প্রেমকৃষ্ণ খুনের ছক কষা হয়েছে জেল থেকে!- অভিযোগের তীর ডাকাত শহীদের সহযোগীর দিকে

কারাগারে থেকেই সন্ত্রাসীরা আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে! হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো এখন গুঞ্জন পুলিশও মানতে বাধ্য হচ্ছে। অনত্মত শাঁখারীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রেমকৃষ্ণ খুনের সঙ্গে কারাগারে পূর্ব থেকেই গুলি ও চাঁদাবাজির ঘটনায় আটক নান্টুই জড়িত বলে পুলিশও সন্দেহ করছে।
পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত শহীদের সহযোগী নান্টু জেলে থাকলেও তার পস্ন্যান অনুযায়ীই সহযোগীরা প্রেমকৃষ্ণকে খুন করে থাকতে পারে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার অভিমত। নান্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই কিলারদের চিহ্নিত করা যাবে_এমন ধারণা থেকে ১০ দিনের পুলিশী রিমান্ড চেয়ে শনিবার নান্টুকে আদালতে তোলা হয়।
রাজধানীতে এখন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের অনুপ্রবেশ বেড়ে গেছে বলে ফেব্রুয়ারি মাসে রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত অপরাধ বিষয়ক সভায় খোদ ডিএমপি কমিশনার শহীদুল হক স্বীকার করেছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। যে কারণে প্রকাশ্যে উপযর্ুপরি গুলি করে বা কুপিয়ে নৃশংসতার স্বাৰর রেখে একের পর এক সংঘটিত হচ্ছে হত্যাকা-। ছিনতাই, চাঁদাবাজি হঠাৎ বেড়ে যাবার নেপথ্যেও রয়েছে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা। বিপুল অঙ্কের কালো টাকা ঢেলে দেশে অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশের মাত্রাবৃদ্ধির পাশাপাশি সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য বিপুল বরাদ্দই এ কাজে সংশিস্নষ্টদের বেশি উৎসাহ যোগাচ্ছে। সম্প্রতি সকল খুনের ঘটনাতেই বড় ভাইদের যোগসাজশ পাওয়ায় তা কোন বিশেষ ইঙ্গিত বহন করছে বলেই এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনত্মব্য করেন। চারদলীয় জোট আমলে চিহ্নিত এবং পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে বিশেষ ভবনের ইশারায় তখন গ্রেফতার না করে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার চক্রটিই এবার এ কাজে পলাতকদের ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মহল বিশেষের শেল্টারে সে সময় তালিকা থেকে বাদপড়া, পার্শ্ববতর্ী দেশ ভারতে লুকিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী মহল এবং কারাগারে আটক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি সক্রিয় বলে তথ্য মিলেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পুরনো ঢাকায় ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আহাম্মদ হাজী এবং একই দিনে বাবুবাজারে চাল ব্যবসায়ী আফিলউদ্দিনকে উপর্যুপরি গুলি করে হত্যার সঙ্গে সংশিস্নষ্ট বলে অভিযুক্ত ডাকাত শহীদকেই আবার প্রেমকৃষ্ণ হত্যাকা-ের সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকার আভাস পাওয়া গেছে। ডাকাত শহীদ ভারতে গ্রেফতার এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে বলে তথ্য দিয়েছেন সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুলস্নাহ আরেফ। তারপরেও কোনভাবে তার সঙ্গে ঢাকায় অবস্থানকারী তার কিলার চক্রের যোগাযোগ ঘটছে বলেই নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। কারাগারে আটক লালবাগের সাবেক সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং পরবতর্ীতে হাজী টাইটেলধারী পিচ্চি কামাল এবং অন্য চাঁদাবাজির ঘটনায় কারাগারে আটক এবং প্রেমকৃষ্ণ হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ত বলে সন্দেহভাজন নান্টু ভারত এবং বাংলাদেশে যাতায়াতের মাধ্যমে উভয়ের সংযোগ রৰা করত বলেও তথ্য