মামাবাড়ির আবদার
আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধঘোষিত নোট বই বিক্রির সুযোগের দাবিতে ১০ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ পুসত্মক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি যে ধর্মঘট আহ্বান করেছে তা অন্যায্য, অযৌক্তিক এবং অনাকাঙ্ৰিত।
দাবি আদায়ের ল্যে সারাদেশের বইয়ের দোকান ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। মানবিক বিবেচনায় ইতোমধ্যে প্রকাশিত নোট ও গাইড বইগুলো বিক্রির সুযোগ দিতে স্মারকলিপিটিতে আবেদন জানিয়েছেন সমিতির নেতৃবৃন্দ। নোট বই ও গাইড প্রকাশ, বিক্রি ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে তিন দশক আগে আইন পাস করা হলেও তা প্রয়োগ না করার দরম্নন নোট বই ও গাইডের বিসত্মার লাভ করে ব্যাপকভাবে। ফলে দিন দিন শিার্থীরা পাঠ্যপুসত্মকের চেয়ে নোট বই ও গাইডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে অধিক হারে। বিষয়টা অনেকটা শস্যের চেয়ে আগাছা বড় হওয়ার মতো। অধিক শস্যের আশায় পানি, সার দেয়ার পরও ফসল ওঠার সময় দেখা যায় সব চিটা। বীজ ভাল না হওয়ার দরম্নন এই হাল। তেমনি বাজারে চকচকে মলাটের নোট ও গাইড বই পড়ে শিার্থীরা প্রকৃত শিায় শিতি হতে পারছে না। দেশের লাখ লাখ কোমলমতি শিার্থীর জীবনকে অনিশ্চয়তা ও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়ে নোট ও গাইড বই প্রকাশক ও বিক্রেতাদের সাময়িক আর্থিক তির দিকটা বড় করে দেখা যে উচিত হবে না, সে বিষয়ে মোটামুটি সবাই একমত হবেন।১৯৮০ সালে সর্বপ্রথম সরকার আইন করে অষ্টম শ্রেণী পর্যনত্ম পাঠ্যপুসত্মকের নোট বই মুদ্রণ, প্রকাশনা, আমদানি, বিতরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে। আইন অনুযায়ী এই বিধান লঙ্ঘনকারীরা সাত বছর পর্যনত্ম সশ্রম কারাদ- বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। একই সঙ্গে নিষিদ্ধঘোষিত নোট বই বাজেয়াফত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন এই আইনের কোন প্রয়োগ করা হয়নি। ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর শিা মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাতীয় শিাক্রম ও পাঠ্যপুসত্মক বোর্ডের (এনসিটিবি) অনুমতি ছাড়া কেউ নোট ও গাইড বই ছাপতে ও বিক্রি করতে পারবে না । এ আদেশ কার্যকর করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠনেরও নির্দেশ দেয়া হয়। পাঠ্যপুসত্মক সমিতি এই আদেশের বিরম্নদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করলে আদালত তা নাকচ করে দেয়। ফলে দেশের শিা ব্যবস্থা সসত্মা বাণিজ্যিকীকরণের হাত থেকে রা পেয়েছে বলা যায়। গোপনেও যেন কেউ নোট বই ও গাইড বিক্রি করতে না পারে, সরকারের উচিত হবে বিষয়টি যথাযথ মনিটরিং করা।
আমাদের শিা ব্যবস্থার প্রাথমিক থেকে উচ্চতর পর্যায়ে নোট ও গাইড বই যেভাবে বিসত্মার লাভ করেছে তা শিার গুণগত মান ও শিার্থীর সৃজনশীলতা বিকাশের পথে প্রধান অনত্মরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিার্থীরা বেশি নম্বর পাওয়া বা পাস করার জন্য বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত নোট ও গাইড বইয়ের ওপর মাত্রাতিরিক্তভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় শিার্থীদের প্রকৃত মেধা বিকশিত হচ্ছে না। অনেক েেত্র দেখা যায়, নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই শিার্থীদের। ফলে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা তো দূরের কথা, নিজেদের ুদ্র গ-ির ভেতরে আপন অলোয় উদ্ভাসিত হতে পারছে না অধিকাংশ শিার্থী। তাই সরকার প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যনত্ম নোট বই ও গাইডের প্রকাশ, বিক্রি ও বিতরণের বিরম্নদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছে তাতে অটুট থাকার কোন বিকল্প নেই।
No comments