একই পথে রেশমা!

বগুড়ার রেশমাকে আত্মহত্যা করতে হলো। বখাটের অপমান সহ্য করতে পারেনি সে। বিচার চেয়েছিল। বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু বাঁচতে পারল না। নিজের জীবন নিজেই শেষ করে দিতে বাধ্য হলো।
রেশমা কলেজে পড়ত। এবার এইচএসসি পরীৰা দেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। কলেজে যাওয়া-আসার পথে এক বখাটে তাকে উত্ত্যক্ত করত, বাজে কথা বলত, কু-প্রসত্মাব দিত। সেদিনও একই ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হয় সে। ঐ বখাটে ও তার এক সহযোগী বখাটে তাকে অপমান করে, লাঞ্ছিতও করে। সে সহ্য করতে পারে না। এর আগেও নাকি সে বখাটে ছেলেটির ব্যাপারে অভিযোগ করেছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। সেদিনের অপমান এবং লাঞ্ছনার জ্বালা সইতে না পেরে হতাশ হয়ে জীবরে প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে মেয়েটি বেছে নেয় আত্মহননের পথ। কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। তার পরিবারের লোকজনের আশা ছিল সে লেখাপড়া করে বড় চাকরি করবে। তার বাবা ভ্যানচালক। তিনি অনেক সাধ্য সাধনার মধ্য দিয়ে তাঁর মেয়েটিকে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন বড় আশা নিয়ে। রেশমার মৃত্যর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে। রবিবার রাতে আত্মহত্যা করেছে রেশমা। পরদিনই ছিল জাতীয় নারী দিবস। রেশমা জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেল আমাদের নারীদের সামনে এগিয়ে চলার পথে এখনও অনেক কাঁটা।
ৎবখাটের অত্যাচারের জ্বালা ও অপমান সহ্য করতে না পেরে অনেক মেয়েকে প্রাণ দিতে হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে সিমি, ইন্দ্রানী, রুমী, তৃষ্ণার কথা, স্মরণ করা যেতে পারে ফাহিমা এবং বৃষ্টির কথা। বখাটেদের উৎপাত কতখানি, কোন পর্যায়ে গেছে ভাবলে অবাক হতে হয়। যে রবিবার রাতে রেশমা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলো তার আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়েছে বহিরাগত দুই বখাটের হাতে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে বিৰোভ হয়েছে, বখাটেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে কাস বর্জনের ঘটনাও ঘটেছে।
আমাদের এই গণতান্ত্রিক সমাজে ঐ ধরনের নিকৃষ্ট প্রবণতা আর কতকাল প্রশ্রয় পাবে? বখাটেরা কোথায় নেই, মেয়েদের স্কুল-কলেজের গেটে, তাদের আসা-যাওয়ার পথে, মার্কেটে, শপিংমল ইত্যাদিতে। অনেক সময় পথে-ঘাটেও মেয়েদের চলাচলের পথে উত্ত্যক্ত করা, কোন মন্তব্য করা, শিস দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে তারা মেয়েদের লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। দেশে মেয়েরাও এখন লেখাপড়া, ব্যবসা, চাকরিসহ নানা কাজে এগিয়ে আসছেন। সমাজের সুস্থতা এবং স্বাভাবিকতার জন্য এবং দেশের অগ্রগতির জন্য এটা খুবই জরুরী। মেয়েদের এই এগিয়ে আশার পথকে কণ্টকমুক্ত করা প্রয়োজন। মেয়েদের চলার পথে বাধা সৃষ্টি করছে বখাটে-দুবৃত্তরা। এদের বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী কর্তৃপৰকে সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, সন্ত্রাসীদের যেমন তালিকা তৈরি করা হয় বা হালনাগাদ করা হয় তেমনি নানা স্থানে মেয়েদের উত্ত্যক্তকারীদের, তাদের স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার পথে যারা তাদের লাঞ্ছিত করে তাদের তালিকা বানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে মেয়েদের নির্ভয়ে চলাফেরা করা, লেখাপড়া করার পথ নিশ্চিত রাখতে হবে।
বড় কষ্ট করে ভ্যানচালক বাবা রেশমাকে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন, তাকে নিয়ে পরিবারের ছিল বিরাট আশা। বখাটেদের কারণে তাদের সে আশা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে গেল। বখাটেরা কি পার পেয়ে যাবে? আর কোন মেয়েকে যেন এভাবে জীবন দিতে না হয় সে প্রত্যাশার সঙ্গে বখাটেদের বিরম্নদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, সমাজ থেকে তাদের উৎখাত করা হচ্ছে। দেশের বিবেকবান সকল মানুষ এখন সেটাই দেখতে চায়।
মনস্তান্তিক সহিংসতা !

ফ্রান্সে মনস্তান্তিক সহিংসতা রোধে নতুন আইন হচ্ছে। শারীরিক নিযাতন ও সহিংসতার পাশাপাশি নতুন এই আইন চালু হলে জনসাধারণ বিশেষত নারীরা মানসিক নিযাতনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে পারবে। ড্যানিয়েল বোকুয়্যেট এবং গাই জিওফ্রে নামের দুই গণআন্দোলনের নেতা এই আইনটির খসড়া রচনা করেছেন। আইনটি খুব শীঘ্রই ফ্রান্সের পালামেন্টে পেশ করা হবে।_আইএইচটি, ২৭-২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০

No comments

Powered by Blogger.