ফেনসিডিলসহ ধরা পড়া সেই বিচারক-সকালে জামিন বিকেলে প্রত্যাহার

ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হওয়া বিচারক মো. জাভেদ ইমামকে গতকাল সোমবার সকালে জামিন দেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিকেলে সেই আদেশ প্রত্যাহার করে আজ আবার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
গতকাল বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ জাভেদ ইমামের ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুরের মৌখিক আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু বিকেলে আদালত সূত্রে জানা যায়, জাভেদ ইমামের জামিনের আদেশ প্রত্যাহার করে আদালত আজ আবার অধিকতর শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল গতকাল রাতে জানান, মঙ্গলবার জাভেদ ইমামের জামিন আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। অন্যদিকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সকালে দেওয়া জামিন প্রত্যাহার করে আদালত মঙ্গলবার আবার শুনানির আদেশ দিয়েছেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আরো জানান, সকালে জাভেদ ইমামের জামিন আবেদনের ওপর শুনানির সময় তিনি আদালতকে বলেন, এরই মধ্যে এ মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে। জাভেদ ইমামের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। বিচারকাজ শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। এ অবস্থায় জামিন দেওয়া হলে আসামি মামলার বিচারকে প্রভাবিত করতে পারেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, মামলাটি ষড়যন্ত্রমূলক। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্যই এটি সাজানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মাদকদ্রব্যসহ আসামিদের গ্রেপ্তার করে আসছে। পুলিশ ফেনসিডিলের বড় বড় চালানসহ আসামিদের গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু কোনো আসামিকেই মিডিয়ার সামনে হাজির করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয় না। অথচ জাভেদ ইমামকে গ্রেপ্তারের পর মিডিয়ার সামনে হাজির করে তাঁর স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, এ মামলা ষড়যন্ত্রমূলক। কেবল বিচারক হওয়ার কারণে তড়িঘড়ি করে তাঁকে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয় বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য।
রুহুল কুদ্দুস বলেন, হাইকোর্ট সাধারণ মানুষকে জামিন দিয়ে থাকেন। একই কারণে আবেদনকারী জামিন পেতে পারেন। গ্রেপ্তার করার পর তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। আইন অনুযায়ী কেউ একই অপরাধে দুই বার শাস্তি ভোগ করতে পারেন না।
এদিকে জাভেদ ইমামকে জামিন দেওয়ার পরপর উপস্থিত আইনজীবীরা তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় জানান, এত পরিমাণ ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তারের পর অল্পদিনের মধ্যে সাধারণ আসামিরা জামিন পায় না। জাভেদ ইমাম একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা বিধায় তিনি জামিন পেয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবুল কালাম খান বলেন, 'জাভেদ ইমাম বিচারক ছিলেন বিধায় এত অল্প সময়ে জামিন পেয়েছেন।'
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর রাজধানীর নিউ মার্কেট থানাধীন রাফিন প্লাজার সামনে ফুট ওভারব্রিজের নিচে রাস্তার ওপর ৩৪২ বোতল ফেনসিডিলসহ একটি মাইক্রোবাস আটক করে নিউ মার্কেট থানার পুলিশ। চালকের শরীর তল্লাশি করে তাঁর কোমরে একটি পিস্তল খুঁজে পায় পুলিশ। পিস্তলটি চালকের লাইসেন্স করা। পরে চালক জানান, তাঁর নাম জাভেদ ইমাম। তিনি ভোলার সিনিয়র সহকারী জজ।
জাভেদ ইমামকে ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তারের পর ওই রাতে নিউ মার্কেট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১)-এর ৩(খ) ধারায় মামলা করেন এসআই নূর হোসেন।
মামলাটি তদন্ত করেন এসআই শফিকুল ইসলাম। গত ১৯ ডিসেম্বর তিনি জাভেদ ইমামের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.