স্বপ্নের দিলস্নী যাত্রা by রাজু মোসত্মাফিজ

এ পৃথিবীর সব মানুষ এখন এক বিশ্বের নাগরিক। এই পৃথিবী এবং পৃথিবীর সব মানুষের যতটা সম্ভব দেখার প্রবল আকাঙ্ৰা কম-বেশি সবাই লালন করেন। তাইতো একটু অবসর পেলেই পৃথিবীর পথে বেরিয়ে পড়েন অনেকেই।
অজানাকে জানার বিস্ময় আর আনন্দে জীবন পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে উৎসবের আমেজে। ছোটবেলা থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ আমি। বারবার ছুটে গিয়েছি পাহাড়ে, সমুদ্রসৈকতে, চা বাগানে, সুবর্ণ গ্রামগুলোতে। তবুও দেখার আশা মেটে না। মনের ভেতর বাস করে মুক্ত এবং সন্ন্যাসপ্রবণ আরেক মানুষ; সেই মানুষ প্রলুব্ধ করে, প্ররোচিত করে_সেই প্রলুব্ধতা আর প্ররোচনায় দেশ থেকে দেশানত্মরে ছুটে বেড়াতে ইচ্ছে করে। ঘুরে ঘুরে দেখতে ইচ্ছে করে পৃথিবীর সবকিছু। সময়ের ঘাটতি আর জীবনের কঠিন বাসত্মবতায় সে ইচ্ছা অপূরণই থেকে যায়। সময় আর হয়ে ওঠে না অজানার পথে দু'পা ফেলে, দু'চু মেলে বেরিয়ে পড়তে। অবশেষে সুযোগ এলো বেরিয়ে পড়বার। আমার ক্যান্সার-আক্রানত্ম শাশুড়ির চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে কলকাতার ঠাকুর-পুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে যেতে হবে। তখনই সিদ্ধানত্ম নিয়ে ফেলি কলকাতার কাজ শেষ করে পুরো ভারতবর্ষের যতটা সম্ভব ঘুরে দেখব।
২৫ জুন রাত সাড়ে ১০টায় সোহাগ পরিবহনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক এক বাসে ঢাকা থেকে কলকাতা রওনা হলাম। পরদিন দুপুর ১টায় কলকাতায় পেঁৗছালাম। কলকাতায় চিকিৎসার কাজ শেষ করে চতুর্থদিন বিকেল পৌনে ৫টায় হাওড়া স্টেশন থেকে রাজধানী একপ্রেসে চেপে দিলস্নীর উদ্দেশে রওনা হলাম। পরদিন সকাল সোয়া ১০টায় নিউদিলস্নী স্টেশনে পেঁৗছালাম।
ভারতের রাজধানী দিলস্নী। ইতিহাস আর আধুনিকতার পরিপূর্ণ সংমিশ্রণ ঘটেছে এই নগরীতে। মোগল সাম্রাজ্য-কালের অসংখ্য স্থাপত্য গড়ে উঠেছে এখানে। মোগল শাসকরা প্রায় ৫শ' বছর এখান থেকেই শাসন করেছেন পুরো ভারতবর্ষ। এখানে তাঁদের শত শত অবকাঠামো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ভারত সরকার এগুলো যুগের পর যুগ সংরণ করে চলেছে। মহানগরীতে দুটি অংশ আছে। পুরাতন দিলস্নী মুসলিম আমলে গড়া। আর নতুন দিলস্নী ব্রিটিশ আমলে গড়া। সারা বিশ্বের হাজার হাজার ভ্রমণপিয়াসী মানুষ ছুটে আসে ভারতের এই দিলস্নী নগরীতে। আগ্রা, আজমীর, জয়পুর, উঠি, বৃন্দাবন, মথূরা, নৈনিতাল, কলকাতাসহ অংসখ্য পর্যটন এলাকা রয়েছে ভারতে। পর্যটকরা ঘুরে বেড়ায় তাদের প্রিয়জনদের নিয়ে। আমি একা এসেছি। শুধু ঘুরে বেড়ানোর নেশায়। ঘড়ির কাঁটায় ১১টা। নিউদিলস্নী স্টেশনের প্রধান গেটের