পাল্টে যাবে দক্ষিণ অঞ্চলের অর্থনীতি

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দু্যতিতে উদ্ভাসিত দেশের ছোট্ট একটি জেলা, নাম নড়াইল। ঐতিহাসিক নীল বিদ্রোহ ও তেভাগা আন্দোলনের সাৰী হয়ে আছে এখানকার মাটি।
এটি খুলনা বিভাগের আওতাধীন একটি জেলা। উন্নয়নের দিক থেকে সব সময়ই উপেৰিত ও অবহেলিত এই জেলার জনপদ। এখানকার উন্নয়নে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কোন কিছু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিশেষ করে কালনায় মধুমতি নদীতে সেতু না থাকাই এর প্রধান কারণ। নড়াইল-যশোর, নড়াইল-বেনাপোল, নড়াইল-খুলনা, নড়াইল-ঢাকা রম্নটে ভাটিয়াপাড়া হয়ে কালনাঘাটে মধুমতি নদীতে সেতু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বদলে যাবে খুলনা বিভাগের কৃষি ও অর্থনৈতিক অবস্থা। জ্বালানি খরচ কমসহ যাতায়াত ব্যবস্থা অধিকতর সহজ হবে।
ঢাকার সাথে নড়াইলের দূরত্ব কমবে প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ঢাকার সাথে খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর কৃষি পরিবহন ও বিপণন সহজ হবে। চাঙ্গা হবে অর্থনৈতিক কর্মকা-। কৃষিপণ্য_ধান, চাল, পাট, গম, নারকেল, বাঁশ, শাকসবজি, তরিতরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হাটবাজারে বেচাকেনাসহ পণ্য পরিবহনে সুফল পাবে খুলনা বিভাগ ও আশপাশের অনত্মত ২০টি জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। যাত্রী পরিবহনেও সুবিধা হবে। তাই দৰিণাঞ্চলের উন্নয়নে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনাঘাট পয়েন্টে মধুমতি সেতু নির্মাণ জরম্নরি হয়ে পড়েছে। সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা গেছে, মধুমতির কালনাঘাট পয়েন্টে সেতু নির্মিত হলে নড়াইল থেকে ঢাকার দূরত্বও ২০০ কি. মি. কমে যাবে। সড়কটি শহর ফেরিঘাট মোড় থেকে ঢাকার দূরত্ব হবে ১২৭ কিলোমিটার। যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব হবে ১৬১ এবং খুলনা ২০৩ কি. মি.। খুলনা, মংলা, বাগেরহাট, সাতৰীরা, বেনাপোল, চালনা বদলে যাবে। অথচ বর্তমানে নড়াইল থেকে প্রায় ৩৩০ এবং যশোর থেকে ৩০০ কি. মি. দূরত্বে রয়েছে ঢাকা। মধুমতি, নবগঙ্গা, চিত্রাবিধৌত নড়াইলের তথা দৰিণ বঙ্গের ঐতহ্যবাহী বিনোদন কেন্দ্র নিরিবিলি ও স্বপ্ন বীথি (লোহাগড়া-রামপুরা) দেশ বিদেশের পর্যটকদের নজর কাড়ে। এলাকায় প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনসহ গুণীজন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ, আনত্মর্জাকি খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান, চারণকবি কবিয়াল বিজয় সরকার, জারিশিল্পী মোসলেম উদ্দিন, সুরকার, গীতিকার ও গায়ক কমল দাসগুপ্ত, নৃত্যশিল্পী উদয় শংকর, সেতারবাদক রবি শংকর, ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্ত, ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মতর্ুজা এবং জমিদারদের স্মৃতিধন্য নড়াইল জেলা। অথচ কোন উন্নয়ন নেই। বরাবরই আমরা অবহেলিত। এখানে আমরা যারা উদ্যোক্তা আছি, তারা ভাল কিছু করতে চাইলেও প্রতিপৰ আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা। কালনাঘাট পয়েন্টে মধুমতি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে সেতু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন বদলে যাবে, কৃষি ৰেত্রে উন্নতি হবে। গড়ে উঠবে শিল্পকারখানা, ঢাকার ওপর চাপ কমবে।
নড়াইলে চিত্রা সেতু নির্মাণ ও সেতুতে টোল আদায় বন্ধের পর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ ভাল। আছে ক্রেতা সমাগম। তবে এখন লোহাগড়া উপজেলার কালনাঘাট পয়েন্টে মধুমতি নদীর ওপর ব্রিজ করলে রাজধানী ঢাকা এবং পাশর্্ববতর্ী বিভিন্ন জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও প্রসার হবে।
কালনাঘাট এলাকায় সেতু নির্মাণ নড়াইলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে কালনাঘাট পয়েন্টে সেতু হলে নড়াইল থেকে ঢাকা যেতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লাগবে। এতে জ্বালানি তেল সাশ্রয় হবে। খুলনা বিভাগের বিভিন্ন রম্নটের যানবাহন স্বল্প সময়ে ঢাকা যেতে পারবে। জানা যায়, বর্তমানে এ রম্নটে কালনাঘাট পয়েন্টে ফেরি ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তা দেরি করে চলাচল করে। শুষ্ক মৌসুমে আবার তা নাব্য সঙ্কটের কারণে ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। এতে দুই পাশে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। যাত্রীসাধারণ ও মালবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেৰা করতে হয়। রাতে এই বিড়ম্বনা আরও বেড়ে যায়। ফেরি চলাচল অনিয়মিত হয় পড়ে। তাই সেতু নির্মাণ জরম্নরি বলে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের চালক ও যাত্রী সাধারণ জানিয়েছেন। নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের সূত্রমতে, কালনাঘাট এলাকায় মধুমতি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়টি এশিয়ান হাইওয়ের মধ্যে রয়েছে।
এশিয়ান হাইওয়েসহ মধুমতি নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে নড়াইলবাসী বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ দীর্ঘদিন বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছেন।এলাকাবাসীর এ দাবি ও বাসত্মবতা সংশিস্নষ্ট কর্তৃপৰ অনুধাবন করলে নড়াইল থেকে ঢাকার দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার কমে যাবে। খুলনা, বাগেরহাট, মংলা, সাতৰীরা, যশোর, বেনাপোল, শিল্পনগরী নোয়াপাড়াসহ জেলা বিভাগের বেশিরভাগ জেলা ও গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও বরিশালের মধ্যে অনেক দূরত্ব কমে যাবে। এতে সময় বাঁচবে, তেমনি কাঁচামালসহ কৃষিপণ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্র পরিবহন এবং আমদানি-রফতানি সহজ হবে।
আহমেদ জামান

No comments

Powered by Blogger.