অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে মূল্যস্ফীতি এতদিন সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও তা আবার বাড়তে শুরম্ন করেছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি এখন রোধ করতে না পারলে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ফলে দেশের অর্থনীতিতে আগামীতে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করাই এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছ' মাসের সার্বিক অর্থনীতি পর্যালোচনা করে সিপিডি গত সোমবার এ মনত্মব্য করেছে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে ন'টি চ্যালেঞ্জের কথা উলেস্নখ করেছে সিপিডি, তা হচ্ছে : বিনিয়োগে স্থবিরতা, রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হ্রাস, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া, কর্মসংস্থানের অভাব, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব, জনপ্রশাসনের অদক্ষতা এবং মূল্যস্ফীতির উর্ধমুখী প্রবণতা।
গত অর্থবছরের প্রথম ছ'মাসের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়নি। যে হারে আদায় হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার। বিদু্যত উৎপাদন বাড়ানোর কথা থাকলেও এখনও চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে ব্যাপক। ব্যাংকিং খাতে তারল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগে শস্নথ গতি দেখা দিয়েছে। এডিপি বাসত্মবায়নে কাজের অগ্রগতির জন্য সরকারকে আরও নজর দিতে হবে। মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে বটে, কিনত্মু তা উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত না হলে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমানো যাবে না। কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি পেলেও খেলাপি ঋণের হার উদ্বেগজনক হওয়ায় সুদের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত রাখতে হবে প্রণোদনা সুবিধা। এতকিছুর পরও খাদ্যশস্যের ফলন ভাল হওয়ায় সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে। রাজস্ব আদায় কমলেও বেড়েছে আয়কর আদায়। চাঙ্গা হয়েছে শেয়ারবাজার, বেড়েছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমে গেলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় পারফরমেন্স ভাল ছিল। রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে আশাব্যঞ্জক। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন প্রশংসনীয়। অর্থাৎ বিশ্ব মন্দার মাঝেও সামষ্টিক স্থিতিশীলতা বজায় ছিল। তদুপরি দারিদ্র্য বিমোচন করতে হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি জরম্নরী। এ ব্যাপারে দেশে এবং বহির্বিশ্বে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ_ এতে তীক্ষ্ন পর্যবেক্ষণ এবং কর্ম পরিকল্পনায় স্বচ্ছতা রাখতে হবে।
নতুন বছর শুরম্ন হওয়ার প্রাক্কালে অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর যথাক্রমে বিদু্যত ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান-দারিদ্র্য বিমোচনকে নতুন বছরের অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে স্বীকারও করেছিলেন। শীঘ্রই উত্তরণের ক্ষেত্রে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

No comments

Powered by Blogger.