কাছাকাছি এসেছি, এক লোক আমাকে রাজস্থানী ট্র্যাভেল্স এজেন্সির কথা বললেন। প্রথম দিকে লোকটির কথা গুরম্নত্ব না দিলেও তিনি যখন জানালেন বাংলাদেশী লোকদের জন্য আলাদা সুযোগ দেয়া যাবে, তখন তাকে ওই অফিসে নিয়ে যেতে বললাম। দিলস্নীর পাহাড়গঞ্জ এলাকায় রাজস্থান টু্যরিস্ট সেন্টারে নিয়ে গেলেন তিনি। এর মালিক সারাফত খান। বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় তার বাড়ি। ১৯৮৬ সালে কাজের সন্ধানে দিলস্নী আসেন। এখানেই ভারতীয় এক মহিলাকে বিয়ে করেছেন। বর্তমানে তিনি দিলস্নী প্রাদেশিক কংগ্রেসের সহসভাপতি। এখনও নিজ জন্মভূমির মানুষদের প্রতি আলাদা টান রয়েছে তার। তাদের কাউকে কাছে পেলে ছাড়তেই চান না। দেশের মানুষের কথা ও রাজনীতির কথা জানতে চান। সারাফত ভাই আমার দিলস্নী, আগ্রা, আজমীর ও জয়পুরের টু্যরের ব্যবস্থা করে দিলেন। তার অফিসে জমা দিতে হলো ২০০ ডলার (৮৪০০ রম্নপী)। ২ জুলাই থেকে আমার যাত্রা শুরম্ন হবে। অফিসিয়াল কাজ সেরে সাড়ে ১১টার দিকে পাহাড়গঞ্জের কাশুরীবালান গলিতে দুই তারকা দাদা হোটেলে আমার থাকার ব্যবস্থা করলেন। ১ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে আমি হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। দিলস্নী মিউজিয়ামে গেলাম। বিশাল মিউজিয়াম। ভারতের মোগল সাম্রাজ্য থেকে আধুনিক ভারতের সব কিছুই সংরণ করেছে মিউজিয়াম কতর্ৃপ। আলাদা আলাদা গ্যালারিতে খুবই সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে প্রতিটি জিনিস। সম্রাট আকবর, সম্রাট শাহজাহান, আওরঙ্গজেব, জাহাঙ্গীরের আমলসহ বিভিন্ন আমলের ধাতব মুদ্রা, অস্ত্র, পরিধেয় পোশাকসহ অনেক কিছু । তবে জয়পুরের রাজা মানসিংহের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস দর্শকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিসত্মানী সৈন্যদের আত্মসমর্পণের দলিলের ছবিটি দিলস্নী মিউজিয়ামে সংরতি রয়েছে। নিজ দেশের স্বাধীনতার দলিল দেখে খুব ভাল লাগছিল। প্রতিবছর বিশ্বের হাজার হাজার পর্যটক এই ছবিটি দেখে। মিউজিয়াম কতর্ৃপ ছবির ক্যাপশনে লিখেছে ভারত-পাকিসত্মান যুদ্ধ। এ রকম মিথ্যা তথ্য মিউজিয়াম কতর্ৃপ কিভাবে দিল তা আমার বোধগম্য নয়। ভীষণ রাগ হচ্ছিল। কিন্তু অসহায় আমি। মিউজিয়াম থেকে বের হয়ে একজন শিখ অটো ড্রাইভার আরজিত সিং-এর সঙ্গে কথা হলো। তিন ঘণ্টা ঘোরাবেন দেড় শ' রূপীর বিনিময়ে। ইন্ডিয়া গেট গেলাম। রাজপথের পূর্বদিকে ইন্ডিয়া গেট অবস্থিত। ৪২ মিটার উঁচু বিশাল ইমারতটি ৯০ হাজার ভারতীয় সৈন্যের স্মরণে নির্মিত হয়েছে এবং সৈন্যদের নাম ইন্ডিয়া গেটের শিখরে খোদাই করা হয়েছে। শিল্পী লুটিয়েনস এই বিরাট সৌধের নক্সা করেছিলেন। ১৯২১ সালে এই নির্মাণ কাজ শুরম্ন হয়ে ১৯৩১ সালে শেষ হয়। স্মৃতিসৌধটির কেন্দ্রস্থলে একটি উদ্ধত রাইফেল ও হেলমেটে অবস্থিত একটি চিরনত্মনশিখা অজ্ঞাত সৈন্যদের সম্মানার্থে জ্বলছে।
