আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি- অনিয়মই নিয়োগের নিয়ম! by শরিফুল হাসান

বুয়েটের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে তা বাতিল করা, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়া পরীক্ষা নেওয়া, পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ, এক পদের জন্য পরীক্ষা নিয়ে অন্য পদে নিয়োগ, নিয়োগে মেধা তালিকা অগ্রাহ্য করা—এই হচ্ছে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানিতে লোক নিয়োগের চিত্র।
এই প্রক্রিয়ায় দুই বছরে সেখানে ১২০ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে।
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নূরুল আলম আর চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। তাঁদের দুজনের বাড়িই কুষ্টিয়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, পরিচালনা পর্ষদের প্রধান কাজ বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনিয়ম চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু আনোয়ার হোসেন কোনো বিষয়ে প্রশ্ন না তুলে এমডিকে অনিয়ম-দুর্নীতি করতে সহায়তা করছেন।
সর্বশেষ নিয়োগ: ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণাঙ্গ কোম্পানি হিসেবে কাজ শুরু করে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের যেকোনো পদ শূন্য হলে সেখানে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, পরীক্ষা নিয়ে লোক নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু কেন্দ্রের সহকারী ব্যবস্থাপক (ক্রয়) পদে ৩ জানুয়ারি যাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি ওই পদের জন্য পরীক্ষাই দেননি।
গত ৩১ ডিসেম্বর সহকারী ব্যবস্থাপকের ওই পদটি শূন্য হয়। ৩ জানুয়ারি নিয়োগ পান এমদাদুল হক। দুই দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষা—এসব কীভাবে হলো, সে প্রশ্নও উঠেছে। তবে এমদাদুল হককে দেওয়া নিয়োগপত্রে লেখা আছে, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে তাঁকে সহকারী ব্যবস্থাপক (ক্রয়) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে নিয়োগে এ ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি।
জানতে চাইলে এমডি নূরুল আলম বলেন, ‘এমদাদুল অন্য একটি পদে পরীক্ষা দিয়েছিল। সেখান থেকে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটি করা যায়।’
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমদাদুল সহকারী ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ) পদে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। গত বছরের ৩ এপ্রিল ওই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ১১ আগস্ট পরীক্ষা হয়। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষায় এমদাদুল উত্তীর্ণ হননি। তাই সে পদে আরেকজন নিয়োগ পেয়েছেন।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, নিয়োগ পাওয়া এমদাদুল প্রতিষ্ঠানটির বিএনপিপন্থী কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হকের ভাই।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তি ছাড়া তো কাউকে নিয়োগ দেওয়ার কথা নয়। সহকারী ব্যবস্থাপক পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না, আমি জানি না।’
চেয়ারম্যানের ভূমিকায় অসন্তোষ: ২০০৮ সালে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র যখন কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে তখন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন আতাউর রহমান। তিনি বর্তমান এমডি নূরুল আলমের ফুফাশ্বশুর। কোম্পানি গঠনের সময় আতাউর রহমানের সুপারিশে জ্যেষ্ঠতা ভেঙে নূরুল আলম পরিচালক (কারিগরি) পদে নিয়োগ পান। ওই পদে থাকাকালে দায়িত্বে অবহেলার কারণে ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর নূরুল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। ৩১ অক্টোবর ওই আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এর কয়েক মাস পরেই তিনি প্রতিষ্ঠানটির এমডি হন।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, নূরুল আলমের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার, তাঁর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়া সবকিছুতেই সহায়তা করেন আনোয়ার হোসেন। তিনি তখন বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। পরে আনোয়ার হোসেন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হন।
অভিযোগ এসেছে, চেয়ারম্যান হয়েই আনোয়ার হোসেন বিধি ভেঙে বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি জিপ (ঢাকা মেট্রো-গ-২৯৫০৭৭) ব্যবহার করতে শুরু করেন। সম্প্রতি কেন্দ্রের জন্য ৮২ লাখ টাকায় কেনা একটি পাজেরোও (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৬৯৬৮) চেয়ারম্যান ব্যবহার করছেন।
জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আসলে সে রকম নয়। মাঝে মাঝে কোনো কাজে বা বৈঠকে গেলে ওই গাড়ি ব্যবহার করি। অনেক পরিচালকও সেটি ব্যবহার করেন।’
নিয়োগে যত অনিয়ম: প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ-সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত দুই বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে অন্তত ১২০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর অধিকাংশের বেলায় কোনো না-কোনো অনিয়ম হয়েছে।
কেন্দ্রের শিক্ষানবিশ কারিগরের ২৯টি পদে লোক নিয়োগের জন্য ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার পর ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৪৬ জনের নিয়োগ অনুমোদন করে পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও ৪৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের সব নিয়োগপত্রে সই করেন এমডি।
২০১১ সালে সহকারী প্রকৌশলী ও জুনিয়র প্রকৌশলীর ১২টি পদে লোক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। ২০ লাখ টাকা খরচ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (ডুয়েট) দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু ওই পরীক্ষা বাতিল করে পরে আশুগঞ্জে আলাদা পরীক্ষা নেন এমডি নূরুল আলম। তার ভিত্তিতে ১২টি পদের বিপরীতে ৩০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিধি অনুযায়ী, কেন্দ্রের যেকোনো পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালককে আহ্বায়ক করে কমিটি করতে হয়। ওই কমিটিরই প্রশ্নপত্র করা থেকে শুরু করে পরীক্ষা নেওয়া ও চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ করার কথা।
এই নিয়মে ব্যবস্থাপক (হিসাব) এবং সহকারী ব্যবস্থাপক (হিসাব) ও সহকারী ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ) এই তিন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ পরিচালকের থাকার কথা। কিন্তু তিনটি নিয়োগ কমিটিতেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (কারিগরি) সাজ্জাদুর রহমানকে আহ্বায়ক করা হয়। সাজ্জাদ প্রতিষ্ঠানটিতে এমডির ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত।
ব্যবস্থাপক নিয়োগে প্রতারণা: বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (এমআইএস ও আইসিটি) পদে নিয়োগের জন্য গত বছরের ২ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বাছাই কমিটি ৩৪ জনের আবেদন যাচাই-বাছাই করে তাঁদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু কোনো পরীক্ষা না নিয়েই প্রতিষ্ঠানের উপব্যবস্থাপক আমানত মাওলাকে ওই পদে পদোন্নতি দেন এমডি।
ওই পদোন্নতির ছয় মাসের মাথায় মানবসম্পদ ব্যবস্থাপকের পদটি শূন্য হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে আমানত মাওলাকেই মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, নিয়োগ নিয়ে হওয়া অনিয়মে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপকও অন্যতম সহযোগী।
নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে আমানত মাওলা বলেন, ‘এসবের জবাব দেবেন একমাত্র এমডি সাহেব।’ নিজের নিয়োগের বিষয়েও কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
অযোগ্যরা এগিয়ে: ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকের (কারিগরি) ছয়টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে প্রথম শ্রেণীর পদে কমপক্ষে আট বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ৮৯ জন এসব পদে আবেদন করেন। ৪৪ জনকে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
আবেদনকারীদের কাগজপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, মোহাম্মদ ফিরোজ কবির মণ্ডল, হারিছ মোহাম্মদ ওয়াহিদি, এস এম মিজানুর রহমান, আসাদ হালিম, আকতার হোসেন, মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, মোকছেমুল হাকিম, জাকির হোসেনসহ অন্তত ১৫ জনকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের ন্যূনতম অভিজ্ঞতা নেই। মজার ব্যাপার হলো, এঁরা সবাই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এখন যা হচ্ছে: মানবসম্পদ ও ভান্ডার বিভাগের ব্যবস্থাপকের দুটি পদ, একজন উপব্যবস্থাপক, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিভাগে একজন উপব্যবস্থাপক, জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীর ছয়টি পদে, সহকারী প্রকৌশলীর আটটি পদে ও জুনিয়র প্রকৌশলীর আটটি পদে নিয়োগ-প্রক্রিয়া চলছে।
এসব পদে আবেদনকারীদের কাগজপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, জুনিয়র প্রকৌশলী পদে নিয়োগের জন্য বয়স চাওয়া হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩০ বছর। কিন্তু ৩০ পেরোনো অনেককে পরীক্ষায় ডাকা হয়েছে।
