৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কোনদিন কেউ মুছে ফেলতে পারবে না- ৭ মার্চের আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী
শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক-বিভ্রানত্মি
ছড়ানোর অপচেষ্টা চলছে। অথচ একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতেও পাকিসত্মানী
হানাদার বাহিনীর সঙ্গে থাকা কিছু বাঙালী অফিসার চট্টগ্রামে ব্যারিকেড
সৃষ্টিকারী বাঙালীদের নির্বিচারে গুলি করেছে।
পরে তাদেরই কেউ স্বাধীনতার ঘোষক-পাঠক সেজেছেন। ওই সময় চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকারী অনেক বাঙালী সামরিক অফিসারও এ কথা জানেন।
মনগড়া বা বিকৃত নয়, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে পারলে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে, চারিত্রিক দৃঢ়তা বাড়বে, সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত-সমৃদ্ধ করে দেশকে গড়ে তুলতে পারবে। বাঙালী যে বীরের জাতি, যুদ্ধ করে দেশকে জয় করেছে তাও নতুন প্রজন্মদের জানাতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলৰে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আয়োজিত এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। "বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : আনত্মর্জাতিক ও লোকায়াতিক মাত্রা" শীর্ষক এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট লেখক, চিনত্মাবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজতাত্তি্বক প্রফেসর বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক জাহানারা বেগম, ঐতিহাসিক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ট্রাস্টের কিউরেটর সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান। সেমিনারের শুরম্নতেই বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বজ্রকঠিন ভাষণের ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক এবং জাতির জন্য একটি মাইলফলক উলেস্নখ করে বলেন, এ ভাষণ চিরদিনের, কেউ কখনও মুছে ফেলতে পারবে না। এ ঐতিহাসিক ভাষণের সঙ্গে পৃথিবীর অনেক বড় বড় ভাষণের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ যত বছর ধরে বাজানো হচ্ছে, কোটি কোটি মানুষ যুগ যুগ ধরে শুনছে, যে ভাষণের আবেদন এখনও এতটুকু কমেনি_ বিশ্বের ইতিহাসে অন্য কারোর ভাষণের ৰেত্রে এটা হওয়ার নজির নেই। এ ভাষণটি কত বছর, কত মাস বা ঘণ্টা বেজেছে, কত মানুষ তা শুনেছে_ তা অঙ্ক কষে বের করা কঠিন। এখনও যখনই মানুষ বা নতুন প্রজন্মের সনত্মানরা এ ভাষণটা শোনেন তখনই বীরত্বগাঁথা স্বাধীনতার সংগ্রামকে দেখতে পান। ভাষণটির আবেদন, অনুপ্রেরণা এতটুকুও কমেনি।
স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ছিল অতুলনীয়। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের সব নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চের রাতে গ্রেফতার হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু লন্ডনে বসে মুক্তিযুদ্ধে কোথায় ট্রেনিং হবে, কোথা থেকে অস্ত্র আসবে, শরণাথর্ীদের কে আশ্রয় দেবে, আনত্মর্জাতিক সমর্থন আদায়ে প্রবাসে থাকা বাঙালীরা কে কী করবেন, তার সবকিছুই চূড়ানত্ম করে রেখে গিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিসত্মানী সামরিক জানত্মারা যখন পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানাস্থানে আক্রমণ করল, তখন বঙ্গবন্ধু ঠিকই বুঝতে পারলেন তাঁর বাড়িতেও হানাদাররা আক্রমণ চালাবে। তাই পাকিসত্মানী বাহিনী বিভিন্নস্থানে আক্রমণ শুরম্ন করার পরপরই বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ইপিআরের (পরে বিডিআর) ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা সারাদেশে ছড়িয়ে দেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সংগ্রহ করে চট্টগ্রামের নুরম্নল হক নামের আওয়ামী লীগ নেতা রিক্সা নিয়ে মাইকে ওই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করতে শুরম্ন করেন। এরপর অনেকেই বঙ্গবন্ধুর ওই স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন, সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ একদিনে হয়নি। দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা।
জাতির জনকের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম, আত্মত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও বাঙালী জাতির মুক্তির প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু তাঁর সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে বার বার জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী থেকেছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন। ফাঁসির দড়ি বেছে নিয়েছেন, কিন্তু কখনও বাঙালী জাতির স্বাধীনতার প্রশে আপোস করেননি। ওই সময় অনেকেই আপোস করলেও পাকিসত্মানী শাসকরা বঙ্গবন্ধুকে চিনতে পারেনি। কারণ বঙ্গবন্ধুর সকল আন্দোলন-সংগ্রামের মূল লৰ্যই ছিল যে করেই হোক বাংলাদেশকে স্বাধীন করা। তাই ১৯৪৮ সাল থেকেই বাংলাদেশকে স্বাধীন করার আন্দোলন শুরম্ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়ে যুদ্ধে কখনও জয় করা যায় না। বঙ্গবন্ধু এটা ভাল করেই জানতেন। পাকিসত্মানী শাসক ইয়াহিয়ারা চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বানিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামকে নস্যাত করে দিতে।
