বেসরকারী এমবিবিএস ও বিডিএসে ভর্তি ফি ১২ থেকে ১৪ লাখ!- কোন কোন কলেজে ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে ॥ নেই কোন নীতিমালা by নিখিল মানখিন

এবারও বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলো স্বাধীনভাবে ভর্তি ফি আদায় করছে। ভর্তি প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি ফি বাবদ ১২ থেকে ১৪ লাখ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তবে ভর্তি ফির পরিমাণ কোন কোন কলেজে ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। প্রথম শ্রেণীর মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতে অনেক শিক্ষার্থী গোপনে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এবারও ওই সব প্রতিষ্ঠানে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তি ফি নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মোঃ সিফায়েত উল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ আইন তৈরির কাজ চলছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অনেকবার আলোচনা হয়েছে। এই আইন বাস্তবায়ন হলে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর ইচ্ছেমতো ফি আদায়ের বিষয়টি বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মহাপরিচালক।
ভর্তি বিষয়ে বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মেডিক্যালে ভর্তি ফি সবচেয়ে কম। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে সরকারী অনুদান দেয়া হয় না। অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষকদের বেতনসহ সার্বিক ব্যয় বহন করতে হয় প্রতিষ্ঠানকেই।
পরীক্ষার পাশাপাশি ভর্তি ফি নিয়ে এবারও হাঁপিয়ে উঠেছেন মেডিক্যাল ভর্তিচ্ছু অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক। তাঁরা অভিযোগ করেন, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট নানা জটিলতার কারণে এমনিতেই অনেক শিক্ষার্থীর প্রস্তুতি তেমন ভাল নয়। ভর্তি পরীক্ষার নিশ্চয়তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন অনেক শিক্ষার্থী। অবশেষে এ শঙ্কা কেটে যায়। কিন্তু এবারও ভর্তি ফি নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। এবারও স্বাধীনভাবে ভর্তি আদায় করছে বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলো।
এদিকে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ নীতিমালা সংশোধনের কাজটি চূড়ান্ত হয়নি। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ নিজেদের মতো করে বাড়তি ভর্তি ও কোর্স ফি আদায় করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর বিরুদ্ধে শিক্ষার নামে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। বিগত শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি, উন্নয়ন ব্যয়, বিধিসহ নামী-বেনামী অনেক খাতের অজুহাত দেখিয়ে চড়া ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ওই সব প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা নিয়মের বিষয়টি দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ৫ বছরের জন্য কোর্স ফি সর্বোচ্চ ৮ লাখ টাকা এবং মাসিক ফি সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু তা আজও কার্যকর হচ্ছে না। এ বছর অনেক বেসরকারী মেডিক্যাল/ডেন্টাল কলেজে ভর্তি ফি বাবদ ১২ লাখ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর ভর্তি ফি একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আনার দাবি করেছেন বিএমএ’র সাবেক সভাপতি এবং ডক্টরস ফর হেলথ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি রশিদী-ই মাহবুব। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, সদিচ্ছা থাকলেই সহনশীল ভর্তি ফি নির্ধারণ করতে পারে সরকার। তাড়াতাড়ি বৈষম্য দূরীকরণে সরকারী হস্তক্ষেপ দরকার। লাইসেন্স দিতে এবং ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারলে ফি নির্ধারণ করতে পারবে না কেন? আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়টি সুরাহা হতে পারে বলে মনে করেন তিনি ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবার বারডেম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ফি বাবদ প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১৫ লাখ টাকা, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজে ১৪ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবদুর রউফ সর্দার জনকণ্ঠকে জানান, মেধা তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজে ১১০ আসন রয়েছে। গতবার শিক্ষার্থীপ্রতি ভর্তি ফি ১২ লাখ টাকা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গবর্নিং বডি। এবার ভর্তি পরীক্ষার পরই ভর্তি ফি একটু বেড়ে ১৪ লাখ টাকায় আনা হয়েছে। সরকারী হাসপাতালগুলোতে শিক্ষার্থীপ্রতি ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে সরকার। এ বিষয়ে বেসরকারী হাসপাতালে ১৪ লাখ টাকা নেয়াটা বেশি টাকা আদায় হতে পারে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মেডিক্যাল ভর্তি ফি শিক্ষার্থীপ্রতি নেয়া হয় ৫০ লাখ টাকা। একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে নিজেদের টাকায় অনেক কিছু সামাল দিতে হয়। যা বাইরে থেকে অনুমান করা সম্ভব নয়। অন্যায়ভাবে বাড়তি ভর্তি ফি আদায় করা হয় না বলে দাবি করেন অনেক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.