রাজধানীতে শব্দ ও বায়ু দূষণের মাত্রা পালস্না দিয়ে বাড়ছে- লোকবলের অভাবে পরিবেশ অধিদফতর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ by শাহীন রহমান
ঢাকা শহরের ব্যসত্মতম ও গুরম্নত্বপূর্ণ সড়ক গাবতলীর টেকনিক্যাল মোড়। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের অতি নিকটে হওয়ায় এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পরিবহন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যাতায়াত করে।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী এ এলাকাকে মিশ্র এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আর মিশ্র এলাকায় সহনীয় শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে_ দিনেরবেলায় সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবল এবং রাতেবেলায় ৫০ ডেসিবল। অথচ এখানে শব্দ দূষণের মাত্রা প্রতিনিয়ত ১শ' ডেসিবল অতিক্রম করছে। বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তর্ৃক পরিচালিত অভিযানে দেখা যায়, প্রতিটি পরিবহনের হর্নের শব্দের মাত্রও ১শ' থেকে ১শ' ২০ ডেসিবল অতিক্রম করছে। কোন গাড়ির হর্নই সহনীয় মাত্রায় নেই। আবার বায়ু দূষণ রোধে কালো ধোঁয়ার সবের্াচ্চ মাত্রার ৰেত্রে কার্বন মনো-অক্সাইডের পরিমাণ দশমিক ৪ পয়েন্ট এবং হাইড্রোকার্বনের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১শ' ৮০ থাকার কথা। কিন্তু মনো-অক্সিাইডের পরিমাণ ১০-এর উপরে এবং হাইড্রো কার্বনের পরিমাণ ১ হাজার অতিক্রম করছে। ফলে নগরীতে শব্দ ও বায়ুদূষণ পালস্না দিয়ে বাড়ছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরীতে শব্দদূষণের মাত্রা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে, কোথাও সহনীয় পর্যায়ে নেই। শব্দদূষণের কারণে অনেক শিশু-কিশোরের শ্রবণশক্তি লোপ পাচ্ছে। বাধাগ্রসত্ম হচ্ছে মেধার বিকাশ। সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হচ্ছে গাড়ির হাইড্রোলিক হর্নের মাধ্যমে। এছাড়া মাইকিং, কলকারখানার শব্দ ও ইট ভাঙ্গা মেশিনের শব্দের কারণে দূষণ বাড়ছে। অথচ শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও তা মানছে না কেউই। সরকারী সংস্থাগুলো শব্দ দূষণরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে শব্দ দূষণের বিরম্নদ্ধে কার্যকর পদৰেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজন দেড় শ' লোকবল। অথচ সেখানে মাত্র ২৪ লোকবল নিয়ে কাজ চলছে। পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক জামশেদ আহমেদ জানান, এত কম পরিমাণ জনবল নিয়ে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণের বিরম্নদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রতিমাসে একবার করে অভিযান চালাতে হচ্ছে। জনবল কম থাকায় নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গেলে অফিস দেখার কোন লোক থাকে না। বায়ুদূষণের বিরম্নদ্ধে কার্যকর অভিযান চালাতে গেলে লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ঢাকার ছয়টি পয়েন্টে ছয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসাতে পারলে এর বিরম্নদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ত। কিন্তু যে কোন একটি এলাকায় আদালত বসানোর কারণে পরিবহন চালকরা সহজেই ঐ রম্নট পরিহার করে অন্য রম্নট ব্যবহার করে। বৃহস্পতিবার পরিচালিত অভিযানে দেখা গেল এমন দৃশ্য। টেকনিক্যাল হাউসিং রিসার্চ সেন্টারের পাশে যখন অভিযান চলছিল ঠিক কিছুৰণ পরে এ রম্নটে গাড়ির চাপ অনেকটা কমে আসে। অভিাযানকালে বেশিরভাগ চালককে টেকনিক্যাল মোড় হয়ে গাড়ি টার্ন নিয়ে মিরপুর-১- এর দিকে চলে যেতে দেখা যায়।
নগরীর শব্দদূষণ রোধ করার জন্য ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালায় হাসপাতাল, শিৰা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ১শ' মিটার পর্যনত্ম হর্ন বাজানো নিষেধ। আইনে আবাসিক এলাকার ৫শ' মিটারের মধ্যে ইট বা পাথর ভাঙ্গার যন্ত্র ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। কোন উৎসব, সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে লাউড স্পীকার, এমপিস্নফায়ার বা কোন যন্ত্রকৌশল ব্যবহার করতে হলে কর্তৃপৰের অনুমোদন নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব কার্যক্রমে ৫টা থেকে রাত ১০টার পর কোনক্রমেই শব্দ দূষণকারী যন্ত্রসমূহ ব্যবহার করা যাবে না। বিধিমালায় ঢাকাকে পাঁচটি এলাকায় ভাগ করে প্রতিটি এলাকার জন্য শব্দের সবের্াচ্চ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দিন ও রাতের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ মাত্রার শব্দ হচ্ছে নীরব এলাকায় ৪৫ ও ৩৫ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় ৫০ ও ৪০ ডেসিবল, মিশ্র এলাকায় ৬০ ও ৫০ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ও ৬০ ডেসিবল এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ও ৭০ ডেসিবল।
বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদফতরে অভিযানে দেখা গেছে পরিবহনের মালিকরা শব্দদূষণ নীতিমালা মানছেই না, গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও তাদের নেই। এ কারণে ১৩টি পরিবহনের বিরম্নদ্ধে সাধারণ ও নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব পরিবহনের মধ্যে রয়েছে যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রম্নটের লাব্বায়েক পরিবহন, বাহন পরিবহন, হানিফ মেট্রোসার্ভিস, ট্রান্স সিলভা, গাবতলী লিংক, নাভানার মিক্সার লরি। ঢাকা জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোঃ ফখরম্নজ্জামান আদালত পরিচালনা করেন। তিনি জানান, আইনে প্রথমবার অপরাধের জন্য ১ মাসের কারাদ- বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দ-ে দ-িত করার বিধান রয়েছে। পরবর্তী দফায় একই অপরাধের জন্য ৬ মাসের জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দ-ে দ-িত করার বিধান রয়েছে। যাত্রীরা জানিয়েছে, নিয়মিত অভিযান না চালিয়ে হঠাৎ এভাবে অভিযান চালালে যাত্রীদের ভোগানত্মি ছাড়া কোন লাভ হবে না।
No comments