খবর শুধু খবর নয় by নিয়ামত হোসেন
আমেরিকার সাত কোটি মানুষের ঘুম কম হয়! আমেরিকার ৭ কোটি মানুষ ঘুম সমস্যায় ভুগছেন। সেখানকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের গবেষকরা কিছুদিন আগে এক গবেষণায় এই তথ্য পেয়েছেন।
২০০৮ সালে ঐ বিভাগের পক্ষ থেকে ৪ লাখ মানুষের উপর এই গবেষণা চালানো হয়। তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। সে সবের মাধ্যমে তাঁরা এই নিদ্রাসমস্যার কথা বুঝতে পারেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক এক জার্নালে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকদের গবেষণার ফল থেকে দেখা যায়, তিন ভাগের এক ভাগ আমেরিকান রাতে সাত ঘণ্টার কম সময় ঘুমায়। আর দশজনের মধ্যে মাত্র তিনজন বলেছেন, গত এক মাসের রোজ তাঁদের ঘুম ভাল হয়েছে।যাইহোক, গবেষণার ফলাফলে এটাই দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ আমেরিকানের ঘুম কম হয়। তবে এটাকে খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার বলা যাবে না। এমনিতেই অনেকের ঘুম না হওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। অনেকেই সে দেশে ঘুমের বড়ি খান। নানা সমস্যা, চিনত্মা, দুশ্চিনত্মা থেকে রাতের বেলায় রেহাই পেতে। তবে সামগ্রিকভাবে এটাই সব নয়। ঘুম না হবার প্রধান কারণ আজকের আধুনিক জীবনযাত্রা। রাত হলে সকাল-সকাল শুতে যাওয়া এবং প্রতু্যষে শয্যা ত্যাগ ভাল হলেও সন্ধ্যা হলেই খেয়েদেয়ে বাতি নিবিয়ে শয্যা গ্রহণ আজকের যুগে কোন্ দেশে সম্ভব? আমেরিকার মতো উন্নত ধনী দেশের জীবনযাত্রায় এটা কি সবার পক্ষে সম্ভব? এটা যদি সম্ভব হয়, তাহলে ক্লাবে, ক্যাসিনোতে যাবে কে, আর টিভি থেকে শুরম্ন করে যাবতীয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে কারা?
তাই বলা যায়, আধুনিক জীবনযাত্রা যেভাবে বিশ্বব্যাপী দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ছে তাতে দুনিয়ার সব দেশের লোকজনের রাতের ঘুমের সময়ে টান পড়বে। বরং ঘুমানোর ট্যাবলেটের পরিবর্তে কম ঘুমিয়ে স্বাস্থ্য দিব্যি ভাল থাকার এমন বড়ি আবিষ্কৃত হয়েছে, এমন খবরও একদিন শোনা যাবে হয়ত। তখন নিদ্রাহীনতা বা কম ঘুম নিয়ে কোন দুশ্চিনত্মা থাকবে না!
আকাশে পাইলটদের কুম্ভকর্ণের ঘুম!
