অর্থনৈতিক ৰেত্রে সরকারের কি দুশ্চিনত্মার কোন কারণ আছে? by ড. আর এম. দেবনাথ

২০০৯-১০ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সরকারের জন্য অর্থনৈতিক ৰেত্রে অস্বসত্মিকর কিছু না ঘটলেও দ্বিতীয়ার্ধে তা ঘটতে পারে। বিশ্বমন্দার প্রেৰাপটে ২০০৯ ক্যালেন্ডার বছরে অর্থনীতির 'পারফরমেন্স' মোটামুটি ভালই ছিল বলা যায়।
কিন্তু আমরা যদি অর্থবছর ধরে আলোচনা করতে চাই তাহলে চিত্রটি একটু ভিন্ন হয়। ২০০৯-১০ অর্থবছরের ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। আমরা এখন অর্থবছরের সপ্তম মাসে আছি। দেখতে দেখতে এ মাসও চলে যাবে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে নতুন বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরম্ন হবে। তখন কি দাঁড়াবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তা ভাববার এখনই সময়। দৃশ্যত, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস ভাল গেলেও সাম্প্রতিকতম তথ্যে যে প্রবণতা ধরা পড়ছে তা সুখপ্রদ নয়। দু'দিন আগেও আমি লিখেছি অস্বসত্মিকর কিছু নেই। কিন্তু কিছু কিছু তথ্য এখন পাওয়া যাচ্ছে যা ভিন্ন কথা বলতে চায়। প্রথমেই ধরা যাক রফতানির কথা। এৰেত্রে অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের চিত্র ততটা পরিষ্কার ছিল না। কিন্তু জুলাই-ডিসেম্বরের তথ্য মোটামুটি পরিষ্কার। খবরের কাগজে প্রকাশিত 'রফতানি উন্নয়ন বু্যরো (ইপিবি)' তথ্যে দেখা যাচ্ছে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রফতানি হ্রাস পেয়েছে ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। যদি শুধু নবেম্বর মাসের হিসেব ধরা হয় তাহলে রফতানি হ্রাসের পরিমাণ দাঁড়ায় আরও বেশি অর্থাৎ ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে পূর্ববতর্ী বছরের তুলনায় বর্তমান অর্থবছরে ধীরে ধীরে রফতানি হ্রাসের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রফতানির পরিমাণ ছিল ৬০৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বলা বাহুল্য রফতানি হ্রাসের প্রধানতম কারণ হচ্ছে 'রেডিমেড গার্মেন্টসের' রফতানি হ্রাস। 'বিজিএমইএ' এবং 'বিকেএমইএ' নামীয় মালিকদের দুটো সংগঠন যা বলছে তা যদি আংশিকও সত্য হয় তাহলে এ ৰেত্রে সরকারের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ বাংলাদেশ রফতানিতে কার্যত রেডিমেড গার্মেন্টসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এৰেত্রে কোন রকমের বিপর্যয় রফতানি আয়ের ৰেত্রে বিপর্যয় এনে দেবে। আর তা ঘটলে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে মারাত্মকভাবে টান পড়বে।
আমদানি ৰেত্রে ঋণপত্র খোলার চিত্রটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। গত এক বছরের অর্থাৎ ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের তথ্য ধরলে একটি চিত্র পাওয়া যায়, আবার অর্থবছরের ছয় মাসের তথ্য ধরলে আরেকটি চিত্র পাওয়া যায়। ক্যালেন্ডার বছর ২০০৯-এর হিসেবে ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ এক দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু অর্থবছরের ছয় মাসের হিসেবে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ ২৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। বেসরকারী গবেষণা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে বললে বলতে হয়, 'এলসি' খোলার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বৃদ্ধি দৃশ্যত ভাল লৰণ। বলা হচ্ছে, মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ঋণপত্রের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা যদি হয় তা হলে এটি আরও ভাল লৰণ। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সরকারের এ ৰেত্রে দুশ্চিনত্মার কারণ কম।