উপব্যবস্থাপকের (নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা) ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চার বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু অংশগ্রহণকারী জনৈক আবু সাঈদ ও মোহাম্মদ মহসিনের তা নেই। কিন্তু তাঁরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এবং উত্তীর্ণও হয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক নিয়োগেও: কেন্দ্রের অধীন আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য ২০১১ সালের ৪ জুন বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বিধিমোতাবেক সব প্রক্রিয়া শেষ করে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ২৯তম সভায় প্রধান শিক্ষক পদে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী মিজানুর রহমানকে নিয়োগের অনুমোদন দেয়। কিন্তু তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। শোনা যাচ্ছে, তাঁকে এমডি পছন্দ করেন না। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর এ পদে নতুন করে লোক চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তাতে এমনভাবে যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে মিজানুর রহমান আবেদন করতে না পারেন।
পদোন্নতিতেও অনিয়ম: গত বছরের ৭ জুলাই কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ ইনস্ট্রুমেন্ট মেকানিক থেকে জুনিয়র ফোরম্যান পদে পদোন্নতির জন্য মেধাভিত্তিক ১০ জনের একটি তালিকা করে পদোন্নতি কমিটি। ৮১ দশমিক ৫ পেয়ে ওই তালিকায় প্রথম হন মোজাম্মেল হক। সুনীল কুমার মল্লিক দ্বিতীয়, মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী তৃতীয় এবং এনায়েত করিম চতুর্থ হন। কিন্তু এই চারজনকে বাদ দিয়ে পঞ্চম ব্যক্তি নির্মল চন্দ্র চৌধুরী ও অষ্টম আবদুর রউফকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
জুনিয়র অপারেটর থেকে সিনিয়র অপারেটর গ্রেড-২ পদে প্রথম ১৫ জনকে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করে পদোন্নতি কমিটি। বাকিদের পদোন্নতির অযোগ্য বলা হয়। কিন্তু কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে অযোগ্যদেরই পদোন্নতি দেন এমডি। ৬ সেপ্টেম্বর পদোন্নতি পাওয়াদের ওই তালিকা প্রকাশ করা হয়।
ওই দুটি পদোন্নতি কমিটির আহ্বায়ক মহাব্যবস্থাপক (পরিচালনা ও সংরক্ষণ) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা যে মেধা তালিকা করেছি, তা মানা হয়নি। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না।’
বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁস: আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের নিয়োগের ক্ষেত্রে বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন পদে যাঁরা নিয়োগ পাচ্ছেন, তাঁরা আগে থেকেই প্রশ্নপত্র পেয়ে যান বলে অভিযোগ আছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রথম অভিযোগ ওঠে কম্পিউপটার অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষায়। গত বছরের ২৭ এপ্রিল ওই পদে লিখিত পরীক্ষা হয় এবং সর্বোচ্চ নম্বর পান রিপন চন্দ্র পণ্ডিত। ওই পরীক্ষায় মাস্টার্স পাস করা প্রার্থীরা ৫৭-৫৮ পেয়েছেন। কিন্তু মাধ্যমিক পাস করা রিপন পান ৬৮ নম্বর। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় তিনি কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারেননি। ফলে নিয়োগ কমিটি তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করে।
প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বেশির ভাগ সময় নিয়োগ কমিটির বদলে নিজেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন এমডি।
গত ৭ ডিসেম্বর সহকারী প্রকৌশলী পদে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের খবর প্রকাশিত হয় প্রথম আলোতে। এরপর নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি করলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার কোনো তদন্ত হয়নি।
জানতে চাইলে নিয়োগ পদোন্নতির অনিয়মের প্রতিটি অভিযোগকেই ভিত্তিহীন দাবি করেছেন এমডি নূরুল আলম। তাঁর দাবি, নিয়োগ-বঞ্চিতরা এসব অভিযোগ তুলছেন। তাঁর দাবি, ‘যা করেছি, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই করেছি।’
প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ-পদোন্নতির অনিয়মের প্রতিকারে পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সরাসরি কোনো জবাব দেননি। তিনি বলেন, ‘কোম্পানি যেসব বিষয় আলোচ্যসূচিতে আনে সেগুলো নিয়েই পর্ষদে আলোচনা হয়।’
নিয়োগে অনিয়মের এন্তার অভিযোগ থাকলেও পরিচালনা পর্ষদ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ গত অর্থবছরে ২২ বার বৈঠক করেছে পর্ষদ। জানা গেছে, প্রতি বৈঠকে অংশ নিলেই পরিচালনা পর্ষদের প্রতি সদস্য পাঁচ হাজার টাকা করে ভাতা পান। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসংখ্যা ১০।
আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি করেন, নিয়োগ-পদোন্নতির এই অনিয়মের কবলে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। একে বাঁচাতে দ্রুত সব ধরনের অনিয়মের তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

No comments

Powered by Blogger.