ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য

১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে আত্মাহুতি দিতে হয়েছে ত্রিশ লাখ মানুষকে। কয়েক লাখ নারীকে হারাতে হয়েছে সম্ভ্রম। আহত হয়েছেন অনেকে।
ঘরবাড়ি আর সম্পদ হারিয়েছেন কত মানুষ তার পরিসংখ্যান দেয়া দুষ্কর। মহান স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন বাজি রেখে সেদিন যুদ্ধ করেছিলেন, শহীদ হয়েছিলেন, অনেকে বিজয়ীর বেশে ফিরে এসেছিলেন স্বাধীন স্বদেশে; সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জাতি চিরকাল ঋণী থাকবে। যে মা-বোনেরা পাকিস্তানী জল্লাদ ও তাদের দোসরদের দ্বারা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন সেই বীরাঙ্গনাদের কাছেও জাতি চিরকৃতজ্ঞ। সবার জান-মাল-ইজ্জতের বিনিময়েই স্বাধীন হয়েছিল প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। আমরা হয়েছি এক স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক।
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এই মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতার পর যার যার ঠিকানায়, পুরনো কর্ম ও জীবিকায় ফিরে যান। অনেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হন; আবার কিছু মুক্তিযোদ্ধা নানা আর্থ-সামাজিক কারণে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে জীবন ধারণ করতে থাকেন। এই প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতাউত্তর বঙ্গবন্ধু সরকার অসচ্ছল, যুদ্ধাহত ও দুর্দশাগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সেই ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে বর্তমান সরকারও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা সরকারী কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি বর্তমান সরকারের বড়দাগের দুটি ইতিবাচক কর্মসূচী। এরই ধারাবাহিকতায় ইংরেজী নতুন বছরে সরকার ভূমিহীন ও অসচ্ছল প্রায় তিন হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে পাকা বাড়ি তৈরি করে দেয়ার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে, যাতে নির্যাতিতা নারীরা অর্থাৎ একাত্তরের বীরাঙ্গনারা অগ্রাধিকার পাবেন।
গত রোববার দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, প্রতিটি বাড়ির আয়তন হবে পাঁচ শ’ বর্গফুট। তাতে থাকবে দুটি কক্ষ, একটি টয়লেট ও একটি নলকূপ। শহীদ বা মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বিধবা স্ত্রীরাও এ সুবিধা পাবেন। যাদের জমি আছে তাদের জমির ওপরই সরকারী খরচে বাড়ি করে দেয়া হবে। যাদের জমি নেই, তাদের নামে সরকারী খাসজমি বরাদ্দ দেয়া হবে; আর খাসজমি না থাকলে সরকার জমি কিনে বাড়ি তৈরি করে দেবে। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে খরচ পড়বে আট লাখ টাকা। ইতোমধ্যে দুটি উজেলায় দুটি বাড়ি হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়।
ভূমিহীন দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। একজন মুক্তিযোদ্ধা ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে রিকসা চালাচ্ছেন, ঠেলাগাড়ি ঠেলছেন কিংবা ভিক্ষা করছেন অথবা অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন; কারও কারও মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই নেই, অন্যের বাড়িতে আশ্রিত এমন খবর মাঝে মাঝে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়, যা জাতির জন্য খুবই লজ্জার বিষয়। সরকারের বর্তমান কার্যক্রম দুর্দশাগ্রস্ত, দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নিশ্চিত আশ্রয়ের ব্যবস্থা যেমন করে দেবে তেমনি মুক্তিযুদ্ধের বীর সন্তানদের প্রতি সামান্য হলেও জাতি ঋণ পরিশোধের সুযোগ পাবে।

No comments

Powered by Blogger.