আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না বিএনপি- কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত মতবিরোধ

কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যনত্ম নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ জন্যই আন্দোলনের ব্যাপারে আরও অপেৰা করতে বলেছেন দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
৮ ডিসেম্বর দলের কাউন্সিল হয়। কাউন্সিলের এক মাসের মাথায় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হলেও যেসব জেলা কমিটি হয়নি সেগুলোর সম্মেলন করা হচ্ছে না। সারাদেশে এখনও প্রায় ১৬টি জেলা কমিটি করতে পারেনি বিএনপি। এসব জেলায় কমিটি গঠন নিয়ে বিবাদ চলছে। এ ছাড়াও রয়েছে দলের অঙ্গ-সংগঠন কমিটি। ইতোমধ্যে ছাত্রদল ও যুবদল কমিটি ঘোষণা হয়েছে। এসব কমিটি নিয়ে কেন্দ্র থেকে তৃনমূল পর্যনত্ম নেতাদের মধ্যে অসনত্মোষ বিরাজ করছে। এ জন্যই বর্তমান সরকারের বিরম্নদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার আগে কমিটি গঠন ও দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
সরকারের বিরম্নদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের প্রস্তুতিপূর্বক দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে বিএনপির মাসব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচী চলছে। গণসংযোগের অংশ হিসেবে সারাদেশের জেলা শহরে সফর করবেন দলের সিনিয়র নেতারা। জেলা সদরে সমাবেশ করার পর ৬ বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হবে। ওই সমাবেশে বিরোধী দলের নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। তখন থেকেই সরকারের বিরম্নদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিতে পারেন বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া। আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণার আগে সারাদেশে জেলা কমিটি, বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটি, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, কৃষক দল, জাসাস, তাঁতি দল, মৎস্যজীবী, মুক্তিযোদ্ধা দলসহ সকল অঙ্গ সংগঠন কমিটি গঠন করা হবে দলের এক নেতা জানান।
সরকার বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রাজনীতিতে আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিএনপিতে সেটা অব্যাহত আছে। সরকার পতনের আন্দোলন এই মুহূর্তে নয়। জন আকাঙ্ৰা ও অংশগ্রহণ তীব্র হলে আন্দোলন এমনিতেই দানা বেঁধে উঠবে। জনগণ তখন বিরোধী দলের ডাকের অপোয় থাকবে না। অতীতের সরকার বিরোধী যত আন্দোলন হয়েছে তা জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কখনও সফল হয়নি।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির মহানগর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জাতীয় ও আনত্মর্জাতিকভাবে আমরা একটি জটিল অবস্থার মধ্যে আছি। আর এ সব কিছু বিবেচনা করেই আন্দোলনের কর্মসূচী দিতে হবে। বর্তমানে সারাদেশে গণসংযোগ কর্মসূচী চলছে। আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে সারাদেশে বিএনপির জনসংযোগের কাজ শেষ হবে। এ সময়ের মধ্যে ৬টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখবেন। ওই সমাবেশ থেকে আন্দোলনসহ পরবর্তী কর্মসূচী নির্ধারণ হবে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলা খারিজ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের কাছে গয়েশ্বর রায় বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে আমরা সাধুবাদ জানাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আইন সকলের জন্য সমান। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ সুযোগ পাবার অধিকার সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিনটি মামলার নিষ্পত্তি আদালতে হওয়ায় সনত্মোষ প্রকাশ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জনশ্রতি রয়েছে, সরকার যে দলের থাকে আদালত সে নিয়মে চলে। কিন্তু আমরা মনে করতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর বিরম্নদ্ধে ওই মামলাগুলোর েেত্র তা হয়নি। তবে এ স্বচ্ছতা অন্যরা যেন পায়, আমরা তা আশা করছি। উলেস্নখ্য, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলে শেখ হাসিনার বিরম্নদ্ধে নভোথিয়েটার প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির তিনটি মামলা বৃহস্পতিবার বাতিল করে হাইকোর্ট।
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরম্নদ্ধে হয়রানিমূলক অনেক মামলা রয়েছে জানিয়ে সেগুলো প্রত্যাহার কিংবা দ্রম্নত নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের নির্বাহী প্রধান। তিনিসহ তার দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে, অন্যদিকে বিরোধী দলের বিরম্নদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়নি। যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকারী দলের নেতাদের মামলাগুলো নির্বাহী আদেশে কিংবা আইনী প্রক্রিয়ায় সমাধান হচ্ছে, তা যেন বিরোধী দলের েেত্রও হয়। এমনিতেই কথা উঠছে আদালত এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এ্যাটর্নি জেনারেলের কর্মকা-ে সেই বিষয়টিকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর পরও আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রীর মামলার ফয়সালা সঠিক প্রক্রিয়াই শেষ হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.