রাজস্ব ৰেত্রে সরকারের দুশ্চিনত্মার কারণ আছে। রাজস্বের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে লৰ্যমাত্রার তুলনায় 'জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের' আদায় কম হয়েছে দশমিক ছয় শতাংশ। সারা বছরের যে লৰ্যমাত্রা রয়েছে তা বর্তমান গতিতে বাসত্মবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। আমদানি সম্পর্কিত শুল্ক আদায়ের হার খুবই কম। এর পরিমাণ লৰ্যমাত্রার তুলনায় অর্থেকের চেয়েও কম। তবে আশার কথা, আয়কর আদায়ের পরিমাণ সনত্মোষজনক। কিন্তু গবেষণা সংস্থা 'সিপিডি'র সংগৃহীত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কালো টাকা ঘোষণার পরিমাণ খুবই কম। 'কালো' টাকার ব্যাপারে দেশে একটা প্রতিকূল জনমত আছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতিও ছিল 'কালো' টাকার বিরম্নদ্ধে। এতদসত্ত্বেও ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে অদৃশ্য এক চাপে সরকার 'কালো' টাকা বৈধ করার একটা পথ করে দেয়। এতে সরকারের আশা ছিল প্রচুর টাকা 'সাদা' হবে। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এ সময়ে 'অপ্রদর্শিত' আয় ঘোষিত হয়েছে মাত্র তিন কোটি টাকা। এর থেকে সরকার কর হিসেবে পেয়েছে মাত্র ৩৫ লাখ টাকা। সরকারের প্রত্যাশা ছিল 'কালো' টাকা বিনিয়োগে আসবে। কিন্তু এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সে আশা দুরাশা হিসেবেই থাকবে। তবে এ ৰেত্রে একটা বিষয় লৰণীয়। অনেকের ধারণা 'কালো' টাকা বা সরকারের ভাষায় অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োজিত হচ্ছে শেয়ারবাজারে। শেয়ারবাজার প্রতিদিন রেকর্ড স্থাপন করছে। রেকর্ডের খবর যেমন প্রতিদিন ছাপা হচ্ছে তেমনি এ বাজারে কী ঘটছে তার খবরও ছাপা হচ্ছে। আলোচনায় আসছে 'আইপিও', জেড ক্যাটাগরির শেয়ার লেনদেনের ঘটনা এবং প্রি-আইপিও প্রাইভেট পেস্নসমেন্টের ঘটনা ইত্যাদি। এ বাজারে নানা ধরনের জালিয়াতি হচ্ছে, এ বাজার থেকে একটি সিন্ডিকেট নানা কায়দায় প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। জানুয়ারির ১২ তারিখের একটি কাগজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গোয়েন্দা সংস্থা এসব জালিয়াতি রোধে নানা সুপারিশ সরকারের কাছে করেছে। বলাই যায় এই জালিয়াতি-সৃষ্ট 'বুদ্বুদ' শেয়ারবাজারকে টালমাটাল অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। 'বুদ্বুদ' যদি বিশ্বাস নাও করি তবু একটি তথ্য খুবই প্রণিধানযোগ্য। শেয়ারবাজারের অর্ধেক হচ্ছে ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। এর দাম উঠলেই বাজার ওঠে, এর দাম নামলেই বাজার নামে। 'মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন' বলতে বলতে যে অহঙ্কার স্টকব্রোকাররা করেন তাতে 'মেনুফ্যাকচারিং' খাতের অবদান লৰণীয় নয়। এ খাতে বিনিয়োগ লৰণীয় নয়। এ খাতের শেয়ারের প্রতি মার্কেট ম্যানিপুলেটররাও দৃষ্টি দেয় না। বস্তুত মেনুফ্যাকচারিং খাতে বিনিয়োগে এক মন্থরতা নেমে এসেছে। মানুষ নেমেছে শেয়ারবাজারের কিছু শেয়ারের কেনা-বেচায়।
বিনিয়োগের ৰেত্রটিই সরকারের জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। এ ৰেত্রে আশাব্যঞ্জক কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথমেই ধরা যাক সরকারী বিনিয়োগের প্রশ্নটি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণাকালে একটি উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন বাজেটের কথা বলেন। তিনি নিজেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীকে উচ্চাভিলাষী বলেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল। তাঁর মতে 'টার্গেটটা' বেশি থাকলে সবাই তা অর্জনের চেষ্টা করে। এতে কাজ বেশি হয়। এ যুক্তিতে তিনি বর্তমান অর্থবছরের জন্য 'এডিপি'তে বরাদ্দ রাখেন ৩০,৫০০ কোটি টাকা। এটি রেকর্ড পরিমাণ টাকা। গেল অর্থবছরের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। বরাদ্দ বেশি বোঝা গেল, কিন্তু বাসত্মবায়নের অবস্থা কী? অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে 'এডিপি' বাসত্মবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ। তার মানে বাসত্মবায়নের