তিনি বলেন, একাত্তরের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। তার আগে থেকেই ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশ দিতেন, সেভাবেই চলত পুরো দেশ। বাঙালী জাতি অৰরে অৰরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালন করত। ভাষণ দেয়ার আগে অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে অনেক কিছু বলেছেন। কেউ কেউ বুঝাতে চেয়েছেন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে বাঙালী জনগণ হতাশ হবে। কিন্তু তখন আমার মা (বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব) বাবাকে (বঙ্গবন্ধু) ভাষণ দেয়ার দিন সকালে শুধু একটি কথাই বলেছেন যে, 'পুরো দেশের মানুষ তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকেই অনেক কিছু বলতে বলবে। কিন্তু তুমি নিজে যা বিশ্বাস করো, মনে ধারণ করো তাই বলবে।'
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ লিখিত ছিল না। দীর্ঘ সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও বাঙালী জাতির মুক্তির আকাঙ্ৰাকে বুকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু বজ্রকঠিন অবিস্মরণীয় যে ভাষণ দেন, তাতে গোটা বাঙালী জাতি স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ওই ভাষণের প্রতিটি নির্দেশ বাঙালী জাতি অৰরে অৰরে পালন করেছে, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছে। তাই প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে আমরা কীভাবে স্বাধীনতা পেয়েছি, কত আত্মত্যাগ করতে হয়েছে তা জানাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, কিন্তু স্বাধীনতার সুফল এখনও মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারিনি। এখনও অনেক মানুষ দারিদ্র্যের শিকার, এক শ' ভাগ শিৰিত করা যায়নি। তাই আমরা ৰমতায় এসেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। ৰুধা-দারিদ্র্যমুক্ত আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের গড়ে তুলতে হবে। তিনি নতুন প্রজন্মের সামনে স্বাধীনতার সঠিক ও প্রকৃত বীরত্বগাঁথা ইতিহাস তুলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে গড়ে তোলার জন্য সচেতন দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
মনগড়া বা বিকৃত নয়, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে পারলে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে, চারিত্রিক দৃঢ়তা বাড়বে, সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত-সমৃদ্ধ করে দেশকে গড়ে তুলতে পারবে। বাঙালী যে বীরের জাতি, যুদ্ধ করে দেশকে জয় করেছে তাও নতুন প্রজন্মদের জানাতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলৰে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আয়োজিত এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। "বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : আনত্মর্জাতিক ও লোকায়াতিক মাত্রা" শীর্ষক এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট লেখক, চিনত্মাবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজতাত্তি্বক প্রফেসর বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক জাহানারা বেগম, ঐতিহাসিক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ট্রাস্টের কিউরেটর সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান। সেমিনারের শুরম্নতেই বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বজ্রকঠিন ভাষণের ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক এবং জাতির জন্য একটি মাইলফলক উলেস্নখ করে বলেন, এ ভাষণ চিরদিনের, কেউ কখনও মুছে ফেলতে পারবে না। এ ঐতিহাসিক ভাষণের সঙ্গে পৃথিবীর অনেক বড় বড় ভাষণের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ যত বছর ধরে বাজানো হচ্ছে, কোটি কোটি মানুষ যুগ যুগ ধরে শুনছে, যে ভাষণের আবেদন এখনও এতটুকু কমেনি_ বিশ্বের ইতিহাসে অন্য কারোর ভাষণের ৰেত্রে এটা হওয়ার নজির নেই। এ ভাষণটি কত বছর, কত মাস বা ঘণ্টা বেজেছে, কত মানুষ তা শুনেছে_ তা অঙ্ক কষে বের করা কঠিন। এখনও যখনই মানুষ বা নতুন প্রজন্মের সনত্মানরা এ ভাষণটা শোনেন তখনই বীরত্বগাঁথা স্বাধীনতার সংগ্রামকে দেখতে পান। ভাষণটির আবেদন, অনুপ্রেরণা এতটুকুও কমেনি।
