জমি নিয়ে জটিলতা

বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে জমি পাওয়া একটি বড় সমস্যা। অথচ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সরকারের জমি দরকার। কিন্তু প্রকল্পের উপযোগী জমি পাওয়া যাবে কোথা থেকে? দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা অনেক বেশি।
স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু দেশের আয়তন বাড়েনি। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে শহর ও গ্রামাঞ্চলে নতুন আবাসন কাঠামো গড়ে উঠেছে; সেই সঙ্গে গড়তে হয়েছে রাস্তাঘাট ও অনেক উন্নয়ন কাঠামো। এ কারণে ইতোমধ্যে দেশের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি ও বনভূমি কমেছে। এখন আমাদের এ ছোট্ট দেশটিতে যে জমি আছে তা পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা দরকার। বাংলাদেশে গ্রামীণ অর্থনীতি এখনও কৃষিভিত্তিক; বেশিরভাগ কৃষক ভূমিহীন। যে সব কৃষক ভূমির মালিক, তাদের কৃষি জমির পরিমাণ কমে এসেছে। বেশিরভাগের আছে সামান্য কয়েক বিঘা কৃষি জমি। তবু দেশে সরকারী উন্নয়ন প্রকল্প, শিল্পায়ন, আবাসনসহ বিভিন্ন কারণে জমির চাহিদা প্রতিবছর বাড়ছে। যেহেতু দেশের জমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম; তাই জমি নিয়ে জটিলতা বেড়েই চলেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে জমি নিয়ে জটিলতার কারণে সরকারের বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু দেশের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য জমির যে প্রয়োজন তা কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না। তাহলে জমি নিয়ে জটিলতার সমাধান হবে কিভাবে?
সরকার প্রথমেই জমির অপ্রতুলতার কথা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। উর্বর কৃষি জমির বাইরে যেসব পতিত জমি রয়েছে; মূলত সেখানেই উন্নয়নমূলক অবকাঠামো গড়ে উঠতে পারে। ইতোপূর্বে দু’একটি স্থানে স্থানীয় জনগণ জমি দেবে না’ দাবি তুলে কিছু বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রুখে দিয়েছে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পর জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ। কাগজে কলমে জমি অধিগ্রহণের কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ জমি বুঝে পাচ্ছে না। তাই জমি অধিগ্রহণের পুরনো আইন সংস্কার ও যুগোপযোগী হওয়া দরকার। প্রথমত কৃষক ও কৃষি উৎপাদনের স্বার্থের কথা ভাবতে হবে। ইতোমধ্যে কৃষি উৎপাদন বহু গুণ বেড়েছে; এছাড়া আমরা কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। বাংলাদেশকে নিজ অস্তিত্বের স্বার্থে এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে উর্বর কৃষি জমি বা সংরক্ষিত বনভূমি এড়িয়ে যাওয়া মঙ্গলজনক। এ ক্ষেত্রে পতিত জমিকে প্রাধান্য দিতে হবে। যদি একান্তই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কৃষি জমি অধিগ্রহণ করতে হয়; তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, জমির মালিক যেন ন্যায্য মূল্য পায়। প্রচলিত বাজারদরেই যেন সে জমি বিক্রি করতে পারে। এছাড়া ক্ষতিপূরণের অর্থপ্রাপ্তিও তাকে নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নিয়ম রাখা দরকার। মোটকথা সরকারের অধিগ্রহণের ফলে জমির মালিক যাতে এতটুকু বঞ্চিত না হয় তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এ ক্ষেত্রে জমির মূল্য বা ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখলে চলবে না। যেমন কিছুদিন আগে হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধনের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের ফ্ল্যাট দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিঃসন্দেহে একটি শুভ উদ্যোগ। সবারই প্রত্যাশা, আমলাতান্ত্রিক কারণে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার বাস্তবায়ন যেন এতটুকু বাধাগ্রস্ত না হয়।

No comments

Powered by Blogger.