পরিমাণ হচ্ছে মোটামুটি এক-চতুর্থাংশ। আগামী ছয় মাসে বাসত্মবায়ন করলে হবে বাকি তিন-চতুর্থাংশ 'এডিপি'। এটি কী সম্ভব? হতেও পারে। কারণ সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে আমরা দেখছি 'এডিপি' অর্থবছরের ৰেত্রের তিন মাসে ৯৫ শতাংশ বাসত্মবায়িত হয়ে যায়। এটি কী খাতাপত্রে না বাসত্মবে তা স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া কেউ জানেন বলে মনে হয় না। এতদসত্ত্বেও সর্বশেষ একটি খবরে দেখতে পেলাম, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার ৬ শতাংশ হ্রাস হতে পারে। টাকার অংকে তা হবে ২০০০ কোটি টাকা। যদি তা হয় তা হলে এডিপির আকার হবে ৩০,৫০০ কোটি টাকার স্থলে ২৮,৫০০ কোটি টাকা। এডিপি কাটছাঁটের কারণ হচ্ছে, অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা। বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাসত্মবায়নে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রকাশিত একটি খবর থেকে জানা যাচ্ছে, বরাদ্দকৃত টাকার মাত্র ১৬ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। গেল ছয় মাসে বিদু্যত মন্ত্রণালয় খরচ করতে পেরেছে মাত্র ২২ শতাংশ টাকা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২৭ শতাংশ, জনসম্পদ মন্ত্রণালয় ১৮ শতাংশ, গৃহায়ন মন্ত্রণালয় ৪ শতাংশ, শিৰা মন্ত্রণালয় ৩৩ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয় ৩৪ শতাংশ, প্রাথমিক শিৰা মন্ত্রণালয় ৩৯ শতাংশ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ৩৯ শতাংশ টাকা। এমতাবস্থায় সরকারী বিনিয়োগের অবস্থা কী তা সহজেই অনুমেয়। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতাকালে আমাদের একটি নতুন ধারণা উপহার দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে বিনিয়োগের কথা। তখন আমরা সবাই এই 'পিপিপি' সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছি। বলেছি, এটি হয়েছে যুগোপযোগী একটি পদৰেপ। অর্থমন্ত্রী 'পিপিপি'র আওতায় প্রকল্প গ্রহণের সুবিদার্থে নতুন তিনটি খাত সৃষ্টির প্রসত্মাব করেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কারিগরি সহায়তা খাত। এ খাতে তিনি রেখেছেন ১০০ কোটি টাকা। বেসরকারী খাতে উৎসাহ সৃষ্টির জন্য ভতর্ুকি বা বীজ অর্থস্বরূপ 'ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং'এর জন্য তিনি বাজেটে রেখেছেন ৩০০ কোটি টাকা। আর 'পিপিপি' বাজেটে রেখেছেন ২,১০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২৫০০ কোটি টাকা। এ টাকা খরচের কোন ব্যবস্থা হয়েছে কী? খবরে প্রকাশ, ২৫০০ কোটি টাকার একটি টাকাও খরচ হয়নি। 'পিপিপি'র দায়িত্ব ছিল পূর্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাতে। এখন তার দায়িত্বে নিয়োজিত হয়েছে 'বিনিয়োগ বোর্ড।' এখন পর্যনত্ম আমরা জানি না আসলে এ ৰেত্রে কী হচ্ছে। গাইডলাইন করতে করতেই যদি এতদিন যায় তাহলে ২৫০০ কোটি টাকা যে বর্তমান অর্থবছরে অব্যয়িত থাকবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
বিদেশী বিনিয়োগের পরিস্থিতি কী উৎসাহব্যঞ্জক? মোটেই নয়। এ ৰেত্রেও সরকারের নড়েচড়ে বসা দরকার। বিদেশী প্রত্যৰ বিনিয়োগ যাকে বলা হয় 'এফডিআই' (ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) তা অর্থবছরের প্রথম চার মাসে অর্ধেকে হ্রাস পেয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে যে পরিমাণ 'এফডিআই' এসিছিল এবারের প্রথম চার মাসে এসেছে তার অর্ধেক। এটিই শেষ চিত্র নয়। বস্তুতপৰে 'এফডিআই'-এর ৰেত্রে প্রবৃদ্ধির হার নেতিবাচক। কারণ এফডিআই শুধু আসে না। এ খাতে প্রচুর টাকা বিদেশে চলেও যায়। আসা ও যাওয়ার মধ্যে আসার পরিমাণ বেশি না হলে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণ ঘটে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে এটিই ঘটেছে। অশঙ্কা একই ধারা অব্যাহত আছে। এদিকে শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ যাকে বলা হয় 