আত্মরক্ষার দিকে ঝুঁকছেন দিল্লির নারীরা

দীর্ঘদিন থেকেই ভারতের 'ধর্ষণের রাজধানী' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে নয়াদিল্লি। শহরটিতে নারীদের নিরাপত্তাহীনতার কথা নতুন কিছু নয়। তবে গত ১৬ ডিসেম্বর বাসে গণধর্ষণের ঘটনা বিষয়টিকে আরো জোরালো করেছে।
নারীরা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে, ঝুঁকছেন আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণের দিকে।
২০১১ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মুম্বাইয়ের তুলনায় সে বছর দিল্লিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দ্বিগুণেরও বেশি। রাতে নারীদের চলাফেরা বা গণপরিবহনে ওঠার বিষয়টিতে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হতো আগে থেকেই। তবে প্রশাসনের তরফ থেকে এই 'বিশেষ ব্যবস্থা' যে কার্যকর কিছু ছিল না তাই প্রমাণ করে গেছে ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনাটি। সে কারণেই সরকারের দিকে না তাকিয়ে নারীরা এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আত্মরক্ষার প্রতি মনোযোগী হচ্ছেন। ভিড় বাড়ছে আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে।
দক্ষিণ দিল্লির এমনই একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইনভিকটাস সারভাইভল সায়েন্স ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট। এর প্রশিক্ষক অনুজ শর্মা বললেন, 'আত্মরক্ষা ও ব্যক্তিগত সুরক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী নারীদের সংখ্যা সম্প্রতি বেশ বেড়েছে। এ ঘটনা (গণধর্ষণ) মানুষকে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। আত্মরক্ষাকেই এখন তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।' স্মৃতি আইয়ার নামে ২৩ বছরের এক শিক্ষার্থী জানালেন, তিনি অনুজের কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বিষয়টি তাঁর অন্য বান্ধবীদেরও উৎসাহিত করছে।
তবে শুধু প্রশিক্ষণই নয়, গোলমরিচ গুঁড়ার স্প্রের মতো ছোট অথচ কার্যকর জিনিসপত্রেরও বেচাকেনা বেড়েছে। দোকানিরা জানান, এখন ব্যাপক চাহিদা এ স্প্রের। নতুন এক ধরনের জুতার কথাও বলা হচ্ছে। যার হিলে নানা প্রযুক্তি বসানো থাকবে। দু-তিনবার হিল টুকলেই উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ বের হতে শুরু করবে। জুতার সঙ্গে সংযোগ থাকবে মোবাইল ফোনের। আক্রান্ত হলেই বেছে রাখা নির্দিষ্ট কিছু নম্বরে খুদে বার্তা চলে যাবে। এ ছাড়াও থাকবে সাইরেন বাজার ব্যবস্থা, যা আক্রমণকারী চাইলেই বন্ধ করতে পারবেন না।
এসব ছাপিয়ে শহরে এখন সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে মানুষের উদ্বেগ। বিক্রয় সহকারী অসীমা সাগর (২২) বললেন, 'রাত ৯টা পর্যন্ত আমাদের কাজ চলে। আসা-যাওয়া করি তুলনামূলক নিরাপদ পাতাল রেলের মেয়েদের কম্পার্টমেন্টে। তাও আমার মায়ের উদ্বেগ কাটে না। ১০ মিনিট দেরি হলেও বার বার ফোন করে নিশ্চিত হতে চান, আমি ভালো আছি।' শুধু উদ্বেগ নয়, প্রভাব পড়েছে কাজেও। শিল্প গ্রুপ 'অ্যাসোচ্যাম'-এর গত শুক্রবার প্রকাশিত জরিপে দেখা যায়, কল সেন্টার ও তথ্যপ্রযুক্তি কম্পানিগুলোতে নারীদের উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। কেননা অনেকেই তাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিয়েছেন আবার অনেকে কাজ ছেড়ে চলে গেছেন। সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.