ওদের ভয়ঙ্কর সব চেহারায় প্রজন্মের ঘৃণা- থুথু লাথি স্যান্ডেল

 একটি ছোট্ট লিফলেটৈ লেখা, ‘সাধ্যমত ঘৃণা কর।’ পাশেই একাত্তরের ঘাতক কুলশিরোমণি গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, কাদের মোল্লাদের ভয়ঙ্কর সব চেহারা।
আর যায় কোথায়। শুক্রবার শাহবাগের ঐতিহাসিক মহাসমাবেশের পাশে ঘাতকদের জানাচ্ছেন নানা প্রজন্মের মানুষ। কেউ ঘৃণা হিসেবে ছুড়ছেন থুথু, কেউ স্যান্ডেল, কেউ লাথি মারছেন আবার কেউ রাস্তা থেকে ময়লা নিয়ে নিক্ষেপ করছেন ঘাতকদের ওপর।
এ মহাসমাবেশের পাশের ব্যতিক্রমী এ আয়োজন নজর কেড়েছিল সকলকেই। নেই কোন নৈরাজ্যের চেষ্টা। ককটেল বিস্ফোরণ বা বোমাবাজির কোন দৃশ্য নেই। সাধারণ মানুষের গাড়ি ভাংচুর তো দূরের কথা, পুলিশের ওপর হামলার কোন চেষ্টা নেই। কয়েক মাস ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে জামায়াত-শিবিরের সহিংস আন্দোলনে যখন দেশ অস্থির, তখনই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের আন্দোলনে এমনই ভিন্ন চিত্র। আন্দোলনের অংশ হিসেবে চারুকলার সামনের রাস্তায় অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলিত হয়ে আঁকছেন যুদ্ধাপরাধীবিরোধী ব্যঙ্গচিত্র। রাজপথের কালোপিচে ফুটে উঠছে কাদের মোল্লা, সাঈদী, নিজামী, গোলাম, সাকাসহ চিহ্নিত যুদ্ধাপারাধীদের ভয়ঙ্কর চেহারা। রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষ রাজাকারদের এসব ব্যঙ্গচিত্রে থুথু নিক্ষেপ করছেন। আন্দোলনের ভাষা হলো, গান-কবিতা-ব্যঙ্গচিত্রসহ বিভিন্ন সৃষ্টিশীল উপাদান। এর সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাজাকারবিরোধী মজার মজার সেøাগান। আন্দোলনকারীরা একে অপরের পরিচিত না হলেও সংগঠিত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন প্রতিবাদী মানববন্ধনে। দলে দলে তারা গাইছেন প্রতিবাদী সঙ্গীত। কখনও দেশের গানে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন সবাই। শাহবাগ স্কয়ার বলে ঘোষিত আন্দোলনস্থলে একদল তরুণ লুডু খেলারও আয়োজন করেছেন। লুডুর সাপের মাথায় রয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি। একটানা রোদের মধ্যে সেøাগান, গান আর কবিতা পড়তে পড়তে আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্যালাইনের ব্যবস্থা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিকেন্দ্রিক সংগঠন ‘সেøাগান’৭১। এভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে পুরো আন্দোলনস্থল পরিণত হয়েছে এক ঐক্যের মেলবন্ধনে। আন্দোলনে যোগ দিতে আসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক রাকিব আহমেদ বলেন, জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন রাজাকারদের রক্ষা করার জন্য, যে রাজাকাররা একাত্তরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। অন্যদিকে শাহবাগের এ আন্দোলন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে, স্বাধীনতার চেতনার পক্ষে। তাই দুই আন্দোলনের এমন ভিন্ন চিত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হীরা বলেন, ‘আমার কাছে এ আন্দোলন আগুনের মতো। আমরা যারা আন্দোলনের সঙ্গে আছি, তারা আগুনের এ উত্তাপে ওম পোহাচ্ছি। কেউ যদি এ আগুনকে নেভাতে আসে, তাহলে সে নিজেই পুড়ে যাবে। আমরা স্বাধীনতাপরবর্তী তৃতীয় প্রজন্ম। আমরাই এ আগুন। অসমাপ্ত এ বিপ্লবকে সমাপ্ত করে তবেই আমরা ঘরে ফিরব। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে এক লাখেরও বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় মঙ্গলবার বিকেল থেকে শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভের সূচনা করে ব্লগার ও অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম। এক পর্যায়ে তা পরিণত হয় সব শ্রেণীপেশার জনতার সমাবেশে। বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহবাগ মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কের দুই পাশে টানা সাদা কাপড় বিছিয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। এ সংগঠনের সভাপতি মেহেদী হাসান শুক্রবার বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ১০ বান্ডিল কাপড়ে স্বাক্ষর পেয়েছি। প্রতিটিতে ১০ হাজার মানুষের সই থাকলেও এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি মানুষ এই দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। একটি কাপড়ে দেখা যায়, আশিক নামে একজন লিখেছেন, ‘আমাদের দাবি একটুখানি, রাজাকারের লটকানি।’ মেহেদী হাসান জানান, এই দাবিতে দুই কোটি মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে চান তারা।

No comments

Powered by Blogger.