'পোর্টফলিও ইনভেস্টমেন্ট' তার প্রবৃদ্ধির হারও নেতিবাচক। বিদেশী বিনিয়োগ প্রকৃত পৰে স্বয়ংক্রিয় কোন বিষয় নয়। দেশী বিনিয়োগের চিত্রটি যদি সনত্মোষজনক না হয় তাহলে বিদেশী বিনিয়োগও বাড়ে না। আমাদের ৰেত্রেও তাই দেখা যায়। এর একটা বড় লৰণ ব্যাংকিং খাতের অতিরিক্ত তারল্য (লিকু্যইডিটি)। সকল তফসিলী ব্যাংককে তাদের যার যার আমানতের ১৮ শতাংশ পরিমাণ টাকা 'লিকু্যইডিটি' হিসেবে রাখতে হয়। এর একটা অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ হিসেবে (সিআরআর) এবং বাকিটা ব্যাংকে নগদ এবং সরকারী সিকিউরিটিতে রাখতে হয়। কোন ব্যাংকের যদি এই ১৮ শতাংশের ওপরে টাকা থাকে তাকেই বলা হয় অতিরিক্ত তারল্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০০৮ সালের অক্টোবরে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ২০,৮৫০ কোটি টাকা। সেই স্থলে ২০০৯ সালের অক্টোবরে তা উন্নীত হয়েছে ৩৫,১০০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে ১৪,২৫০ কোটি টাকা তারল্য বেড়েছে। দেশে তফসিলী ব্যাংকের সংখ্যা ৪৮টি। যতটুকু জানি প্রায় সব ব্যাংকেরই তারল্য অবস্থা একই। তারল্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। অনেক কারণে এর মধ্যে একটি হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের উলস্নম্ফন। অবশ্য যদি টাকা বিনিয়োজিত হতো তাহলে এ অবস্থা হতো না। ব্যাংকে টাকা আছে। কিন্তু ঋণগ্রহীতা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার কমিয়েছে। ব্যবসায়িক লেনদেনের ওপর চার্জও কমিয়েছে। কিন্তু ঋণের প্রবাহ আশানুরূপ বাড়ছে না। আমদানি ৰেত্রে ঋণের যে চাহিদা হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। রফতানিতেও একই অবস্থা। অভ্যনত্মরীণ বাজারেও ঋণের চাহিদা কম। ঘটনাক্রমে আমাদের উৎপাদন কার্যক্রম রফতানিমুখী হওয়ায় এবং সেই রফতানি মার্কেট মন্দাপীড়িত হওয়ায় অভ্যনত্মরীণ ঋণ চাহিদায় তার প্রভাব পড়ছে। এর সপৰে তথ্য আছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে অভ্যনত্মরীন বেড়েছে মাত্র ৩.৮ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরে একই সময় তা বেড়েছিল ৭.০৪ শতাংশ।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, আগামী ৬ মাস সরকার অর্থনীতি ৰেত্রে বেশকিছুটা চাপের মধ্যে থাকবে। এ চাপ অনুভূত হবে রফতানি ৰেত্রে, রাজস্ব আদায়ের ৰেত্রে, 'বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী' বাসত্মবায়নের ৰেত্রে। ব্যাংকিং খাতের অতিরিক্ত তারল্যও সরকারের জন্য একটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। অতিরিক্ত তারল্য ব্যবস্থাপনা না করতে পারলে তা মুদ্রাস্ফীতির জন্ম দিতে পারে। বারো মাসের গড়ের ভিত্তিতে ২০০৯ সালের অক্টোবরে মুদ্রাস্ফীতি ৯.৮ শতাংশ থেকে ৫.১৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু দুশ্চিনত্মার কারণ অন্যত্র। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ২০০৯-এর অক্টোবরে ৬.৫১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। খাদ্যশস্য এবং খাদ্যদ্রব্যের মূলা বৃদ্ধিই এর বড় কারণ। আগামী দিনে এ ৰেত্রে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। সবচেয়ে বেশি দুশ্চিনত্মার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিনিয়োগের বিষয়টি। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগের চিত্রটি মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। আগামীতে এৰেত্রে নড়াচড়া শুরম্ন হবে তাও মনে হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আগামী ৬ মাসে খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে কৃষি খাত। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বলতে হয় বোরো ফসল। বোরো ফসলের ওপর মূল্যস্ফীতি যেমন নির্ভর করবে, তেমনি নির্ভর করবে খাদ্য নিরাপত্তা। অতএব করণীয়? আশা করি করণীয় সম্পর্কে আর নতুন কিছু বলার প্রয়োজন নেই।

No comments

Powered by Blogger.