সাত মাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানীতে মারা যাবে এক লাখ লোক- ঝুঁকিতে এগিয়ে ঢাকা সিলেট চট্টগ্রাম ॥ সিম্পোজিয়ামে তথ্য

 ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে দেশের সব ক'টি বিভাগীয় শহর। এর মধ্যে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম সবচেয়ে এগিয়ে। মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রাজধানী ঢাকা। সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলে খোদ রাজধানীতেই ভবন ধসে মারা যেতে পারে এক লাখ মানুষ।
ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেটের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাসপাতালসহ পুরনো গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনা ভূমিকম্প সহায়ক করে সংস্কার করা হবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পুরনো ভবন সংস্কার করে এ কাজের উদ্বোধন করা হবে সরকারীভাবে। দেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি এড়াতে বিল্ডিং কোড পরিবর্তন জরম্নরী। শুক্রবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী তৃতীয় ভূকম্পন বিষয়ক সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য তুলে ধরেন। প্রধান অতিথি খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন চূড়ানত্ম। সংসদের আগামী অধিবেশনে তা উত্থাপন করা হবে। সরকারের পৰ থেকে বিল্ডিং কোড আপডেট করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বুয়েটকে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১৪০ কোটি টাকা প্রসত্মাবনার মধ্যে ৭০ কোটি টাকার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ভূমিকম্পসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে। ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্ববাসীকে। মানুষকে এখন নতুন করে শহরায়ন ও ভবন নির্মাণের বিষয়ে চিনত্মা করতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের উদাহরণ হিসেবে চিলি ও হাইতির ভয়াবহতা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এই প্রেৰাপটে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তৈরি থাকা জরম্নরী। রাতের বেলায় ভূমিকম্প হলে হতাহতের সংখ্যা বাড়বে। তবে উদ্ধার কাজের জন্য দৰ জনশক্তি গড়ে তোলা হলে অনেককেই মৃতু্যর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাঁরা বলেন, সরকারীভাবে সরকার ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার উদ্যোগ নিলেও সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠান এখনও অনেকটাই পিছিয়ে। আবহাওয়া অধিদফতর সময়মতো তথ্য সরররাহ করতে পারে না। নেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। সরকারের এ বিষয়গুলোর প্রতি গুরম্নত্ব দেয়া জরম্নরী। ভূমিকম্পসহ নানা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ্যাকশন পস্ন্যান তৈরির পরার্মশ দেন বিশেষজ্ঞরা।
অনুষ্ঠানে দুর্যোগমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান, সরকারের পৰ থেকে জাতীয় দুর্যোগ কতর্ৃপৰ গঠন করার সিদ্ধানত্ম নেই। তবে সরকারীভাবে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন করার বিষয়টি চূড়ানত্ম। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। এর আগে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকেও বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। ভূমিকম্প প্রতিরোধে পূর্ত মন্ত্রণালয় বিল্ডিং কোড আপডেট করার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। সরকারের পৰে কাজটি করবে বুয়েট কতর্ৃপৰ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মাপে দেশে ১০০ বার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যে কোন সময় ভয়াবহ ভূমিকম্প হতে পারে। এজন্য সরকারের পৰ থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। নতুন বিল্ডিং কোড চূড়ানত্ম করার আগে পুরনো কোড মেনে ভবন নির্মাণ করলে ৰয়ৰতি আরও কম হবে। ইতোমধ্যে সরকার দুর্যোগ মোকাবেলায় ৪২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, তিন হাজার শেল্টার হোম নির্মাণসহ বিভিন্ন পদৰেপ নিয়েছে। আগামী ১/২ বছরের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা দ্বিগুন হবে। তাদের প্রশিৰণের মাধ্যমে ভূমিকম্পের পর উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনার জন্য দৰ করে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭০ কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে আর্থর্কোয়েক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত ভবনগুলোর মধ্যে হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসসহ গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনা ভূমিকম্পের সহায়ক করে তোলা হবে। নতুন প্রযুক্তিতে এসব ভবন নিরাপদ থাকবে। সেমিনারে ভূমিকম্পের মাত্রা, দুর্বলতা চিহ্নিতকরণসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রানত্ম বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এম. এম. সফিউলস্নাহ, সম্মানিত অতিথি ছিলেন বুয়েটের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এম হাবিবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. তাহমিদ এম আল হোসাইনি।

No comments

Powered by Blogger.