দুপুরের কড়া রোদ। অসংখ্য পর্যটক এখানে এসেছে। ফটোগ্রাফাররা পর্যটকদের ছবি তুলছে। ১ মিনিটেই ছবি দিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিনিময়ে প্রতিছবি ৩০ থেকে ৪০ রূপী। এখান থেকে অরজিত সিং-এর অটোতে দুটি হসত্মশিল্পের দোকানে গেলাম। কিছু না কিনে শুধু ঘুরে ঘুরে দেখলাম। একসময় অটোচালককে বিদায় দিয়ে আমি গোলবাজারে নেমে পড়লাম। প্রচ- ুধার্ত ছিলাম। বিকেলের কিছু নাসত্মা সেরে আবারও ঘুরতে বেরম্নলাম। দিলস্নীর রাসত্মা দিয়ে হাঁটছি। বিভিন্ন মানুষকে জিজ্ঞেস করে চলছি। বড় বড় নিমগাছ। পরিচ্ছন্ন এবং গোছানো শহর দিলস্নী। মানুষও বেশ আনত্মরিক। পালিকাবাজার যাচ্ছি। প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটলাম। একসময় পালিকাবাজারে এলাম। মাটির নিচে মার্কেট। উপরে পার্ক। মানুষ পার্কে বসে আড্ডা দিচ্ছে। নিচে বাজার বসেছে। পালিকাবাজারে মধ্যবিত্ত আর বিদেশীদের সবচেয়ে ভিড় । প্রতিটি জিনিসের দাম বেশ সসত্মা। তবে প্রচুর দামাদামী করতে হয়। আর তা না হলে ক্রেতা এখানে অবশ্যই ঠকবে। রাত ৯টা পর্যনত্ম বাজারে ঘোরাঘুরি শেষে পার্কে বেশ কিছুণ একা একা বিশ্রাম নিলাম। সাড়ে ৯টার দিকে হোটেলে ফিরলাম। পরিশ্রানত্ম আমি। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। পরদিন খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠে তৈরি হচ্ছি। রাজস্থান টু্যরিজমের বাসের হেলপার হোটেলে এসেছে আমাকে ডাকতে। তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম আমি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যনত্ম ঐ বাসেই টু্যরিস্ট হিসেবে দিলস্নী শহরে ঘুরে বেড়াব। সাড়ে ৯টায় বাস ছাড়ল। প্রথমে বিরলা মন্দির গেলাম। মাত্র ২০ মিনিট সময় দিল বাস কতর্ৃপ। বিভিন্ন হিন্দু দেবতার জন্য উৎসর্গীকৃত আধুনিক দৃষ্টিনন্দন শৈল্পিক লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দির। এটি বিরলা মন্দির হিসেবে পরিচিত। ১৯৩৮ সালে ভারতের প্রখ্যাত শিল্পপতি রাজা বালদেব দাস বিরলা এই স্থাপত্যের কাজ করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধী এটি উদ্বোধন করেন। মন্দিরের প্রসাদ খেলাম। কিছুণের মধ্যেই বাস আবার ছাড়ল। এরপর রাইসিনা পাহাড়ের কাছ দিয়ে যাচ্ছে আমাদের বাস। এখানে ভারতের রাষ্ট্রপতির সরকারী বাসভবন। এটি ১৯২৯ সালে ৩৩০ একর জমির ওপর ব্রিটিশ রাজপ্রতিনিধির বাসভবন হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল। এখানে রয়েছে বড় বড় রাজক, ঝর্ণা