মন্ত্রীদের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ভাতা বাড়ছে by আশরাফুল হক রাজীব

প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ভাতা বাড়ছে। সাংবিধানিক অন্যান্য সংস্থার প্রধানদের ভ্রমণ ভাতাও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রীর ভাতা ১৫০ শতাংশ এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ভাতা ১৬৭ শতাংশ বাড়ছে।
আর উপমন্ত্রীদের ভ্রমণভাতা ১৫০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে; তবে এই মুহূর্তে মন্ত্রিসভায় কোনো উপমন্ত্রী নেই। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের ভাতা বাড়ানোর দুটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের ভ্রমণ ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাবে ইতিমধ্যে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাবেও শিগগির সম্মতি মিলবে।
মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সরকারি কর্মচারীদের ২০০৯ সালে পে স্কেল দেওয়ার পর বেতন বাড়লেও তাঁদের ভাতা বাড়েনি। পরে কর্মচারীদের ভাতা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে একজন সচিবের ভ্রমণ ভাতা মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের চেয়ে বেশি। সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের ভ্রমণ ভাতা সমন্বয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রয়োজন হলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ভ্রমণ ভাতাও বাড়বে।' মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের আর্থিক সুবিধা বাড়াতে হলে 'দ্য মিনিস্টার্স, মিনিস্টার্স অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টার্স (রিমিউনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ সংশোধন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সুবিধা বাড়াতে হলেও সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনগুলোর সঙ্গে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তাদের সম্মতির পর আইন সংশোধনের খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে অনুমোদিত হলে সংসদে পাসের জন্য পাঠানো হবে।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী এক হাজার টাকা ভ্রমণভাতা পান। তাঁর ভাতা বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ভ্রমণভাতা ৭৫০ টাকা; সেটা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করা হচ্ছে। উপমন্ত্রীদের ভ্রমণভাতা ৬০০ টাকা; সেটা করা হচ্ছে এক হাজার ৫০০ টাকা। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করা হয়। সেই সময় ভাতা বাড়ানো হয়নি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের ভ্রমণভাতা বাড়ানোর পর স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক সংস্থার প্রধানদের ভ্রমণভাতাও বাড়াতে হবে। তাঁদের ভ্রমণভাতা বাড়াতে হলেও সংশ্লিষ্ট একাধিক আইনে সংশোধনী আনতে হবে।
সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রীদের ভ্রমণভাতা বাড়ানোর বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচিত হয়। বৈঠকে একজন প্রতিমন্ত্রী জানান, সচিবদের তুলনায় মন্ত্রীদের ভ্রমণভাতা কম। সরকারি কর্মচারীদের তুলনায় জনপ্রতিনিধিদের ভ্রমণভাতা কম হতে পারে না বলে তিনি দাবি করেন। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের সচিবকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ভ্রমণভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে বলেন। মন্ত্রিসভার নির্দেশনায় ভ্রমণভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করা হয়। প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর ভ্রমণভাতা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি তাতে সম্মতি দেননি। প্রধানমন্ত্রী সেটা আড়াই হাজার টাকা করে দেন। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রতিমন্ত্রীরা ঢাকায় জাতীয় পতাকাসহ গাড়ি চালানোর বৈষম্যের বিষয়টিও তোলেন। আইন অনুযায়ী প্রতিমন্ত্রীরা রাজধানী ঢাকায় চলাচলের সময় তাঁদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারেন না। পতাকার পরিবর্তে তাঁরা ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ব্যবহার করেন। তাঁরা কেবল ঢাকার বাইরে পতাকা ব্যবহার করতে পারেন। তাঁদের দাবি, ঢাকায়ও তাঁদের গাড়িতে পতাকা ব্যবহারের অনুমতি দিতে হবে। বৈঠকে ঢাকায় চলাচলের সময় প্রতিমন্ত্রীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব গেলে তা বাতিল হয়ে যায় বলে সূত্র জানায়। পূর্ণমন্ত্রীরা যাতায়াতের সময় তাঁদের গাড়িতে সর্বত্র জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারেন।
প্রসঙ্গত, সচিবদের গাড়িতেও ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড থাকে।

No comments

Powered by Blogger.