মাহেলার ব্যাটিং দৃঢ়তায় আইডিয়া কাপ শ্রীলঙ্কার- ফাইনালে ভারত ৪ উইকেটে পরাজিত by আরিফুর রহমান বাবু

ক্রিকেট পরিভাষায় ড্রিম স্টার্ট আর ফাইং স্টার্ট বলে কথা আছে। প্রথমটি স্বপি্নল সূচনা আর পরেরটি উড়নত্ম সূচনা। বুধবারের ফাইনালে লঙ্কানদের শুরম্নটা তেমনি হলো। যে টুর্নামেন্টে টস রীতিমতো ম্যাচ নির্ধারক, টস জেতা যেখানে ম্যাচ জেতার পথে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া।
তার ফাইনালে টস জেতাই তো অর্ধেক ম্যাচ জেতা! দুপুরে সে ভাগ্য নির্ধারণী লড়াইয়ে জিতে হাসলেন কুমারা সাঙ্গাকারা। টস জিতে যা করার কথা, লঙ্কান অধিনায়ক তাই-ই করলেন। টস জিতেই ফিল্ডিংয়ে নামলেন। তারপরের অংশটাই স্বপি্নল। এত ভাল শুরম্নর কথা বোধকরি অতিবড় লঙ্কান সমর্থকও ভাবেননি। কি করে ভাববেন? সেবাগ, গাম্ভীর, কোহলি, যুবরাজ ও ধোনির মতো বিশ্ব মানের ব্যাটসম্যানরা মিরপুর শেরেবাংলার অমন ব্যাটিং স্বর্গে শুরম্নতেই মুখথুবড়ে পড়বেন, এমন ভাবাও যে অলীক কল্পনা! কিন্তু বাসত্মবে হয়েছে তাই। ভারতীয় টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটিং শুরম্নতেই গুঁড়িয়ে গেল। পুরো ঘটনাটি এত দ্রম্নত ও এমনভাবে ঘটল, যা ভোজবাজির মতোই মনে হলো। এর পর সুরেশ রায়না প্রায় একা লড়ে ঐ ধাক্কা সামলে দিলেন। তারপরও আড়াই শ'র নিচেই থামল ভারত।
এ আসরে ২৯৬, ২৭৯, ২৬০ আর ২৪৯ রান তাড়া করা দল জিতেছে অনায়াসে। কাল ফাইনালে অনায়াসে না হোক, লড়াই করেই ২৪৬ রানের টার্গেট ছুঁয়ে ফেলল শ্রীলঙ্কা। ৪ উইকেটের দারম্নণ জয়ে আইডিয়া কাপ জিতে ভারতের মাটিতে না পারার যন্ত্রণা হাল্কা করল কুমারা সাঙ্গাকারার দল।
উত্থান-পতনের ম্যাচের প্রথম অংশের হিরো অবশ্যই দুই লঙ্কান পেসার কুলাসেকেরা (৪৮ রানে চার উইকেট) এবং ওয়েলেগেদারা (৩/৫৩)। দিনের আলোয় দারম্নণ দু্যতি ছড়িয়েছেন ভারতের বাঁহাতি মিডল অর্ডার সুরেশ রায়নাও। দারম্নণ সেঞ্চুরি করেছেন ভারতের এ ভবিষ্যত সম্ভাবনা। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম ঐ শতক বিফলে।
ম্যাচের প্রথম ওভারে আঘাত হেনে শ্রীলঙ্কাকে দারম্নণ শুরম্ন উপহার দিলেন কুলাসেকেরা। প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দিলেন গৌতম গাম্ভীরকে। ওয়েলেগাদারাও পিছিয়ে ছিলেন না। নিজের প্রথম ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তুলে নিলেন ফর্মেও চুড়োয় থাকা ভিরাট কোহলির উইকেট। ওদের সুনিয়ন্ত্রিত ও সমীহ জাগানো পেস আক্রমণে ভেঙ্গে গেল ভারতীয় টপ ও মিডল অর্ডার। ৬০ রানের (১০.