দীর্ঘ সেশনজটের কবলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়- ক্যাম্পাস অনুসন্ধান

 দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যাপীঠ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে ২৪ কি.মি. দেিণ এবং ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে ২২ কি.মি. উত্তরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটসহ নানা সমস্যা বিরাজ করছে, যা ছাত্র- ছাত্রীদের শিক্ষাজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, অনেক বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা কম-বেশি এক থেকে তিন বছরের সেশনজটে পড়েছে। ফলে তাদের ঘাড়ে শিাজীবনের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে এ অতিরিক্ত সময় চেপে বসেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রশাসনের উদাসীনতাই সেশনজটের মূল কারণ। বর্তমানে বিভাগভেদে ২ থেকে আড়াই বছরের সেশনজট বিরাজ করছে। ফলে ৫ বছরের শিাজীবন শেষ করতে লেগে যাচ্ছে প্রায় ৮ বছর। আড়াই বছরের অভিশপ্ত সেশনজটের বোঝা মাথায় নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের ছাত্রী নুসরাত জাহান করবি এবং বাংলা বিভাগের ছাত্রী ফারজানা বাহার সিমি বললেন, কবে পরীা, ফল বের হবে কবে, নতুন বর্ষে পদার্পণের সুযোগ কবে হবে_ এসব প্রশ্ন প্রতিনিয়ত ভাবনায় ফেলে দেয় আমাদের। এর ফলে চাকরি নামের 'সোনার হরিণ' পাওয়ার সুযোগও হাতছাড়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর ভাগ্যে জুটছে বিভিন্ন খেতাব 'আদুভাই, দাদুভাই, দুলাভাই'সহ আরা কত কি! বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি বিভাগের মধ্যে ১০টি বিভাগে এখনও ২ থেকে আড়াই বছরের সেশনজট। বিভাগগুলো হলো আল-কুরআন এ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল-হাদিস এ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, দাওয়াহ এ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান, গণিত, আইন ও মুসলিম বিধান, আল-ফিকহ, কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইংরেজী ও বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। এছাড়া হিসাববিজ্ঞান, বাংলা, ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবস্থাপনা ও তথ্য পদ্ধতি, অর্থনীতি ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্সে সেশনজট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি এবং রাষ্ট্রনীতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগে কোন সেশনজট নেই। ২০০৩-০৪ শিাবর্ষ থেকে ছাত্র ভর্তির মাধ্যমে আল-ফিকহ বিভাগে কাস শুরম্ন হলেও এখনও ওই শিাবর্ষের ছাত্ররা ৪র্থ বর্ষ পরীা শেষ করতে পারেনি। কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, আইন ও মুসলিম বিধান এবং বাংলা বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে অভ্যনত্মরীণ কোন্দলের কারণে শিকরা ইচ্ছাকৃতভাবে মাসের পর মাস পরীার খাতা আটকে রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে ফল প্রকাশ দীর্ঘায়িত হয়। এদিকে থিওলজি এ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের বিভাগ ৩টিতে কাস-পরীা নিয়মিত হয় না। অধিকাংশ শিকের কাস-পরীা গ্রহণে অনীহা রয়েছে। দুপুর ১২টার পরে এ বিভাগগুলোয় গিয়ে দেখা যায় শ্রেণীকগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। ওই বিভাগগুলোর প্রায় শিক ও শিার্থী ১০টার গাড়িতে ক্যাম্পাসে আসেন আর ১২টার গাড়িতে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন বলে জানা গেছে। অথচ ক্যাম্পাসের সময় সকাল ৮টা থেকে ২টা পর্যনত্ম। এ ছাড়া ওই বিভাগগুলোতে সভাপতির কাছ থেকে ছুটি না নিয়েই অনুপস্থিত থাকেন শিকরা। রেজিস্ট্রার এবং ভিসি অফিস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১৭ জন শিকের মধ্যে ৬২ জন শিকই শিা ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। অনেকের নির্ধারিত ছুটি শেষ হলেও তাঁরা ফিরে আসছেন না। তাঁদের বার বার নোটিস দিয়েও কোন কাজ না হওয়ায় কর্তৃপ মামলা পর্যনত্ম করেও তাঁদের ফিরিয়ে আনতে পারেনি। সেশনজট সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিকদের দলীয় রাজনীতি ও একাডেমিক বহিভর্ূত কাজে ব্যসত্ম থাকা। ফলে এক বছরের কোর্স শেষ হতে সময় লেগে যায় ২ থেকে আড়াই বছর। পরীার উত্তরপত্র মূল্যায়ন, বহিঃপরীণ ও অন্যান্য অফিসিয়াল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফল প্রকাশ হতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সময় লাগে প্রায় এক বছর। শিকদের মধ্যে অনেকেই আবার ঢাকা, রাজশাহী, খুলনাসহ অন্যান্য স্থানে বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও ও শিা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। ২-৩ দিনের জন্য ক্যাম্পাসে এসে বেতন তোলেন এবং ২-১টি কাস নেন। ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী অনেক শিকও ঠিকমতো কাস নেন না। শিকদের এ দায়িত্বহীনতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক একাডেমিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে নির্ধারিত সময়ে কোর্স শেষ হচ্ছে না। পরীা শেষ হচ্ছে না। ২-১টি পরীা হলেও ফল প্রকাশ হচ্ছে না। ফলে দীর্ঘায়িত হচ্ছে সেশনজট। দিনের পর দিন চলছে এ অবস্থা। আর অভিভাবকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এম আলাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, সেশনজট ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি বিরাট অভিশাপ। তাদের এ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খুবই আনত্মরিক। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওই বিভাগগুলোর সভাপতিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যাগুলো শনাক্ত করে সেশনজট দূর করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
০ ইমাদুল হক প্রিন্স

No comments

Powered by Blogger.