বর্জ্য অপসারণ ও ফেলা একই সঙ্গে চলছে বুড়িগঙ্গায়- নদীদূষণ রোধে নজরদারি প্রয়োজন by শাহীন রহমান

 শুধু বর্জ্য অপসারণ করে বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করা সম্ভব নয়। দূষণমুক্ত করতে হলে নদীতে বর্জ্য ফেলা পুরোপুরি বন্ধ করতে হ্ব।ে বর্জ্য অপসারণের সঙ্গে নতুন বর্জ্য যাতে নদীতে কেউ না ফেলতে পারে সেজন্য মনিটরিং করা জরম্নরী।
প্রয়োজনে নদী রৰায় একটি শক্তিশালী নদী কমিশন গঠন করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার বর্জ্য অপসারণে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ। কিন্তু অপসারণের সঙ্গে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা না গেলে শুধু অপসারণ করে কোন লাভ হবে না। তাদের মতে, বর্জ্য অপসারণে সঠিক পরিকল্পনা না নিলে এ মহৎ উদ্যোগ ব্যাহত হতে পারে। গত ৬ জানুয়ারি থেকে সরকার বুড়িগঙ্গার বর্জ্য অপসারণ কাজ শুরম্ন করেছে। এখন পর্যনত্ম চারটি কাটার মেশিন দিয়ে বর্জ্য উত্তোলনের কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়োজনের তুলনায় অপসারণ মেশিনের সংখ্যা অপ্রতুল। বুড়িগঙ্গার একদিকে যখন চলছে বর্জ্য অপসারণের কাজ অন্যদিকে নতুন করে বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। নদীর উভয় তীরেই রয়েছে আবর্জনার সত্মূপ। তাছাড়া জাহাজ থেকেও কেমিক্যালবাহী বর্জ্য প্রতিদিনই ফেলা হচ্ছে। কলকারখানার বর্জ্য ও পয়োবর্জ্য সু্যয়ারেজের লাইনের মাধ্যমে পড়ছে নদীতে। যে ১ কিলোমিটারের বর্জ্য অপসারণের কাজ চলছে ঠিক এই এক কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে একাধিক সু্যয়ারেজের লাইন। নদীর দৰিণপারে পূর্বআগানগর নদীধারা প্রকল্প এলাকায় দিয়ে ডাইং কারখানার বর্জ্য সু্যয়ারেজের লাইন দিয়ে নদীতে পড়ছে। এর পূর্বপাশে রয়েছে পয়োবর্জ্য লাইন। সরকার বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরম্ন করলেও কিন্তু এগুলো দেখভাল করার কেউ নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নদী রৰায় সরকারের একক কোন সংস্থা নেই। ফলে পরিবেশ আইনে নদীদূষণে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও একক কর্তৃপৰের অভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হয়নি। ১৯৫২ সালে বুড়িগঙ্গা নদীর দু'তীরে ৪শ' গজ পর্যনত্ম দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয় বিআইডবিস্নউটিএকে। এছাড়া বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের ১শ' ১২ কিলোমিটার নদী রৰণাবেৰণের মালিক বিআইডবিস্নউটিএ। এর বাইরে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সংস্থার হাতে নদী দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের মতে, বিভিন্ন সংস্থার হাতে দায়িত্ব থাকার কারণে নদীর সঠিক রৰণাবেৰণ করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এএমএম শফিউলস্না বলেন, বুড়িগঙ্গার পানি যে কালো রং ধারণ করেছে তার মূলে রয়েছে কারখানার ও পয়োবর্জ্য। এছাড়া জাহাজ থেকে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে কেমিক্যালবাহী বর্জ্য। সরকার বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরম্ন করলে এগুলো ফেলা বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ বর্জ্য অপসারণে হয়ত কিছুটা ফল পাওয়া যেতে পারে কিন্তু পুরোপুরি সফলতা নাও আসতে পারে। তিনি বলেন, কারা কিভাবে বর্জ্য ফেলছে তা মনিটরিং করার দরকার। কিন্তু নদীর নির্দিষ্ট অভিভাবক না থাকায় এ মনিটরিংয়ের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। নদী রৰার সার্বিক দায়িত্ব একটি সংস্থার কাছে ন্যসত্ম থাকা দরকার। কিন্তু দেশে আজ নদী রৰায় কোন কমিশন গঠন করা হয়নি। একেক এলাকা দেখভালের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সংস্থার ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু সার্বিক দায়িত্ব পালনে অবশ্যই একটি নদী কমিশন গঠন করতে হবে। এছাড়া নদীর প্রবাহ বাড়ানোর জন্য যমুনা থেকে পানি এনে বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়ায় আরও সমন্বয় সাধন করতে হবে। বিশেষ করে বর্জ্য স্থানানত্মর ও ডাম্পিং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে করা হচ্ছে না। বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে ডাম্পিং এলাকায় পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, বর্জ্য অপসারণে কাজ শুরম্ন হলেও নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা যাচ্ছে না। ডিসিসির বর্জ্য, কলকারখানার বর্জ্য ও পয়ঃবর্জ্য এখনও নদীতে পড়ছে। যেহেতু সরকার বর্জ্য অপসারণের মতো একটি কঠিন কাজ হাতে নিয়েছে, সে ৰেত্রে নতুন করে বর্জ্য নদীতে যাতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল করতে হবে। তবে তিনি স্বীকার করেন নদীতে বর্জ্য ফেলার পরিমাণ আগের চেয়ে কমে এসেছে। সরকারের এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে বর্জ্য অপসারণ কাজে সফলতা পাওয়া সম্ভব।
এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রকৌশলী অধ্যাপক এএমএম শফিউলস্নাহর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বুধবার সরেজমিনে বুড়িগঙ্গার বর্জ্য অপসারণ কাজ পরিদর্শন করে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পানি উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক মহাসচিব ম. ইনামুল হক ও বিআইডবিস্নউটিএ'র কর্মকর্তারা। পরিদর্শন টিমটি সদরঘাট টার্মিনাল হতে শুরম্ন করে বিভিন্ন জায়গায় বর্জ্য উত্তোলন এবং বছিলায় বর্জ্য ডাম্পিংয়ের স্থান পরিদর্শন করেন।

No comments

Powered by Blogger.