বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ আজ, পর্যবেৰণে ব্যাপক প্রস্তুতি

 বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ আজ। দেশের দৰিণাঞ্চলের জেলা কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে এ বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ ভালভাবে পর্যবেৰণ করা যাবে। এছাড়া দেশের প্রায় সব জেলা থেকে আংশিক গ্রহণ দেখা যাবে। বাংলাদেশ সময় ১২ টা ৪৪ মিনিটে এ গ্রহণ শুরম্ন হবে।
শেষ হবে ৪টা ১ মিনিটে। ২টা ৩২ মিনিটে শুরম্ন হবে সর্বোচ্চ গ্রহণ। সর্বোচ্চ গ্রহণের স্থায়িত্ব হবে ৮ মিনিট ২৩ সেকেন্ড যা সেন্টমার্টিন থেকে পর্যবেৰণ করা যা্ব।ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যগ্রহণের মূল মধ্য রেখা মিয়ানমারে আকিয়াব বন্দরের ওপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে শতভাগ গ্রহণ পর্যবেৰণ করা সম্ভব হবে না। মূল মধ্য রেখার কাছে অবস্থিত হওয়ার কারণে সর্বোচ্চ সেন্টমার্টিন থেকে গ্রহণের ৮৩ দশমিক ৬৩ ভাগ পর্যবেৰণ করা যাবে। এছাড়া টেকনাফ থেকে ৮৩ দশমিক ৬২ ভাগ, কক্সবাজার থেকে ৮৩ দশমিক ৫ ভাগ পর্যবেৰণ করা যাবে।
রাজধানী ঢাকায় গ্রহণ শুরম্ন হবে ১২টা ৪৩ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডে। সর্বোচ্চ গ্রহণ শুরম্ন হবে ২টা ৩১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে এবং শেষ হবে ৪টা ৫৬ সেকেন্ডে। বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ পর্যবেৰণের জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞান সংগঠন থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় পর্যবেৰণ ক্যাম্প করা হলেও মূল পর্যবেৰণ ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন কক্সবাজার সেন্টমার্টিনসহ সূর্যগ্রহণ পর্যবেৰণের জন্য ব্যাপক লোক সমাগম হতে পারে। পর্যটন মৌসুমের পাশাপাশি শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় লোক সমাগম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ এ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি ও অনুসন্ধিৎসু চক্রের পৰ থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে আয়োজন করা হয়েছে পর্যবেৰণ ক্যাম্প। এ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সেক্রেটারি এফআর সরকার জানান, গ্রহণ পর্যবেৰণের পাশাপাশি কক্সবাজার থেকে ওয়াটার রকেট উৎৰেপণ করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এজন্য জাপান থেকে ওয়াটার রকেট সংগ্রহ করা হয়েছে। অনুসন্ধিৎসু চক্র সূত্রে জানা গেছে সংগঠনের পৰ থেকে পর্যবেৰণের জন্য ৫০টি প্রজেকশন টেলিস্কোপ তৈরি করে সমুদ্র সৈকতে স্থাপন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা শহরেও পর্যবেৰণ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকাতে সূর্যগ্রহণ পর্যবেৰণের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যবেৰণ কমিটি শারীরিক শিৰাকেন্দ্র মাঠে এ ক্যাম্পের আয়োজন করেছে। এখানে টেলিস্কোপ, পিনহোল, প্রজেকশন দূরবীন, ক্যামেরার মাধ্যমে বড় পর্দায় সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া এখান থেকে পর্যবেৰণের জন্য সোলার ফিল্টার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যাম্পটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেশের সব জেলা থেকে আংশিক পর্যবেৰণ করা যাবে। সিলেটে গ্রহণ শুরম্ন হবে, ১২টা ৫০ মিনিটে। সর্বোচ্চ গ্রহণ দেখা যাবে ২টা ৩৪ মিনিটে এবং শেষ হবে ৪টা ২ মিনিটে। খুলনাতে গ্রহণ শুরম্ন হবে ১২টা ৩৭ মিনিটে। সর্বোচ্চ গ্রহণ হবে ২টা ২৭ মিনিটে এবং শেষ হবে ৩টা ৫৯ মিনিটে। বরিশালে গ্রহণ শুরম্ন হবে ১২টা ৪৪ মিনিটে। সর্বোচ্চ গ্রহণ হবে ২টা ৩১ মিনিটে এবং শেষ হবে ৪টা ১ মিনিটে। রাজশাহীতে শুরম্ন হবে ১২টা ৩৯ মিনিটে। সর্বোচ্চ গ্রহণ হবে ২টা ২৮ মিনিটে এবং শেষ হবে ৩টা ৫৯ মিনিটে। পঞ্চগড়ে শুরম্ন হবে ১২টা ৪৪ মিনিটে। সর্বোচ্চ গ্রহণ হবে ২টা ৩০ মিনিটে এবং শেষ হবে ৩টা ৫৮ মিনিটে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ ও সূর্য সাধারণত কাছাকাছি অবস্থান করে। ফলে চাঁদের ছায়া সূর্যকে সম্পূর্ণ রূপে ঢেকে ফেলে। কিনত্মু বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ ও সূর্য অত কাছাকাছি অবস্থান করে না। চাঁদের ছায়া সূর্যের আলোকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলতে পারে না। গ্রহণের সময় চাঁদের ছায়া সূর্যের আলোর ফোকাল বিন্দুকে ঢেকে ফেললেও ছায়ার চারদিকে সূর্যের আলোর একটি সরম্ন বলয় বা রিংয়ের মতো দেখা যায়। যার কারণে বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ।
তাদের মতে, বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের বিসত্মৃতি হবে ৩ হাজার কিলোমিটার পর্যনত্ম। আফ্রিকা মহাদেশ থেকে এর গ্রহণ শুরম্ন হবে। আফ্রিকার চাঁদ থেকে শুরম্ন হয়ে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, কঙ্গো, উগান্ডা, কেনিয়া হয়ে ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে। ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা তামিল নাড়ু, কেরালা হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করবে। বঙ্গোপসাগর ওপর দিয় বয়ে যাওয়ার সময় এর মূল মধ্যরেখা সেন্টমার্টিনের দৰিণে ছেড়াদ্বীপের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছে। মিয়ানমার আকিয়াব বন্দরের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে চীনে গিয়ে গ্রহণপথের বিসত্মৃতি রেখা শেষ হবে। গ্রহণকালে চাঁদের প্রচ্ছায়ায় ঢেকে থাকা এলাকা পূর্ব ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে আংশিক গ্রহণ দেখা যাবে।
এদিকে, কক্সবাজার থেকে সংবাদদাতা জানান, শুক্রবার বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণকে সামনে রেখে সেন্টমার্টিনে বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমানে পর্যটন মৌসুম হওয়ার কারণে প্রতিদিন সেন্টমার্টিনে ৪ থেকে ৫ হাজার লোকের সমাগম হচ্ছে। কিন্তু বলয় সূর্যগ্রহণের সময় এ দ্বীপটিতে প্রায় ৩০ হাজার লোকের সমাগম হতে পারে। পর্যটন মৌসুমের পাশাপাশি সূর্যগ্রহণের দিন শুক্রবার হওয়ায় লোক সমাগম হবে আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন যত সংখ্যক লোক ভ্রমণ করছে তাদের ফেলা বর্জ্যের কারণে সাগরের পানি এমনিতেই দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার ওপর এর অধিক লোকের সমাগম হলে দ্বীপটির পরিবেশ তিগ্রসত্ম হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.