এবং বাগান। বিশাল এই এলাকায় রয়েছে ঔষধি বাগান। ভবনের পশ্চিমপারে রয়েছে মোগল আমলের গোলাপ বাগান। সাধারণ মানুষের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ। আমরা কেউ ঢুকতে পারিনি। এখান থেকে চলে গেলাম ভারতের লোকসভা ভবনের কাছে। দুপুরের কড়া রোদ আর প্রচ- গরমে কাহিল হয়ে পড়েছে বাসের পর্যটকরা। শুধু দেখার নেশায় পর্যটকদের সঙ্গে আমিও ঘুরছি। বেশকিছু ছবি তুললাম এখানে। এরপর আকবর রোডে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মিউজিয়ামে গেলাম। গাইড আমাদের প্রায় এক ঘণ্টা সময় দিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, অসংখ্য ছবি, বিভিন্ন পদক, সুন্দর করে সাজিয়েছেন জাদুঘর কতর্ৃপ। ঘাতক যেদিন ইন্দিরা গান্ধীকে গুলি করেছিল_ সেই রক্তমাখা শাড়িটিও স্থান পেয়েছে এখানে। পাশেই রয়েছে রাজীব গান্ধী মিউজিয়াম। তাঁর শৈশব-কৈশোর এবং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ের অসংখ্য ছবি রয়েছে। তাঁর ব্যবহৃত প্রতিটি জিনিসও এই মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে। যতই দেখছি ততই তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জেগে উঠছে মনে মনে। এত বড় নেতা। অথচ তাদের জীবনযাত্রা বেশভুষা কত সাধারণ, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এরপর গেলাম কুতুবমিনার দেখতে। ১২০০ সালে কুতব উদ্দিন আইবেক কুতুবমিনারের চমৎকার এই স্থাপনাটি আফগান কারিগর দিয়ে তৈরি করিয়েছিলেন। ৫তলা ভবনটির উচ্চতা ৭৩ মি. এবং ব্যাস ১৪ দশমিক ৩২ মি., এখানে দুই দশমিক ৭৫ মি. সুরঙ্গ আছে। এই ভবনের প্রথম তিনতলায় লাল বালু পাথরের কুবাবাতুল ইসলাম মসজিদ; আয়রন পিলার, আলাই মসজিদ ও কুতুব কমপেস্নক্স আছে। কুতুবমিনার এলাকার চতুর্দিকে বিশাল ক্যাম্পাস। খুব দ্রম্নত ঘুরে এসে দেখি টু্যরিস্ট বাস আমাকে ছেড়ে চলে গেছে লোটাস ট্যাম্বেল এলাকায়। অচেনা অজানা শহর দিলস্নী, ভয় পেয়ে গেলাম মনে মনে। দ্রম্নত ফোন করলাম রাজস্থান টু্যরিজম কতর্ৃপরে কাছে। তারা তাদের ভুল স্বীকার করে অনুরোধ করলেন একটি সিএনজি অথবা ট্যাক্সি নিয়ে লোটাস ট্যাম্বেল এলাকায় যেতে। আমি সেভাবে দ্রম্নত গেলাম লোটাস ট্যাম্বেল এলাকায়। শুধু ড্রাইভারকে বললাম, আপনি আমার সঙ্গে অন্যায় করেছেন। ড্রাইভার লজ্জা পেয়ে ভুল স্বীকার করলেন। পদ্মাকৃতি লোটাস ট্যাম্পলটি ১৯৮৭ সালে সাদা টাইলস দ্বারা নির্মিত। আত্মার শানত্মির নিদর্শন এটি। মন্দির কর্তৃপ দর্শকদের মন্দিরের ভিতর নীরব থাকার অনুরোধ করে।
