মোবাইল সিম- আইনের খড়্গে- ০ সন্ত্রাস ঠেকাতে বিক্রির ওপর কড়াকড়ি ০ আজ থেকে কার্যকর ০ নতুন সিম বিক্রি কমে যাবে

 সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে মোবাইল ফোনের সিম বিক্রির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন থেকে যত্রতত্র ফোনের সিম বিক্রি করা যাবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না থাকলে কেউ সিমকার্ড কিনতে পারবেন না।
১৮ বছরের নিচের সনত্মানদের অভিভাবকের মাধ্যমে কিনতে হবে। সিমকার্ড কিনতে আবেদন করতে হবে নির্ধারিত ফর্মের মাধ্যমে। সকল সিমকার্ডের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। বিষয়টি তদারকির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে দু'টি কমিটি কাজ করবে। রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিমকার্ডের মাধ্যমে কাউকে হুমকি, চাঁদাবাজি বা কোন অপরাধ ঘটলে তার দায়দায়িত্ব মোবাইল কোম্পানিকেই বহন করতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে এটি কার্যকর করা হবে। তবে বর্তমানে চালু সিমে এনআইডি কার্ড জমা বা কোন গ্যারান্টারের প্রয়োজন হবে না। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। তবে সরকারের এই সিদ্ধানত্মে ব্যবসায়িকভাবে কিছুটা ৰতিগ্রসত্ম হলেও বড় ধরনের কোন ৰতির শিকার হবে না মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো। তাঁরা বলছেন, এতে নতুন করে সিম বিক্রি কিছুটা কমে যাবে ঠিকই। কিন্তু চালু সিমগুলো চলতে থাকবে। এতে কোন গ্যারান্টারের প্রয়োজন পড়বে না।
সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে, এখন থেকে সিমকার্ড কিনতে নির্ধারিত ফর্মের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন পত্রের সঙ্গে এনআইডি নম্বর প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এনআইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি ফর্মের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এনআইডি কার্ড যাচাইয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। নির্বাচন কমিশনের যাচাইয়ে এনআইড কার্ড ভুয়া প্রমাণিত বা কোন প্রকার অসঙ্গতি পাওয়া গেলে সে সিম বন্ধ করে দেয়া হবে। সিমকার্ড সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত ফর্মে একজন শনাক্তকারী ব্যক্তির নাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বরসহ থাকতে হবে।
সিমকার্ড সংগ্রহের জন্য দুই ধরনের ফরম থাকবে। একটি বাংলায়, অন্যটি ইংরেজীতে। যে কারণে সিমকার্ড বিক্রেতাকে কমপৰে এসএসসি পাস হতে হবে। সিমকার্ড বিক্রি এবং রেজিস্ট্রেশন মোবাইল কোম্পানিগুলো নিজ দায়িত্বে করবে। সকল সিমকার্ডের রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে। রেজিস্ট্রেশনবিহীন কোন মোবাইলের সিম দিয়ে কেউ কোন প্রকার অপরাধ করলে; কাউকে চাঁদাবাজি বা হুমকি দিলে তার দায়দায়িত্ব মোবাইল কোম্পানিকেই বহন করতে হবে।
এ ছাড়া বৈঠকে সিদ্ধানত্ম হয়, অভিযোগ প্রদানের জন্য সকল মোবাইল কোম্পানির আলাদা নম্বর থাকবে। কোন মোবাইল থেকে কাউকে হুমকি বা চাঁদা দাবি করলে বা যে কোন ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে কোম্পানির নির্ধারিত নম্বরে ফোন করে জানাবে। কোম্পানি এই কলটি যাচাই করে সত্যতার প্রমাণ পেলে আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীকে অবহিত করবে। আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনী কোম্পানির অভিযোগের ভিত্তিতে সংশিস্নষ্টদের বিরম্নদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেবে। একই সঙ্গে রেজিস্ট্রেশনবিহীন কোন নম্বর থেকে ফোন করে হুমকি দিলে সে নম্বর বন্ধ করে দেবে কোম্পানি। ১৮ বছরের নিচে কারও মোবাইল সিমকার্ড কিনতে হলে অভিভাবককে নিয়ে যেতে হবে।
সম্প্রতি দেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হুমকি এবং চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠার প্রোপটে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভায় এ সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। বৈঠকে শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন জানিয়েছেন আজ বৃহস্পতিবার থেকে এটি কার্যকর করা হবে।
এক প্রশ্নের জাবাতে তিনি বলেন, ১৮ বছরের নিচে কেউ সিমকার্ড কিনতে চাইলে তাদের অভিভাবকের মাধ্যমে কিনতে হবে। পাশাপাশি ১৮ বছরের উর্ধে আবেদনকারীকে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ একজন শনাক্তকারীর নাম ও ঠিকানা লাগবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন রাসত্মায় দেখি পানের দোকানদারও সিমকার্ড বিক্রি করছে। নতুন সিদ্ধানত্মে এসএসসি পাস ছাড়া কেউ সিমকার্ড বিক্রি করতে পারবে না। মোবাইল ফোনে সন্ত্রাস নির্মূল করতে এ সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এসব সিদ্ধানত্ম হয়েছে। সিদ্ধানত্ম বাসত্মবায়নের জন্য মোবাইল অপারেটরদের একটি কমিটি থাকবে, পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকটি কমিটিও পর্যবেক হিসেবে কাজ করবে। মোবাইল ফোনে কেউ চাঁদা দাবি করলে বা হুমকি দিলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে এবং সংশিস্নষ্ট মোবাইল অপারেটরকে জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী। মন্ত্রী আরও বলেন, এটি কার্যকর হলে আশা করি মোবাইল সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি অনেকাংশে কমে আসবে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু সাংবাদিকদের বলেন, ুনিবন্ধন ছাড়া বাজারে কোন সিমকার্ড বিক্রি হলে তার দায়দায়িত্ব সংশিস্নষ্ট মোবাইল কোম্পানির ওপর বর্তাবে।
বৈঠকে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান, বিভিন্ন মোবাইল অপারেটিং কোম্পানির প্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গ্রামীণফোনের সূত্র জানায়, সরকার মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে এই সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। এ সিদ্ধানত্মের কথা সকল কোম্পানি আগে থেকে অবহিত রয়েছে। এতে নতুন সিম বিক্রি কমে যাবে। বিশেষ প্রয়োজ না হলে কেউ নতুন করে সিম কিনবে না।
সূত্র জানায়, চালু সিমের ওপর কোন প্রভাব পড়বে না। শুধুমাত্র নতুন সিম সংগ্রহ করতে গেলে এনআইডি কার্ড, গ্যারান্টারের প্রয়োজন হবে। তবে কারো সিম হারানো গেলে নতুন করে সংগ্রহ করার সময় নতুন পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচ কোটির বেশি সিম চালু রয়েছে। মোবাইল যোগাযোগ এত প্রভাব বিসত্মার করেছে যে রিক্সাচালক, পান বিক্রেতা, দিনমজুর থেকে শুরম্ন করে সর্বসত্মরের মানুষ মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। এখন ব্যবসাবাণিজ্যসহ প্রতিটি ৰেত্রেই মোবাইল ফোন অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ বলেন, সিম বিক্রির সময় নিবন্ধনের কথা থাকলেও অনেক ৰেত্রে তা মানা হচ্ছে না। এখন থেকে সরকার সেটি পর্যবেৰণ করবে। কিন্ত্র এর জবাবে গ্রামীণফোনের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, অগে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কিছু সিম বিক্রি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু পরে তা আর হচ্ছে না। তিনি বলেন, বর্তমানে চালু গ্রামীণের সকল সিমের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.