মিলেছে। কারাগার থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের একাধিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশের পর ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল আদালতে উপস্থিত থাকাকালীন তাকে ডান্ডাবেড়িও পরানো হয়েছিল। এরা আদালতে বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দিতে গেলেই সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ করে থাকতে পারে বলে কারা কতর্ৃপৰই সে সময় পত্রিকানত্মরে মনত্মব্য করেছিল। আদালত সূত্র মতে, সেই ডান্ডাবেড়ি নাকি আবার খুলেও ফেলা হয়েছে।
সূত্রাপুর থানা পুলিশ মনে করছে, যে কোনভাবেই হোক কারাগারে থাকা নান্টুর পরিকল্পনা মোতাবেকই ডাকাত শহীদের নির্দেশে স্বর্ণ ব্যবসায়ী খুন হয়েছে। প্রেমকৃষ্ণ হত্যা মামলার তদনত্মকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবীর জানান, যে মোবাইল ফোন নম্বর থেকে প্রেমকৃষ্ণকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল ওই নম্বরটি শনাক্ত করার পরই নান্টুর সম্পৃক্ততা পরিষ্কার হয়েছে। ওই মোবাইল ফোন নম্বর থেকে প্রেমকৃষ্ণ ছাড়া আরও তিন ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। এদের একজনকে গত মাসে গুলি করে হত্যার চেষ্টাও চালায় তারা। ওই ঘটনায় পুলিশ গত ২৬ ফেব্রম্নয়ারি মূল নায়ক নান্টুকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। তদনত্মকারী কর্মকর্তার দাবি, প্রেমকৃষ্ণ খুনের সঙ্গে নান্টু জড়িত। ওমর ফারম্নক ওরফে আল-আমিন ওরফে নান্টু (৩২) জেলে থাকলেও তার পস্ন্যান অনুযায়ীই সহযোগীরা প্রেমকৃষ্ণকে খুন করে থাকতে পারে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হানিফও তেমনটাই মনে করছেন। এরা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী এবং বড় ভাইদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কর্ রেখে একই নেটওয়ার্কে কাজ করে বলেও তিনি মনত্মব্য করেন।
এদিকে প্রেমকৃষ্ণ হত্যাকারী একজনকে শ্যোন এ্যারেস্ট দেখানো ছাড়া মামলার কোন অগ্রগতি না থাকায় ৰোভে ফুঁসে উঠেছেন তাঁতীবাজার এবং শাঁখারীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মহল। জনকণ্ঠকে তাঁরা বলেন, চাঁদাবাজদের হাত থেকে প্রশাসন তাদের রৰা করতে না পারলে তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ধর্মঘটে পর্যনত্ম যাবার চিনত্মা- ভাবনা করছেন। বিৰুব্ধ এক স্বর্ণব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রেমকৃষ্ণের মতো আরও অনেকেই চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের টার্গেটে রয়েছেন। এমনকি প্রেমকৃষ্ণের আপন ভাই অমল কৃষ্ণকে প্রেমের পরই হত্যার হুমকি দিয়ে রেখেছে ঘাতকচক্র। অনেকে অভিযোগ করেন, এলাকার চিহ্নিত চাাঁদাবাজ যাদের সঙ্গে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ রয়েছে তাদের পুলিশও চেনে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণেই ধরছে না বা এড়িয়ে যাচ্ছে। এদিকে জীবনের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে অনেক ব্যবসায়ীই নিজেকে বাড়ির মধ্যে আবদ্ধ বা গৃহবন্দী করে ফেলেছেন বলেও তথ্য মিলেছে।
তবে সূত্রাপুর এবং কোতোয়ালি থানা পুলিশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবিকারী সন্ত্রাসীদের সহজে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। যে মোবাইল ফোন নম্বর থেকে চাঁদা চাওয়া হয় তা ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করা। এছাড়াও চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীরা অনেক সময় ফোন-ফ্যাক্সের দোকান থেকেও চাঁদা চেয়ে হুমকি দিয়ে থাকে। পুলিশ জানায়, পুরনো ঢাকা এলাকায় মূলত চাঁদাবাজি করছে ডাকাত শহীদ। দেশের বাইরে আত্মগোপন করে থেকে তার সহযোগীদের দিয়ে সে চাঁদা আদায় করছে।

No comments

Powered by Blogger.