অল্প কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি যাত্রীবাহী বিমানকে ঘিরে ঘটে গেল এক মহাহুলস্থুল ঘটনা। এক বিমান সংস্থার যাত্রীবাহী বিমান সেটা। যাচ্ছে সান ডিয়েগো থেকে মিনেপোলিস। ভেতরে ১৪৪ যাত্রী। যথাসময়ে যথাস্থান থেকে বিমানটি আকাশে উড়ল। তারপর যেতে শুরম্ন করল গনত্মব্যের দিকে। যাত্রীরা নিশ্চিনত্মমনে যে যার সিটে। কেউ আরাম করে বসলেন, কেউ আয়েশ করে চোখ বুঁজলেন। বিমান চলছেই। যথাসময়ে যথাস্থানে পেঁৗছাবে সে ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত। তাই কোন চিনত্মাভাবনা-উদ্বেগ নেই কারও মনে। এইভাবে চলে যাচ্ছে সময়। এক সময় নির্দিষ্ট বিমানবন্দরের কাছাকাছি চলে এলো বিমানটি। নিচে বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রম্নম থেকে বিমানটির পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো। কিন্তু কোন সাড়া নেই, বিমানটির পাইলটরা নিশ্চুপ। কী ব্যাপার, কী ব্যাপার! বোঝা গেল না কিছুই। ওদিকে বিমানটি নির্দিষ্ট বিমানবন্দরের কাছে এসে পড়ল, তারপর সোজা বিমাবন্দরের ওপর দিয়ে চলে গেল সামনে, আরও সামনে। ৩৭ হাজার ফুট উপর দিয়ে ছুটে চলেছে বিমানটি। চলছে তো চলছেই। এভাবে এক ঘণ্টা ১৮ মিনিট। নির্দিষ্ট বিমানবন্দর থেকে ২৪৬ কিলোমিটার দূরে চলে গেছে বিমানটি। ঠিক এ সময়ে বিমানটির পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হলো। বিমানটি আবার ফিরতে শুরম্ন করল ফেলে-আশা বিমানবন্দরের দিকে। এসে নামল তারপর।
ওদিকে হয়েছিল কী; বিমানের পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যখন সম্ভব হলো না, এবং বিমানটি যখন বিমানবন্দরে না নেমে সোজা চলে গেল, তখন নিচের সকলের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা গেল বেড়ে। বিমানটি কি হাইজ্যাক হয়েছে? কোন সন্ত্রাসী দল ওটাকে নিয়ে যাচ্ছে কোন এক মতলবে! ওটাকে কি নাইন-ইলেভেনের মতো কোনখানে গিয়ে ধাক্কা মারবে? নানা দুশ্চিনত্মায় সবাই অস্থির। খবর গেল নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে। সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হলো অনেকগুলো জঙ্গী বিমান। দেখা যাক, বিমানটিকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়! সবাই প্রস্তুত হলো। সিদ্ধানত্ম হলো যদি অমন কোন আলামত টের পাওয়া যায়, তাহলে বিমানটিকে গুলি করে নামানো হবে। এতসব কা- হিসাব-নিকাশ যখন চলছে তখন অর্থাৎ বিমানটি অবতরণের নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ১৮ মিনিট পর পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হলো। তারপর বিমানটি তো ফিরে এলো যথাস্থানে। নিরাপদে নামল যথাস্থানে অর্থাৎ মিনেপলিস বিমানবন্দরে। প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা গেল মজার এই ঘটনাটি। যাত্রীরা যথাস্থানে পেঁৗছানোর আগে টেরই পাননি তাঁদের বিমানটিকে নিয়ে এত ঘটনা ঘটে গেছে।
জানা গেল, বিমানটির অবতরণের কিছু আগে পাইলটরা ঘুমিয়ে পড়েন। মিনেপোলিস পার হয়ে গেলেও তাঁদের সে ঘুম ভাঙেনি। ভেঙেছে অনেক পরে। তখন বিমানটি বিমানবন্দর ছেড়ে বহু দূরে।
কি হয়েছিল জিজ্ঞেস করা হলে পাইলটরা ঘুমানোর কথা অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিল বলে এমন হয়েছে। কিন্তু বিমানটির ককপিটে ১ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ধরে কি এমন ঝগড়া চলল যার জন্য বিমানটি নামানো যায়নি? তাঁদের ঝগড়ার গল্প সংশিস্নষ্ট বিমান কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করতে পারেনি। সকল পাইলটকেই তাই বরখাসত্ম করা হয়েছে। তাঁদের ছেঁদো গল্পে কাজ হয়নি।
বিমান চালানোর মতো গুরম্নত্বপূর্ণ কাজ করতে এসে অমন কুম্ভকর্ণ মার্কা ঘুম তাঁরা সবাই দিলেন কী করে সেটাই আশ্চর্যের কথা। যাইহোক, অনেক আশ্চর্যের ঘটনাও স্বাভাবিক জীবনে ঘটে, সেটাই দেখা গেল; ঝগড়াঝাটি মারামারি লাঠাালঠি হলে ওঁদের কেউ না কেউ টের পেয়ে থামাতে পারতেন। সেটা যে হয়নি তা পরিষ্কার।
No comments