যৌথ ঘোষণা কার্যকর হলে চোরাচালান বন্ধ হয়ে যাবে- সিন্ডিকেটের মাথায় হাত by শংকর কুমার দে

 বাংলাদেশ ও ভারতের ট্রানজিট, বন্দর ব্যবহার, শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকার, সীমানত্মে হাট বসানোসহ যৌথ ঘোষণা কার্যকর হলে সীমানত্ম চোরাচালান সিন্ডিকেটের মাথায় হাত পড়বে।
প্রতিবছর দু'দেশের সীমানত্ম দিয়ে সহস্রাধিক কোটি টাকার পণ্য চোরাচালান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে বাংলাদেশকে ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত করা হয়েছিল তার অবসান ঘটবে। ঢাকা-দিলস্নী যৌথ ঘোষণার পর চোরাচালানি চক্রের গডফাদারদের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ খবর সংশিস্নষ্ট সূত্রের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিবছর বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানত্ম দিয়ে আসা হাজার কোটি টাকার চোরাচালানের পণ্য আটক করছে। দুই দেশের সীমানত্ম দিয়ে প্রতিবছরই চোরাচালানের পণ্য আনানেয়া বেড়েই চলেছে। সীমানত্ম এলাকায় দুই দেশের চোরাচালানি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। চাল, চিনি, লবণ, পিঁয়াজ, মরিচসহ নিত্যপণ্য, শাড়ি, কাপড়, পরিধেয় বস্ত্র, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, গরম্ন, ছাগল, মহিষ, মাছ, মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্যসহ যাবতীয় পণ্যসামগ্রীর চোরাচালান হচ্ছে। এ জন্য দুই দেশের মধ্যে গড়ে উঠেছে চোরাচালানি সিন্ডিকেট।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের মধ্যে আলোচনা শেষে ঢাকা-দিলস্নী যৌথ ঘোষণার পর চোরাচালানি সিন্ডিকেট গডফাদারদের গাত্রদাহ শুরম্ন হয়ে গেছে। বৈধপথে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর এবং সীমানত্ম এলাকা দিয়ে দুই দেশের পণ্যের প্রবেশাধিকার ঘটলে অবৈধভাবে পণ্য প্রবেশের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। এ ৰেত্রে চোরাচালান বন্ধ হয়ে গেলে চোরাচালানি চক্রের মাথায় হাত পড়বে। বাংলাদেশ শুধু ভারতের কাছ থেকেই সুবিধা পাচ্ছে না, বরং নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের কাছ থেকেও সুবিধা পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে।
বাংলাদেশের চতুর্দিক ঘিরে ভারতের সীমানত্ম ছাড়াও কক্সবাজার সীমানত্ম দিয়ে মিয়ানমারের চোরাচালানের পণ্য বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করছে। এমনকি বর্মার রম্নই মাছ, লবণ, চিনিসহ অন্যান্য চোরাচালানের পণ্যসামগ্রী বাংলাদেশের বাজার দখল করে বসেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গভীর হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন পর মিয়ানমার বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হয়েছে। দুই দেশের সমুদ্রসীমার বিরোধ মিটিয়ে ফেলার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সফল আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুস্পর্ক গড়ে তুলে ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার গড়ায় চোরাচালান নিরম্নৎসাহিত হতে বাধ্য।
বাংলাদেশের সীমানত্ম রৰায় নিয়োজিত বিডিআরের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানত্ম দিয়ে পাচার হওয়ার সময় হাজার কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী আটক করা হচ্ছে। আটক করা চোরাই পণ্যসামগ্রীর অনত্মত ১০ গুণ চোরাচালান হয় বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানত্ম এলাকায় প্রতিদিনই চোরাচালানের পণ্যের হাটবাজার বসছে, যা এখন প্রায় ওপেন সিক্রেট। বর্তমানে মিয়ানমারের সীমানত্ম দিয়ে চোরাচালান হচ্ছে।
বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার সীমানত্ম দিয়ে চোরাচালান ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সব দেশের সরকারই বিরাট অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। দেশগুলোর অর্থনৈতিক ভিতকে নড়বড়ে ও পঙ্গু করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ ঘোষণার ফলে ব্যবসাবাণিজ্য ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়ে চোরাচালান একেবারে নিমর্ূল না হলেও কমে যেতে বাধ্য বলে জানা গেছে।
বিডিআর, পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ হলে তারা জানান, বিলম্বে হলেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ ঘোষণায় দুই দেশই যেমন লাভবান হবে তেমনি চোরাচালান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রাজনৈতিক কারণে এত দিন কোন সরকারই এধরনের চুক্তি, সমঝোতা ও যৌথ ঘোষণায় যেতে সাহস পায়নি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকার কারণে দুই দেশের সীমানত্ম তো বটেই এমনকি মিয়ানমারের সীমানত্ম দিয়েও চোরাচালান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চোরাচালানি সিন্ডিকেটগুলোর গডফাদাররা খুবই প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তারা মরণ কামড় দিতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.