৪ ওভারে) মধ্যে ইনিংসের প্রথম অর্ধেক শেষ হলো। বিরেন্দর সেবাগ ছাড়া গাম্ভীর (০) কোহলি (২), যুবরাজ (০), ধোনি (১৪) ব্যর্থ হলেন চরমভাবে। চারজনের সংগ্রহ মোটে ১৬। ভাবা যায়! ওদের অনুজ্জ্বলতার মাঝেও আলোকবর্তিকা হয়ে জ্বলছিলেন সেবাগ। একপ্রানত্মে নিয়মিত বিরতিতে উইকেটের পতন ঘটলেও সেবাগ ইচ্ছেমতো শট খেলছিলেন। লঙ্কান ফিল্ডারদের নাগালের বাইরে দিয়ে চোখের পলকে চলে যাচ্ছিল সীমানার ওপারে। মনে হচ্ছিল ধ্বংসত্মূপের মাঝে দাঁড়িয়েও কিছু একটা করে ফেলবেন। কিন্তু কথায় বলে না, মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক। প্রায় দুর্দমনীয় হয়ে ওঠা সেবাগও হঠাৎ আউট হয়ে গেলেন। তাঁকে থামালেন কুলাসেকেরা। স্বাভাবিকের চেয়ে একটু খাটো লেংথের ডেলিভারি সেবাগকে প্রলুব্ধ করে একটু বেশি উচ্চতায় এসেছিল। ঠিক অফ স্টাম্পের বাইরের ঐ ডেলিভারি থার্ডম্যানে গলাতে গেলেন সেবাগ। ব্যাটের একদম বাইরের অংশের ওপরে লেগে গেল কীপার সাঙ্গাকারার গস্নাভসে। তার ঠিক আগে এই কুলাসেকেরার বলেই অফ স্টাম্পের বাইরে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে কীপারের হাতেই ধরা পড়লেন ভারত ক্যাপ্টেন। এ চরম বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন কাজটিই করলেন রায়না। এ যেন দুঃসাহসী পর্বতারোহী প্রচ- ঝড় উপো করে পাহাড়ের চুড়োয় ওঠার চেষ্টা। সাহস ছিল ষোলো আনাই। সঙ্গে ধৈর্য, মনোযোগ-মনোসংযোগ আর দৃঢ় প্রত্যয় মিলে যা দাঁড়ালো, তা থামাতে ঘেমে নেয়ে উঠলেন লঙ্কান বোলাররাও। সঙ্গে রবীন্দ্র জাদেজাও সাপোর্ট দিলেন। ১০৬ রানের দারম্নণ জুটি গড়ে উঠল। যাতে জাদেজার অবদান ৩৮। বিপর্যয় ঠেকাতে হবে। এজন্য দরকার জুটি গড়া। আমাকে একদিক আগলে রাখার কাজ করতে হবে। এই দৃঢ় সংকল্প ছিল রবীন্দ্র জাদেজার। জুটি গড়ায় অতি মনোযোগী এ অলরাউন্ডারের মাঝারি ইনিংসটি সাজালেন কোন বাউন্ডারি ছাড়াই। জুটি জমে উঠেছিল। কিন্তু যখন শুরম্নর বিপর্যয় কাটিয়ে আবার রান তোলায় মনোযোগী, ঠিক তখনই ভাঙল জুটি। অনিয়ামিত অফস্পিনার তিলকারত্নে দিলশানের বলে লেগবিফোর উইকেট হলেন জাদেজা। তারপর হরভজনকে নিয়ে রায়না আরও আগানোর চেষ্টা করলেন, সেটা ব্যর্থ হলো। তবে রায়নার ব্যক্তিগত মাইলফলক স্থাপিত হলো। ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি করলেন এ বাঁহাতি। কিন্তু ওয়েলেগাদারা তৃতীয় স্পেলে গিয়ে ভারতের লড়িয়ে পুঁজি গড়ার পথ বন্ধ করে দিলেন। ১০৬ রান করা রায়না বোল্ড হয়ে গেলেন ওঁর বলে। তারপর আর রান গাড়ি এগোয়নি। ২৪৫-এ গিয়ে থেমে গেল।

No comments

Powered by Blogger.