স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ছিল অতুলনীয়। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের সব নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চের রাতে গ্রেফতার হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু লন্ডনে বসে মুক্তিযুদ্ধে কোথায় ট্রেনিং হবে, কোথা থেকে অস্ত্র আসবে, শরণাথর্ীদের কে আশ্রয় দেবে, আনত্মর্জাতিক সমর্থন আদায়ে প্রবাসে থাকা বাঙালীরা কে কী করবেন, তার সবকিছুই চূড়ানত্ম করে রেখে গিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিসত্মানী সামরিক জানত্মারা যখন পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানাস্থানে আক্রমণ করল, তখন বঙ্গবন্ধু ঠিকই বুঝতে পারলেন তাঁর বাড়িতেও হানাদাররা আক্রমণ চালাবে। তাই পাকিসত্মানী বাহিনী বিভিন্নস্থানে আক্রমণ শুরম্ন করার পরপরই বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ইপিআরের (পরে বিডিআর) ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা সারাদেশে ছড়িয়ে দেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সংগ্রহ করে চট্টগ্রামের নুরম্নল হক নামের আওয়ামী লীগ নেতা রিক্সা নিয়ে মাইকে ওই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করতে শুরম্ন করেন। এরপর অনেকেই বঙ্গবন্ধুর ওই স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন, সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ একদিনে হয়নি। দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা।
জাতির জনকের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম, আত্মত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও বাঙালী জাতির মুক্তির প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু তাঁর সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে বার বার জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী থেকেছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন। ফাঁসির দড়ি বেছে নিয়েছেন, কিন্তু কখনও বাঙালী জাতির স্বাধীনতার প্রশে আপোস করেননি। ওই সময় অনেকেই আপোস করলেও পাকিসত্মানী শাসকরা বঙ্গবন্ধুকে চিনতে পারেনি। কারণ বঙ্গবন্ধুর সকল আন্দোলন-সংগ্রামের মূল লৰ্যই ছিল যে করেই হোক বাংলাদেশকে স্বাধীন করা। তাই ১৯৪৮ সাল থেকেই বাংলাদেশকে স্বাধীন করার আন্দোলন শুরম্ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়ে যুদ্ধে কখনও জয় করা যায় না। বঙ্গবন্ধু এটা ভাল করেই জানতেন। পাকিসত্মানী শাসক ইয়াহিয়ারা চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বানিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামকে নস্যাত করে দিতে।
তিনি বলেন, একাত্তরের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। তার আগে থেকেই ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশ দিতেন, সেভাবেই চলত পুরো দেশ। বাঙালী জাতি অৰরে অৰরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালন করত। ভাষণ দেয়ার আগে অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে অনেক কিছু বলেছেন। কেউ কেউ বুঝাতে চেয়েছেন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে বাঙালী জনগণ হতাশ হবে। কিন্তু তখন আমার মা (বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব) বাবাকে (বঙ্গবন্ধু) ভাষণ দেয়ার দিন সকালে শুধু একটি কথাই বলেছেন যে, 'পুরো দেশের মানুষ তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকেই অনেক কিছু বলতে বলবে। কিন্তু তুমি নিজে যা বিশ্বাস করো, মনে ধারণ করো তাই বলবে।'
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ লিখিত ছিল না। দীর্ঘ সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও বাঙালী জাতির মুক্তির আকাঙ্ৰাকে বুকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু বজ্রকঠিন অবিস্মরণীয় যে ভাষণ দেন, তাতে গোটা বাঙালী জাতি স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ওই ভাষণের প্রতিটি নির্দেশ বাঙালী জাতি অৰরে অৰরে পালন করেছে, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছে। তাই প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে আমরা কীভাবে স্বাধীনতা পেয়েছি, কত আত্মত্যাগ করতে হয়েছে তা জানাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, কিন্তু স্বাধীনতার সুফল এখনও মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারিনি। এখনও অনেক মানুষ দারিদ্র্যের শিকার, এক শ' ভাগ শিৰিত করা যায়নি। তাই আমরা ৰমতায় এসেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। ৰুধা-দারিদ্র্যমুক্ত আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের গড়ে তুলতে হবে। তিনি নতুন প্রজন্মের সামনে স্বাধীনতার সঠিক ও প্রকৃত বীরত্বগাঁথা ইতিহাস তুলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে গড়ে তোলার জন্য সচেতন দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
No comments