এখানে থেকে আমরা রাজঘাট এলাকায় গেলাম। পূর্বের সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। অধিকাংশ পর্যটক কানত্ম । মহাত্মা গান্ধীকে রাজঘাটে ১৯৪৮ সালে সমাহিত করা হয়েছিল দিলস্নী গেটের রিং রোডের কাছে শিরীন গার্ডেনে। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। ফুল দেন, নীরবতা পালন করেন মহান এই নেতার আত্মার শানত্মির জন্য। রাজস্থান টু্যরিজমের বাস ভ্রমণ এখান থেকেই শেষ হলো।
আমি আরও ঘুরে বেড়াব। নেমে পড়লাম। কিছুণ হাঁটলাম। দিলস্নীর জামে মসজিদের যাব। রিক্সায় উঠে মসজিদের ১ নম্বর গেটে নেমে পড়লাম। মসজিদের আশপাশে প্রচুর আবাসিক হোটেল। মোটর পার্টসের দোকান। সম্রাট শাহজাহানের আমলে লাল, সাদা আর কালো পাথরের তৈরি ভারতের শ্রেষ্ঠ মসজিদ হচ্ছে এই জামে মসজিদ। প্রায় ২০ হাজার মানুষ এখানে নামাজ আদায় করে থাকেন। মসজিদে হাজার হাজার কবুতর আসে। পর্যটকরা তাদের খাবার দিয়ে থাকেন। দেশী বিদেশী পর্যটক মসজিদের কারম্নকার্য দেখে মুগ্ধ হন। ১০ রম্নপী দিয়ে আমি মিনারে উঠলাম। মিনারের পাশে ব্রিটিশ এক কলেজপড়ুয়া তরম্নণীর সঙ্গে কথা হলো। তার এক বান্ধবীসহ ইন্ডিয়া ভ্রমণে এসেছে। আমিও পর্যটক জেনে খুশি হলো। তাকে শুধু বললাম, তোমার দেশের প্রিন্সেস ডায়না আমাদের দেশে খুব জনপ্রিয়। অবাক হলো সে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা বললাম। বেড়াতে আসতে বলে তার কাছে বিদায় নিলাম। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। সেখান থেকে আবারও রিক্সায় চাঁদনীচক মার্কেটে গেলাম। এই মার্কেটটি সম্রাজ্ঞী নুরজাহান তৈরি করিয়েছিলেন। বিশাল পাইকারি বাজার। সারা ভারতবর্ষের মানুষ এই বাজারে কেনাকাটা করে। বাজারের ভেতরে শিখ মন্দিরে ঢুকে পড়লাম। এক পুরোহিত আমাকে মাথায় কাপড় বাঁধার অনুরোধ করলেন। ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশন করছিলেন কয়েক শিখ পুরোহিত। আমি মন্দিরে বসে শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ল্য করতে থাকি। তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন। প্রায় আধাঘণ্টা এখানে থেকে আবারও হাঁটা শুরম্ন করলাম। রাত ৯টা। চাঁদনীচক থেকে পাহাড়গঞ্জে যেতে হবে। মেট্রো রেলে উঠে পড়লাম। ২০ মিনিটের মধ্যে পেঁৗছে গেলাম। এখান থেকে রিক্সায় আমার হোটেলে পেঁৗছালাম। রাত তখন প্রায় ১০টা। ভীষণ কানত্ম আমি । কখন ঘুমিয়ে পড়েছি টেরই পাইনি। ভোরে উঠে পড়লাম। দিলস্নী থেকে ২৬০ কিঃমিঃ দূরে উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহরে রওনা দিলাম। দীর্ঘপথ। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাসত্মার পাশে এক হোটেলে থামল আমাদের বাস। সকালের নাসত্মা সেরে নিচ্ছি। বাঙালী আমি, দিলস্নী অঞ্চলের খাবারদাবার আমাদের মতো বাঙালীর জন্য খুব কষ্টের। তবু খেতে হলো। (চলবে)

No comments

Powered by Blogger.