঠাঁই পেয়ে কেমন অনুভূতি হয়েছিল?
উত্তর : এটা নিঃসন্দেহে আমার জন্য সম্মানের ও সত্যিকার অর্থেই সন্তুষ্টিদায়ক। তাদের ধন্যবাদ, যাঁরা আমাকে ফিফার বর্ষসেরা দলে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।
প্রশ্ন : এই পুরস্কার পাওয়ার মুহূর্তটিই কি আপনার ক্যারিয়ারের স্মরণীয় মুহূর্ত?
উত্তর : না, আরও আছে। গত বছরের চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে বার্সিলোনার কাছে হারাটা ও ২৮ ফেব্রম্নয়ারি কার্লিং কাপের ফাইনালে আমার নেতৃত্বে ম্যানইউ এ্যাস্টন ভিলাকে হারিয়ে টানা দু'বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মুহূর্তগুলোও ছিল আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত।
প্রশ্ন : ম্যান ইউর হয়ে বড় বড় অনেক শিরোপাই জিতেছেন, যেমন ২০০৮ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও ফিফা কাব বিশ্বকাপ। এ বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে কোন কোন শিরোপার দিকে টার্গেট সেট করেছেন?
উত্তর : এ বছরে আমাদের লৰ্য কমপৰে চারটি শিরোপা জেতা। যদি তা করতে পারি, তাহলে ইতিহাস গড়বে ম্যান ইউ। তবে সবচেয়ে বেশি গুরম্নত্ব দিচ্ছি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ওপর। আমি এ পর্যনত্ম তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে খেলেছি। মোনাকোর হয়ে ২০০৪ সালে, ম্যান ইউর হয়ে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে। দুর্ভাগ্যের বিষয়_ তিনবারের মধ্যে দু'বারই হারের তিক্ত স্বাদ পেয়েছি আমি। আমার স্বপ্ন হচ্ছে ক্যারিয়ার শেষ করার আগে আমি কমপৰে এই ট্রফি তিনবার জিততে চাই। সে হিসেবে আরও দু'বার শিরোপা জিততে হবে আমাকে।
প্রশ্ন : কাব ফুটবল ছেড়ে এবার আনত্মজাতিক ফুটবলের প্রসঙ্গে আসি। সবার দৃষ্টিই এখন বিশ্বকাপ ফুটবলের মূলপর্বের দিকে। আপনার দেশ ফ্রান্স তো অনেক কষ্টে আয়ারল্যান্ডের বিপৰে অঁরির চাতুরতায় জিতে কোয়াইলিফাই করে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা, জানাবেন কি?
উত্তর : এ সম্পর্কে কিছু বলা মানেই আবার বিতর্কিত অতীতে ফিরে যাওয়া। ব্যক্তিগতভাবে আমি অতীতের দিকে খুব একটা ফিরে তাকাই না। ভবিষ্যত নিয়েই চিনত্মা করতে পছন্দ করি।
প্রশ্ন : আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ সম্পর্কে কিছু বলুন।
উত্তর : আমার জন্ম আফ্রিকা মহাদেশে। আমি ভালভাবেই এখানকার মানুষের ফুটবল ভাবনা নিয়ে অাঁচ করতে পারি। তারা ফুটবল নিয়ে অসম্ভব ক্রেজী। বিশ্বকাপের প্রথম আসর আফ্রিকা মহাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা ও আবেদন যে কোন্ পর্যায়ে যাবে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
প্রশ্ন : গত বছরের ডিসেম্বরে কেপটাউনে বিশ্বকাপ ফুটবলের গ্রম্নপিং ড্র তে 'এ' গ্রম্নপে ফ্রান্সের সঙ্গে পড়েছে মেক্সিকো, উরম্নগুয়ে ও স্বাগতিক দৰিণ আফ্রিকা। শেষের দলটির সঙ্গে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে, যেহেতু তারা স্বাগতিক?
উত্তর : স্বাগতিকদের সঙ্গে খেলাটা সব সময়ই খুব কঠিন একটা ব্যাপার। কোন সন্দেহ নেই, আফ্রিকানরা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের হারানোর চেষ্টা করবে। সবচেয়ে বড় কথা, দর্শক সমর্থনের প্রায় পুরোটাই থাকবে তাদের প্রতি। এটা তাদের ভাল খেলতে অনুপ্রাণিত করবে। তবে আমরাও নিশ্চয়ই পিছিয়ে থাকব না। চাপের ম্যাচে খেলার অহরহ অভিজ্ঞতা আছে আমাদের।
প্রশ্ন : নিজের দল নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে আপনি কতটা আশাবাদী?
উত্তর : ২০০৮ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল আমাদের জন্য হতাশার আসর। সেই হতাশা কাটিয়ে ওঠার জন্য ২০১০ বিশ্বকাপ জয় করাটা আমাদের জন্য জরম্নরী হয়ে পড়েছে। স্বীকার করছি, এবারের বাছাইপর্বে আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী নৈপুণ্য দেখাতে পারিনি। উত্তীর্ণ হতে একেবারে পেস্ন-অফ ম্যাচ পর্যনত্ম খেলতে হয়েছে। তারপরও বলব, আমাদের দলে কোয়ালিটি ফুটবলারের কমতি নেই। এই দল নিয়ে অবশ্যই বিশ্বকাপ জয়ের জন্য লড়াই করা যায়। আমি তো বলব, আমাদের জন্যই অপেৰা করে আছে বিশ্বকাপ ট্রফিটা।
প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন, বাছাইপর্বে আয়ারল্যান্ডের বিরম্নদ্ধে সেই বিতর্কিত জয়ের পর আপনার ম্যান ইউর সতীর্থ আয়ারল্যান্ড জাতীয় দলের ফুটবলার জন ও'শিয়ার সঙ্গে কাবের হয়ে একসঙ্গে খেলতে গিয়ে কি কোন সমস্যা হয়েছিল?
উত্তর : মোটেই না। জন ও-রকম মানুষই নন। তিনি একজন শতভাগ পেশাদারি মনোভাবের ফুটবলার। তাঁর সঙ্গে সেই বাছাই পর্বের ম্যাচ প্রসঙ্গে খোলাখুলি আলাপ হয়েছে আমার। তিনি এটা ভালভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছেন, একটা খেলায় এমন হতেই পারে। এগুলো খেলারই অংশ।

No comments

Powered by Blogger.