ক্যাম্পাস অনুভূতি- দায়ী কারা?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের গর্ব। অথচ আধিপত্য বিসত্মার, সিট দখলকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস বন্ধ করে আমরা কার তি করছি? শিকদের কাছে ছাত্ররা সনত্মানতুল্য।
এক শিকের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, স্যার, কেমন আছেন? শিক মন খারাপ করে বললেন, সনত্মানেরা যদি নিজের কাছে না থাকে তাহলে আমরা কেমন করে ভাল থাকি?
জানতে চেয়েছিলাম রাবির এক কর্মচারী ও এক কর্মকর্তার কাছে ক্যাম্পাস খোলা, কিন্তু শিাথর্ীরা নেই, কেমন লাগছে? বললেন, ২৮ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে থাকতে থাকতে অভ্যসত্ম হয়ে গেছি। তাই ক্যাম্পাসে তারা না থাকলে ভাল লাগে না। সময় কাটতে চায় না। মা-বাবা অনেক আশা আকাঙ্ৰা নিয়ে উচ্চশিা গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় সনত্মানকে। ছেলে একদিন মানুষের মতো মানুষ হয়ে সংসারের হাল ধরবে। অথচ সেই পিতাকে যদি সনত্মানের লাশ কাঁধে নিতে হয় তাহলে এর চেয়ে কষ্টের আর কী আছে? রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে আমার প্রশ্ন, আদর্শগত অমিল থাকতেই পারে। তাই বলে কেন আমরা এক ভাই আরেক ভাইকে মারছি? মানুষ গড়ার কারখানায় মানুষ না হয়ে কেউ যদি লাশ হয়ে বাড়ি ফেরে তাহলে তার বাবা-মা কেমন করে এই লাশের বোঝা সহ্য করবে! ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের অধিকার আদায়ের একটা জায়গা। অথচ এই ছাত্র রাজনীতিকে এখন কেউই আর ভাল চোখে দেখে না। অভিভাবকেরা মনে করেন ছাত্র রাজনীতি মানেই টেন্ডার, চাঁদাবাজি, মারামারি, হানাহানি, খুন।
গত মাসের ৯ ফেব্রম্নয়ারি গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের হামলায় ছাত্রলীগ কমর্ী, গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্র ফারম্নক হোসেন নিহত হন। আহত হয়েছে দু'গ্রম্নপের অর্ধশত নেতাকমর্ী। তার একদিন পরেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে ছাত্রলীগের দু'গ্রম্নপের সংঘর্ষের জের ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক নিহত হন। এছাড়াও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে ছাত্রলীগের হামলায় রাজশাহী পলিটেকনিকের রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী সানি নিহত হন।
গত বছরের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী নিহত হন। একই বছরের ৩০ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেধাবী ছাত্র রাজিবের আর মাত্র ২০ দিন ইন্টার্নির পর গায়ে সাদা এ্যাপ্রোন আর কানে স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে পুরোদমে ডাক্তার সেজে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তিনি বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু তাঁর গায়ে এ্যাপ্রোনের বদলে ছিল কাফনের সাদা কাপড়, আর কানে ছিল তুলা! ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিজ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকমর্ীর হামলায় নিহত হন এই মেধাবী ছাত্র। এর নামই কি রাজনীতি? এর নামই যদি রাজনীতি হয় তাহলে আমরা এই রাজনীতি চাই না।
একজন কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর বাবা যখন তাঁর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা পাঠান ছেলেমেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করতে। দেখতে থাকেন আগামী দিনের সোনালি স্বপ্ন। ঠিক তখন তারা নিজেরা মারামারি করে সেশনজট তৈরি করে ৪ বছরের কোর্স ৬ বছর লাগিয়ে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন একের পর এক হত্যাকা- ক্যাম্পাসের সাধারণ শিাথর্ীদের ভীত করে তুলেছে। এই পরিস্থিতির জন্য আসলে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেও জানে না কারা দায়ী?

০ সাইফুর রহমান আকন্দ
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ৩য় বর্ষ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.